মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে জাপা!

মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে জাতীয় পার্টি। এজন্য দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে গোপনে প্রস্তুতিও চলছে। দল থেকে এ ব্যাপারে খোদ চেয়ারম্যানই নির্দেশ দিয়েছেন। দলের তৃণমূল নেতাদের মতামত যাচাইবাছাই করার জন্য দলের চেয়ারম্যানের এক উপদেষ্টা পাঁচটি জেলায় এরইমধ্যে সফরও সম্পন্ন করেছেন।

তবে এই সিদ্ধান্তকে পার্টির তৃণমূল নেতারা মানলেও এখনও কেন্দ্রীয় নেতারা তেমনটা সাড়া দিচ্ছেন না, এমন কথাই জানিয়েছে জাপার একাধিক সূত্র।

সূত্র আরও জানায়, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এখন এই মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য নতুন কোনো দল খুঁজছে। সে দলের সঙ্গে সখ্য গড়েই তারা আন্দোলনে নামবেন এবং মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য জোর চাপ প্রয়োগ করবেন। তবে শুধু চাপ প্রয়োগ করেই ক্ষান্ত হবে না জাপা। সঙ্গে মহাজোট সরকারের ভেতর থেকে বের হবে এবং একযোগে পার্টির সাংসদরা পদত্যাগও করবেন।

কিছুদিন থেকেই ২০ দলীয় জোট থেকে দাবি করা হচ্ছে, মধ্যবর্তী নির্বাচন দেয়ার জন্য। এর জন্য দলটি থেকে বিভিন্ন দলের সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপ করার ব্যাপারে বলা হচ্ছে বিভিন্ন জনসভা ও সেমিনারে।

আর এই দাবিকে কোনোভাবেই উড়িয়ে দিচ্ছেন না জাপার চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি মধ্যবর্তী নির্বাচনের পক্ষ নিয়েই নেতাকর্মীদের প্রস্তুতিও নিতে বলছেন। এরশাদ তার দলীয় কার্যালয়ে নিয়মিত বসছেন এবং বিভিন্ন জেলার নীরব হয়ে যাওয়া নেতাদের ডেকে কথাও বলছেন। দলকে চাঙ্গা করার জন্য দলের ত্যাগী নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে গোপন বৈঠকও করছেন বলে জানা গেছে।

দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, মধ্যবর্তী নির্বাচনের ব্যাপারে চেয়ারম্যানের স্ত্রী রওশন এরশাদ এখনও কোনো মতামত দেননি। তবে এরশাদ একাই মধ্যবর্তী নির্বাচনের পক্ষে কাজ করছেন। এজন্য তার বিশেষ উপদেষ্টা ববি হাজ্জাজকে কক্সবাজার, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, ফেনী, বরিশালসহ ৫টি জেলায় সাংগঠনিক সফরও করিয়েছেন।

সেসব জেলায় ববি হাজ্জাজকে সেই জেলার নেতারা সংবর্ধনাও দিয়েছেন। আর এসব বিষয় এরশাদ নিজেই করছেন। একদিকে তিনি পার্টির মহাসচিবকে বলছেন দল সাজাতে। অন্যদিকে তিনি আবার তার বিশেষ দূতকে সফর করিয়ে মধ্যবর্তী নির্বাচনের খবর পৌঁছে দেয়ার জন্য কাজও করিয়ে নিচ্ছেন।

জানা গেছে, সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদও খানিকটা তার সঙ্গে একমত হয়েছেন। এ ব্যাপারে এরশাদ দলের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কথাও বলছেন পর্যায়ক্রমে। তবে তার এই সিদ্ধান্তে কিছুটা বাধ সেধেছে দলের কিছু সরকারঘেঁষা এমপি ও মন্ত্রী। তারা কিছুতে্ই মধ্যবর্তী নির্বাচন ও সরকার থেকে বের হয়ে আসতে চান না। তাদের ভাষ্য হলো- এই মুহূর্তে সরকারের সঙ্গে থাকলে জাপা লাভবান হবে এবং আরও কিছুদিন বিরোধী দল হিসেবে থাকবে।

এ নিয়ে জাপায় এখন তিনটি গ্রুপ বিরাজ করছে। আর এই তিন গ্রুপকে ম্যানেজ করতেই বেশ হিমশিম খাচ্ছেন পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ।

জাপার একজন যুগ্ম মহাসচিব নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, দল থেকে মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হচ্ছে বিষয়টি সত্য। স্যার সেইভাবেই তৃণমূল নেতাদের নিদের্শও দিচ্ছেন। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় বৈঠকও করছেন। মধ্যবর্তী নির্বাচনকে টার্গেট করেই এগিয়ে যাচ্ছে জাপা।

এ সময় তিনি জানান, তাদের কাছে একটি তথ্য আছে, সরকার যে কোনো সময় একটি মধ্যবর্তী নির্বাচনে দেবে এবং সেই নির্বাচনে জামায়াতকে অংশ নেয়ার জন্য এখন থেকেই নানা প্রক্রিয়াও অব্যাহত আছে। অর্থ্যাৎ বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রেখেই মধ্যবর্তী নির্বাচন করার পরিকল্পনা রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের।

এই নেতা আরও জানান, দলের তৃণমূল নেতারা এরশাদের সঙ্গে মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য একমত হয়েছেন। কিন্তু এরশাদ এখনও তার স্ত্রী রওশন এরশাদকে বাগে আনতে পারেননি। তার সঙ্গে বেঁকে বসেছে সরকারি সুবিধাভোগী কিছু এমপি ও মন্ত্রী। তারা কোনোভাবেই মধ্যবর্তী নির্বাচনের পক্ষে নন।

তিনি জানান, মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য দল গোছাতে এবং দলের নেতাকর্মীদের মনকে চাঙ্গা করতেই চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নিয়মিত বনানীর পার্টি কার্যালয়ে বসছেন, সময় দিচ্ছেন। পার্টির গোস্যা করা অনেক নেতাদের ডেকে তাদের সাথে বৈঠকও করছেন।

জাপার একটি সূত্র জানায়, দলে পুরাতন ও বহিষ্কার নেতাদের ইদানিং দলে ফেরাতে সিদ্ধান্তও চলছে। এরই মধ্যে রাঙ্গাকে দলে ফেরানোর জন্য অনেকে গোস্যা হয়েছেন। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে এরশাদ দলকে শক্ত করে মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত নিচ্ছেন।

মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে জাপা কোনো কিছু ভাবছে কিনা এমন প্রশ্নে জাপার নীতিনির্ধারণী নেতাদের কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে কয়েকজন নেতার কথায় মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতির আভাস পাওয়া গেছে।

জাপার মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু মধ্যবর্তী নির্বাচনের বিষয়টিকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘আমরা মনে করি, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। যখন নির্বাচনের সময় হবে তখন আমরা নির্বাচন করবো।’



মন্তব্য চালু নেই