জোটছেনা ভাগ্যে সরকারী কোন সাহায্য
ভোলার মেঘনার ভাঙ্গনে সহায় সম্বল হারানো মানুষের নিরব কান্না
নদী ভাঙ্গনের শিকার দক্ষিন রাজাপুর গ্রামের রুনা (৩৫)। স্বামী আমির হোসেন পেশায় জেলে। ৩ সন্তান নিয়ে অভাবের সংসার তার। এক সপ্তাহ আগে ঘরভীটা ও ৫ গন্ডা জমি হারিয়েছেন তিনি। সব হারিয়ে তিনি এখন কোথায় যাবেন আর আশ্রয় নিবেন সে চিন্তায় অস্থির।গৃহবধু রুনা জানান, সহায় সম্বল বলতে ছিলো ভীটা আর জমিটুকু তাও এখন নদীতে চলে গেছে, এখন বাঁধের উপর ঝুপড়ি ঘরে খোলা আকাশের আশ্রয় নিয়েছি।
ভীটাহারা জেলে বধু মিলন। স্বামী ও ২ সন্তানকে নিয়ে বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছেন। নদীতে ১২ গন্ডা জমি চলে গেছে, ছিলো বসত ঘর তাও নদী গর্ভে।মিলন জানান, ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ হলেও সরকার থেকে কোন সাহায্য-সহযোগীতা পাইনি।রুনা ও মিলনের মত শত শত পরিবার ভাঙ্গনের কারনে দিশহারা। কোথায় আশ্রয় নিবে তা বলতে পারছেনা। জীবিকার তাগিদে এসব পরিবারগুলো ঘুরে দাড়ানো চেষ্টা করছেন।
ভোলা সদরের ইলিশা ইউনিয়নে তীব্র ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙ্গনে ঠিকানা হারিয়ে আশ্রয়হারা মানুষ চরম সংকটের মধ্যে রয়েছেন। সহায় সম্বল হারিয়ে কিছুতেই ঘুরে দাড়াতে পারছেন না তারা। বাধের ভেতর ও বাইরে আশ্রিত এলাকায় মানবিক বিপর্যয় চলছে।
সূত্র জানান, ভাঙ্গন কবলিতদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নদী ভাঙ্গনে বার বার ক্ষতিগ্রস্থ হলেও তেমন সাহায্য সহযোগীতা পাচ্ছেন না। নদী ভাঙ্গন আর জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবাগুলো ঠিকমত রান্না-বান্নাও করতে পারছেন না।জানা যায়, পুরাতন ফেরীঘাট এলাকা থেকে মুরাদ শফিউল্লা পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বড় বড় ফাটল ধরেছে।
ওই সব ফাটল অংশ দিয়ে ধ্বসে পড়ছে বড় বড় বাধের অংশ। ভয়াল মেঘনার ভাঙ্গনে দিশেহারা মানুষ ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। গাছ পালা বিক্রি করছেন পানি দামে। কারো আশ্রয় খোলা আকাশের নিচে, কারো আশ্রয় বাধের উপর।দক্ষিন রাজাপুর গ্রামের জাহাঙ্গির ফরাজি, ইব্রাহিম, মমতাজ বেগম, খোরশেদ আলম সর্দার ও মনসুরা বিবিসহ অন্যরা জানান, নদী ভাঙ্গনে বার বার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন তারা।
একপাশ থেকে অন্য পাশে গেলেও ফের ভাঙ্গনের মুখে পড়েছেন। কিন্তু কোন সহযোগীতা পাইনি।চডার মাথা এলাকার গৃহবধু সাহেরা জানান, নদীতে ঘর ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে। তাই ঘর-ভীটা ও জমি ফেলে চলে যাচ্ছি। কিন্তু আশ্রয় নেবার কোন স্থান নেই।
একই এলাকার নিরুতাজ বলেন, ৫ গন্ডা জমি ছিলো, কিন্তু এখন তা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ২ ছেলে ও ২ মেয়েকে নিয়ে কোথায় যাবো তার কোন কুল-কুনারা পাচ্ছিনা।সুলতান আহমেদ বলেন, ২০ দিনে ৭ ভাঙ্গা দিয়েছে, দোকান ঘর বার বার সরিয়ে নিচ্ছি।
আবারো ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে। আমরা কোন সাহায্য-সহযোগীতা পাইনি।ঘরভীটা হারিয়ে পথে বসেছেন কালুপুর ও দক্ষিন রাজপুর গ্রামের মামুন, মাকসুদ, নুরুল ইসলাম, রাকিব, রশিদ, মুসা, লিটন, মানিক বেপারী, নুরুল ইসলাম, আমেনা, সাহিনা, শাহিনুর, সকিনা, ফাতেমা ও রতনের মত অসংখ্য পরিবার। সহায় সম্বল হারিয়ে যেন তারা ঠিকানাহারা।
পরিবার-পরিজন আর সন্তান নিয়ে তাদের আশ্রয় কোথায় এমন চিন্তার ছাপ তাদের। ক্ষতিগ্রস্থ হলেও তাদের ভাগ্যে জুটেনি কোন সাহায্য। দুই ইউনিয়নের ৬০০ পরিবার টাকা পেলেও তারা টাকা পাননি বলে অভিযোগ তাদের।
স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন জানান, ইলিশা ও রাজাপুরের শতাধিক পরিবার চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। স্থানীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যান তাদের কোন খোজ খবর নেয়না। এ জন্য তারা সাহায্য থেকে বঞ্চিত।
মন্তব্য চালু নেই