ভোলার চরফ্যাশনে উপ-মন্ত্রীর ডিও লেটার জাল করে উপবৃত্তির টাকা লোপাটের অভিযোগ
ভোলার চরফ্যাশনে নাম সর্বস্ব ৪১টি এবতেদায়ী মাদ্রাসার কয়েকশ’ শিক্ষার্থীর স্ব-নামে বে-নামে বরাদ্দকৃত উপবৃত্তির কয়েক লাখ টাকা আত্মসাত করা ও উপ-মন্ত্রীর ডিও লেটার নকল করে ভূয়া-ভুতুরে এবতেদায়ী মাদ্রাসার বিপরীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এসব বরাদ্দ আনার পর এবতেদায়ী মাদ্রাসা সমিতির নেতারা শিশুদের সব টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগে জানাযায়, অগ্রণী ব্যাংকের চরফ্যাশন ও শশীভূষণ শাখা ব্যবস্থাপকদের ম্যানেজ করে শিক্ষক নেতা মাওলানা রুহুল আমিন সহ কয়েক জন মিলে টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর চরফ্যাশন শিক্ষা কর্মকর্তা এবং দুই ব্যাংকের ম্যানেজারের মধ্যে এসব টাকা ভাগ বাটোয়ারা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে সম্প্রতি দুই দফা তদন্ত শেষে অস্তিত্বহীন ১৮টি মাদ্রাসার বিপরীতে বরাদ্দ স্থগিত করা হলেও রহস্যজনক কারণে লোপাট টাকা ফেরৎ কিংবা এই টাকা আত্মসাতের দায়ে কাউকে জবাবদিহির আওতায় আনা হয়নি।
ফলে উপজেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে ওই তদন্ত কর্মকর্তাদেরও ম্যানেজ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অনসন্ধানে জানা যায়, ২০১৪ সনে কাগজে কলমে চরফ্যাশনে উপবৃত্তির তালিকাভূক্ত এবতেদায়ী মাদ্রাসার সংখ্যা ছিল ৪১টি। ২০১৩ সনে এ সংখ্যা ছিল ২৬টি। গত বছরের শুরুতে উপ-মন্ত্রীর ডিও লেটার জাল করে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে অনৈতিক প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে নুতন ১৫টি মাদ্রাসার নামে উপবৃত্তির বরাদ্দ অনুমোদন আনা হয়।
এই বরাদ্দ অনুমোদনের পর গত বছরের জানুয়ারী থেকে জুনের দুই কিস্তিতে উপজেলা সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বরাদ্দ থেকে কর্তন করে ভূয়া-ভুতুরে এবতেদায়ী মাদ্রাসাগুলোকে উপবৃত্তি বরাদ্দ দিয়ে লুটপাট করা হয়। এ নিয়ে দুই দফায় শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (এড) মাহফুজুর রহমান এবং সহকারী পরিচালক আনোয়ার পারভেজ’র নেতৃত্বে দুই সদস্যের প্রতিনিধি দল সরেজমিনে তদন্ত করেন। তদন্তে এবতেদায়ী মাদ্রাসার নামে শ’শ’ শিশুর ভূয়া-ভুতুড়ে নাম ব্যবহার করে উপবৃত্তির লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ধরা পরে। যার প্রেক্ষিতে এবতেদায়ী প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ন সচিব) ইরতিজা আহমেদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত পত্রে চরফ্যাশনের ভূয়া-ভুতুড়ে ১৮টি এবতেদায়ী মাদ্রাসার উপবৃত্তির বরাদ্দ স্থগিত করেন। যদিও অভিযোগ আছে, চরফ্যাশনে স্বতন্ত্র কোন এবতেদায়ী মাদ্রাসা বাস্তবে চালু নেই।
এসব মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীও নেই, নেই কর্মরত কোন শিক্ষক। ২/১টি মাদ্রাসা ছাড়া বাকী মাদ্রাসাগুলোর কাগজে-কলমে অস্তিত্ব থাকলেও বাস্তবে ঘর দরজার কোন চিহ্নও নেই। তারপরও মাদ্রাসাগুলোতে বরাদ্দ হয়েছে উপবৃত্তির লাখ লাখ টাকা। ভূয়া-ভুতুড়ে সুবিধাভোগী দেখিয়ে শিক্ষা অফিস ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে শিক্ষক নেতারা ব্যাংক থেকে সমূদয় টাকা পকেটস্থ করেছেন। সংবাদপত্রে ৪১টি এবতেদায়ী মাদ্রাসার নামে উপবৃত্তির টাকা বরাদ্দ দিয়ে লুটপাটের খবর প্রকাশের পর হাক-ডাক দিয়ে তদন্ত হয়েছে। তদন্তের পর ন্সÍত্বহীন ১৮টি মাদ্রাসার বরাদ্দ স্থগিত করা হলেও ইতিপূর্বে এসব মাদ্রাসার নামে বরাদ্দকৃত উপবৃত্তির লাখ লাখ টাকা কোথায় গেলো সেই প্রশ্নের রকান সুরাহা করা হয়নি।
ফলে বিষয়টি অধিকতর তদন্তের দাবী উঠেছে। অভিযোগ প্রসঙ্গে চরফ্যাশন ও শশীভূষণ অগ্রণী ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকরা বরাবরের মতোই বলেছেন, নির্ধারিত কেন্দ্রে গিয়ে তালিকাভূক্ত শিশুদের হাতেই উপবৃত্তির টাকা তুলে দেয়া হচ্ছে। প্রতিষ্ঠান অস্তিত্বহীন কিংবা শিক্ষার্থীরা ভূয়া-ভূতুড়ে হলে এর দায় দায়িত্ব ব্যাংকের উপর বর্তায় না।
অভিযোগ প্রসংঙ্গে এবতেদায়ী শিক্ষক নেতা রুহল আমিন এব্যাপারে চরফ্যাশনের সাংবাদিক আদিত্য জাহিদ ও ভোলা সদরের সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা সংবাদ প্রকাশ করলে উপবৃত্তি বন্ধ হয়ে যাবে । সংবাদ প্রকাশ করলে আপনাদের লাভ কি? ইতিপূর্বে আপনাদের সংবাদ প্রকাশের কারনে ১৮টি প্রতিষ্ঠানের উপবৃত্তি বন্ধ হয়ে গেছে। এই বলে তিনি ফোন কেটে দেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ জালাল আহমেদ বলেছেন,তদন্তের মাধ্যমে চরফ্যাশন ব্যাংকের আওতায় ১০টি এবং শশীভূষণ ব্যাংকের আওতায় ৮টি মোট ১৮টি মাদ্রাসার বরাদ্দ স্থগিত করা হয়েছে। অভিযোগ পেলে আরো ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য চালু নেই