ভোলায় পুলিশের অভিযানে শতাধিক অটোরিকশা ও মাহিন্দ্র আটক

গত ৭ অক্টোবর থেকে ভোলার পুলিশ প্রশাসন চেকপোস্ট বসিয়ে বিভিন্ন সড়কে যানবাহন আটক করে। এতে ভোলার বিভিন্ন সড়কে অটো রিকশা, মাহিন্দ্র আলফা ও ব্যাটারী চালিত রিকশা বন্ধ থাকে। যার ফলে ওই সড়কগুলোতে যানবাহন না থাকায় ভোলা-লক্ষ্মীপুর-বরিশাল সড়ক, ভোলা-চরফ্যাশন সড়ক, ভোলা- ভেদুরিয়া- ভেলুমিয়া সড়কের সাধারন যাত্রী ও স্কুল শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সড়কগুলোতে যানবাহন শূন্য থাকায় পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছে পথচারীরা। এছাড়াও সড়কগুলোতে যানবাহান বের করতে না পারায় ড্রাইভার ও মালিকদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে ভোলার পুলিশ প্রশাসন ভোলার ইলিশা সড়ক, ভোলা-চরফ্যাশন সড়ক ও ভোলা- ভেলুমিয়া সড়কে চেক পোস্ট বসিয়ে প্রায় ৩ শতাধিক অটোরিকশা, মাহিন্দ্র আলফা, ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা আটক করে। পরে আটককৃত যানবাহন মালিকদের কাছে কিছু মুচলেকা নিয়ে ওইসব সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখার শর্তে তা ছেড়ে দেওয়া হয়।

ওইসব সড়কে যানবাহন বন্ধ থাকার ফলে সাধারন পথচারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ভোলার ইলিশা সড়ক দিয়ে বরিশাল-লক্ষ্মীপুর হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী যাতায়াত করে। তারা রাস্তায় যানবাহন না থাকার ফলে ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হচ্ছে যাত্রীরা। অনেকে গাড়ি না পেয়ে পায়ে হেটে গন্তব্যে পৌঁছেছেন।

একই চিত্র দেখা দিয়েছে ভোলার ভেদুরিয়া- ভেলুমিয়া সড়ক, ভোলা-চরফ্যাশন সড়কেও। ওই সড়কে পাশে যানবাহনের জন্য ধারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে অনেক যাত্রীদেরকে। তারা গন্তব্যে পৌঁছার জন্য যানবাহনের অপেক্ষায় ঘন্টারপর ঘন্টা দাঁড়িয়ে রয়েছেন বলেও জানান।

বরিশাল ও লক্ষ্মীপুর হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত যাত্রীদের সাথে আলাপ করলে তারা বলেন, আমরা বহু দূর থেকে ভোলায় এসেছি। লঞ্চ ও ফেরি থেকে ঘাটে নেমে বাড়ি যাওয়ার জন্য রাস্তায় এসে দেখি রাস্তা ফাঁকা। রাস্তায় অটোরিকশা ও মাহিন্দ্র আলফা না থাকায় আমাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কিছু পায়ে চালিত বাংলা রিকশা পেলেও তারা মোটা অংকের ভাড়া দাবী করে। যার ফলে বাধ্য হয়ে পায়ে হেটে গন্তব্যে যাচ্ছি। যদি এই রুটে যানবাহনগুলো থাকতো তাহলে সাধারন পথ যাত্রীদের এই দুর্ভোগ পোহাতে হতো না। এসব রুটে কিছু বাস চলাচল করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম।

এছাড়াও তারা কিছু কিছু স্থানে গাড়ি না থামিয়ে চলে যায়। আমাদেরকে ঘন্টারপর ঘন্টা যানবাহনের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জনগনের সুবিধার্থে সড়কগুলোতে এসব যান চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এটাই আমাদের দাবী।

একাধীক অটোরিকশা ও মাহিন্দ্র ড্রাইভার বলেন, সরকার গত ৭ আগস্ট দেশের ২২টি মহাসড়কে অটোরিকশা, সিএনজি, মাহিন্দ্র আলফা, টেম্পু নিষিদ্ধ করে। ওই ২২টি মহাসড়কের মধ্যে ভোলা নেই। তারপরও ভোলার পুলিশ প্রশাসন গত কয়েকদিন যাবৎ চেকপোস্ট বসিয়ে আমাদের যানবাহনগুলো আটক এবং আমাদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানী করছে। ভোলায় কোন শিল্প কারখানা না থাকায় আমরা জীবিকার তাগিদে এই পেশা বেঁচে নিয়েছি। পুলিশের আটকের ভয়ে এখন আমরা রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের হতে পারছি না। আমাদের এই আয়ের উৎস বন্ধ থাকার ফলে ছেলে মেয়েদের নিয়ে অনেক কষ্টে দিন পার করছি।

একাধিক অটোরিকশা ও মাহিন্দ্র মালিকরা বলেন, আমরা বিভিন্ন এনজিও ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এসব যানবাহন ক্রয় করে রাস্তায় নামিয়েছি। পুলিশের অভিযানের ফলে আমাদের যানবাহনগুলো এখন বন্ধ আছে। আমরা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে খুবই চিন্তায় পড়েছি। এছাড়াও আমাদের সংসার চালাতে খুবই হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমাদের পেটে লাথি না মারার জন্য আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করছি।

অটো টেম্পু মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক মাইনুল ইসলাম শামীম বলেন, প্রশাসন গত কয়েকদিন অভিযান চালিয়ে ভোলার বিভিন্ন সড়ক থেকে আমাদের প্রায় ৩ শতাধিক যানবাহন আটক করেছে। দেশের ২২টি মহাসড়কে এসব যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও এর মধ্যে ভোলার কোন মহাসড়ক নেই। তারা ভোলার ওইসব সড়কে যানবাহন চলা নিষিদ্ধ দেখিয়ে এ অভিযান পরিচালনা করেন। আমাদের আটককৃত যানবাহনগুলো মুচলেকার মাধ্যমে ছাড়িয়ে আনা হয়।

এ ব্যাপারে ওসি (ভারপ্রাপ্ত) অসীম কুমাড় সিকদার বলেন, হাইকোর্ট ও সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী ভোলার এসব সড়কগুলোতে আমাদের এ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এসব সড়কের সাথে দেশের এক জেলার সাথে অন্য জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকার ফলে এসব অবৈধ যানবাহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

যাতে এই সড়কগুলোতে অবৈধ এসব যানবাহন চলাচল করতে না পরে সেজন্য আমরা চেক পোস্ট বসিয়ে তাদেরকে আটক করছি। এসব যান শুধু পৌর এলাকায় চলাচল করতে পারবে। ভোলা-লক্ষ্মীপুর-বরিশাল সড়ক, ভোলা-চরফ্যাশন সড়ক ও ভোলা- ভেদুরিয়া সড়কে চলাচল করতে পারবে না। যেসব যানবাহন এই সড়কে পাওয়া যাবে তাদেরকেই আটক করা হবে।



মন্তব্য চালু নেই