ভোলায় হানাদার মুক্ত দিবস আজ

আজ ১০ ডিসেম্বর ভোলা হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনী ভোলার ওয়াবদা কলোনি থেকে কয়েকটি ট্রাকযোগে বের হয়ে ভোলা খালের লঞ্চঘাটে পূর্বনির্ধারিত একটি কার্গো লঞ্চে ওঠে।

সাথে তাদের মেসিনগনসহ ভারি অস্ত্রসহ এবং তাদের দোসর শান্তি কমিটির নেতারা, রাজাকার, আলবদরসহ অন্যরা সবাই লঞ্চে ওঠে। যাওয়ার সময় ভারি ভারি মেসিনগান কার্গোলঞ্চের দুই দিকে তাক করে ভোলার খাল দিয়ে অগ্রসর হতে থাকে। মাঝে মাঝে ফায়ার করে।

এমনি করে তারা ভোলা খেয়াঘাট পাড় হয়ে বড় নদীতে গিয়ে পড়ে। তারপর তারা চাঁদপুরের কাছে পৌঁছলে মিত্রবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান কার্গোটিকে বোমা ছুড়ে তলিয়ে দেয়। হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগীরা অনেকেই নিহত হয়। কিন্তু নর পিচাস ভোলার শান্তি কমিটির নেতা সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়। জেলেরা তাকে নদী থেকে তুলে নিয়ে চাঁদপুর শহরে পৌছে দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শী সুত্র জানায়, ১৯৭১ সালের ১৭ মে বেলা ১২ টায় বরিশাল থেকে লঞ্চযোগে পাকহানাদার বাহিনী ভোলার খেয়াঘাটে এসে নামে। রাজাকার, আলবদর, শান্তি কমিটির নেতারা শহরের এলিটদের একটি গ্রুপ পাক বাহিনীকে স্বাগত জানিয়ে শহরে নিয়ে আসেছ। খেয়াঘাট থেকে সবাই পায়ে হেটে ভোলার যুগিরঘোল ওয়াপদা কলোনীতে গিয়ে পৌঁছে।

এ খবর ছড়িয়ে পড়তে না পড়তে শহরের প্রায় সব বাড়িঘর ফাঁকা হয়ে যায়। যার যার সুবিধা মত পরিবার পরিজন নিয়ে গ্রামাঞ্চলের দিকে চলে যায়। এদিকে পাকবাহিনী ট্রাক নিয়ে শহরের রাস্তায় রাস্তায় টহল দিতে থাকে। প্রতি রাতেই স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকবাহিনী বাড়ি বাড়ি গিয়ে লোকজন ধরে আনত। বিশেষ করে নারী ও যুবকরাই তাদের শিকারে পরিণত হত।

এদেরকে নানান অত্যাচার নির্যাতন করে মেরে ওয়াবদার পূর্ব দিকের দেয়ালের বাইরে পুতে ফেলত। এবং সন্ধ্যার পরে ট্রাকে করে লোকজনকে ভোলা খেয়াঘাট নিয়ে গুলি করে নদীতে ফেলে দিত। এমনিভাবে পাকাবাহিনীর অত্যাচার নির্যাতনে ভোলায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

ভোলায় সর্বপ্রথম বোরহানউদ্দিন দৌউলার তালুকদার বাড়িতে হানা দেয়। গোপন সংবাদ পেয়ে হাই কমান্ড সিদ্দিকের নেতৃত্বে একটি সুসংগঠিত মুক্তিবাহিনী আগেই ওঁত পেতে থাকে। পাক বাহিনী সেখানে পৌছামাত্র তিন দিক থেকে মুক্তিবাহিনী তাদের ঘিরে ফেলে। সম্মুখ যুদ্ধে প্রায় ৪০ জন পাকসেনা নিহত হয়।

বাকিরা পালিয়ে যাওয়ার সময় বোরহানউদ্দিন বাজার আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। এরপর বাংলাবাজার চাউলতাতলী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধ হয়। ওই যুদ্ধে অনেক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।তবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই পাক বাহিনী ভোলার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে। সর্বশেষ ১০ ডিসেম্বর পাক বাহিনী ভোলা থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।



মন্তব্য চালু নেই