প্রশাসনের ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নেই কোন নজরদারী

ভোলায় ইটের ভাটায় কয়লার পরিবর্তে পুড়ছে কাঠ ॥ উজার হচ্ছে ম্যানগ্রোভ বন

ভোলার বিভিন্ন উপজেলার ইটের ভাটাগুলোতে অবাধে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। পরিবেশ আইন অমান্য করে অনুমোদনহীন এই সব ইটভাটাগুলোতে কয়লার পরিবর্তে তারা কাঠ পোড়াচ্ছে। ফলে উজাড় হচ্ছে ভোলার বনাঞ্চল। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ঝড় জলোচ্ছাস প্রতিরোধক সাগর উপকূলের ম্যানগ্রোভ বনের সবুজ বেষ্টনী। নির্বিঘ্নে এইসব ইটভাটাগুলোতে অবৈধ ভাবে ইট পোড়ানো হলেও প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নেই কোন নজরদারী। তবে ইটভাটার মালিকরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারছেনা স্থানীয় প্রশাসন। তবে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাঠ পোড়ানোর জন্য প্রশাসনের সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করছে। ভোলার বিভিন্ন ইটভাটা ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে।

তথ্য অনুযায়ী ভোলার ৭টি উপজেলায় বেসরকারিভাবে হিসাবে ইটভাটার সংখ্যা ৭৫টি হলেও সরকারী ভাবে ৬৯টি। এর মধ্যে ৬১টির লাইসেন্স করা হলেও তার মেয়াদ বহু আগে শেষ হয়ে গেছে।

সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ভোলার দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন, মনপুরায় অর্ধ শতাধিক ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে। ভোলা পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়া যত্রতত্র ইটভাটা গড়ে উঠছে। যার ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের মধ্যে পরবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভাটার মালিকরা স্বল্প খরচে অধিক লাভের আশায় ইটের ভাটায় ইট পোড়াতে অধিক লাভের আশায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ ব্যবহার করছে। ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়ায় ইউনিয়নের বাঘমারা এলাকার আমির হোসেন মালিকানাধীন লাইসেন্সবিহীন ‘মায়ের দোয়া ব্রিকস’ কোন প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কয়লার পরিবর্তে কাঠ পুড়িয়ে চলছে এ ইটভাটার কাজ। ইট পোড়ানোর জন্য পুরো ভাটার চার পাশে জুড়ে রয়েছে কয়েক শত মন জ্বালানী কাঠ। আর এই কাঠ দিয়ে প্রতিদিনই ইট পোড়ানোর কথা স্বীকার করলেন শ্রমিকরা। এই কাঠ পোড়ানোর দৃশ্য সাধারন মানুষের চোখে পড়লেও প্রশাসনের চোখে পড়ছে না বলে অভিযোগ উঠছে সচেতন মহলে।

এ ব্যাপারে মায়ের দোয়া ব্রিকসের মালিক আমির হোসেনকে জিজ্ঞাস করলে তিনি কাঠ পোড়ানোর কথা স্বীকার করে বলেন, কয়লার সংকট, আবার যা পাওয়া যায় তার বেশি। তার জন্য কাঠ দিয়েই ইট পোড়াচ্ছি। প্রশাসনের কাছে কাঠ পোড়ানোর অনুমোদন চাইলে তারা অনুমোদন দেয়নি।

এদিকে একই অবস্থা দৌলতখান উপজেলার চরপাতা এলাকার মোঃ আনোয়ার হোসেন জাহাঙ্গীর এর মালিকানাধীন দৌলতখান ব্রিকসের। এই ইটভাটায় ইতিমধ্যে ইট তৈরি করার কাজ শেষ। এখন ইট পোড়ানোর জন্য কয়েক হাজার মন কাঠ স্তুপ করে চলছে ইটপোড়ানোর কাজ। এই ইটভাটার নেই কোন বৈধ কাগজপত্র। তারপরও প্রভাবশালী মহলের দাপট দেখিয়ে চলছে ইট পোড়ানো কাজ। ইটভাটার জন্য কয়েক একর আবাদী জমি নষ্ট করে চলছে ইট তৈরির কাজ। শুধু তাই নয় ড্রাম দিয়ে চিমনী বানিয়ে ইট পুড়িয়ে পরিবেশের বিপর্যয় সৃষ্টি করছে।

এ ব্যাপারে দৌলতখান ব্রিকসের মালিকপক্ষের লোক রিপন খান বলেন, আমাদের এই ইটভাটা অবৈধ এটা ঠিক আছে। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এখানে ডিসি অফিস থেকে লোক এসে দেখে গেছে। আমাদের ইটভাটার কোন কাগজপত্র নেই এটা সত্য। তবে আমরা ইটভাটা অনুমোদনের জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছি। তিনি বলেন, কয়লার সংকটের কারনে আমরা কাঠ ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছি। শুধু আমরাই নই, ভোলাতে আরও অনেক ইটভাটায় কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে।

বিশিষ্ট কলামিস্ট মহিউদ্দিন মাসউদ জনি বলেন, ভোলায় পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়া যত্রতত্রই আবাদী জমি, আবাসিক এলাকা ও বনাঞ্চল উজাড় করে গড়ে উঠছে অবৈধ ইটভাটা। এর ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছে ইটভাটা সংলগ্ন এলাকার মানুষ। ধ্বংস হচ্ছে উপকূলের ম্যানগ্রোভ বনের সবুজ বেষ্টুনী। তিনি এসব অবৈধ ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবী জানান।

ভোলা সুশিল সমাজের প্রতিনিধি মোবাশ্বের উল্ল্যাহ চৌধুরী জানান, এই অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধের জন্য প্রশাসনের কাছে একাধীকবার স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধন করেছি। প্রশাসন এই ব্যাপারে নিরব ভূমিকা পালন করে আসছে। নাম মাত্র মোবাইল কোর্ট পরিচালনা মাধ্যমেই দায় সারছে প্রশাসন। তিনি বলেন, প্রশাসন এসমস্ত অবৈধ ইটভাটা থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করার কথা বলে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করছে। এর ফলে অবৈধ ইটভাটাগুলোতে পুড়ছে কাঠ, ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ। তিনি এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

এ ব্যাপারে ভোলা জেলা প্রশাসক মোঃ সেলিম রেজা বলেন, ইতিমধ্যে ইটভাটা গুলোতে কাঠ না পুড়িয়ে কয়লা ব্যবহারের জন্য আমরা কয়েকবার ইটভাটার মালিকদের সাথে মিটিং করেছি। এছাড়াও কেউ যদি ইট পোড়ানোর কাজে কাঠ ব্যবহার করলে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



মন্তব্য চালু নেই