ভেনিস উৎসবে ইউক্রেন যুদ্ধের বিষাদ…
চলতি মাসের ২ সেপ্টেম্বর পর্দা উঠেছে বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো ও জৌলুসময় ফিল্ম ফেস্টিভাল ‘ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০১৫’-এর ৭২ তম আসর৷বিশ্বের নানা দেশের নানান বৈচিত্রময় ছবির প্রদর্শনে সরগরম দ্বীপ শহর ভেনিস। আর এই উৎসবে প্রদর্শীত হল রাশিয়ান বংশদ্ভুত নির্মাতা অ্যাবগেনি অ্যাফিনেভস্কির দৃশ্য ধারণে ২০১৩-২০১৪ সালের ইউক্রেনযুদ্ধের জলজ্যান্ত দৃশ্য ধারণগুলো নিয়ে ডকুফিল্ম ‘উইন্টার অফ ফায়ার’।
এরইমধ্যে এবারের আসরে নেটফ্লিক্স ডকুমেন্টারি চার্টে ছবিটি জায়গা করে নিয়েছে। প্রদর্শনী ছাড়াও মূল প্রতিযোগিতায় লড়বে অ্যাফিনেভস্কির ছবিটি।
ভয়ালযুদ্ধে কিভাবে দৃশ্যধারণ করেছেন অ্যাফিনেভস্কি, সেইসব অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন ভেনিস ফেস্টিভালের মঞ্চে এসে। ২০১৩ সালের শেষ দিকে যখন নির্মাতা অ্যাবগেনি অ্যাফিনেভস্কি ইউক্রেন যাত্রা করেছিল, তখন সে জানতোই না যে বিপ্লব দানা বেধে উঠতে পারে। এরপর যখন ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধ বেধে গেল, তখন রাশিয়ার এই নির্মাতা তার ছবির মধ্যদিয়েই ইউরোপিয় ইউনিয়নের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে লাগলো। কিন্তু তিনমাস পেরিয়ে গেলে সম্পূর্ণ একা হয়ে যান
ছবিটি নেটফ্লিক্স-এর প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে। ভেনিস থেকে আরো একটি ছবি প্রডিউস করা হয়েছে, আফ্রিকা ওয়ার ড্রামাটিক্যাল ওই ছবিটির নাম ‘বিস্ট অব নো নেশন’।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যখন ইউক্রেনের ভয়াবহ যুদ্ধের বিষয়গুলো দৃশ্যবন্দি করছিলেন, তখন কি আপনার ভয় হয়নি, এমন প্রশ্নে আফিনেভস্কি বলেন, আমি একটুও ভীত ছিলাম না। কারণ, যখন আপনি জানবেন যে আপনি একা, তখন আর হৃদয়ে একটু ভয় থাকে না। ভয় পালিয়ে যায়।
এছাড়াও সেই সময়টা সম্পর্কে বর্ণনা দিতে গিয়ে নির্মাতা বলেন, যখন আপনার চোখের সামনে যুথবদ্ধ হওয়ার লক্ষ নিয়ে একদল মানুষকে আপনার চারপাশে দেখবেন, যারা সামাজিকভাবে ভিন্ন, ভিন্ন তাদের ধর্মবিশ্বাস, ভিন্নতা জাতীয়তা নিয়ে যুদ্ধ করছে, তখন এই একতাবদ্ধ হওয়ার দৃশ্য চোখের সামনে দেখতে পেয়ে ভয় পেলে কি চলে?
দৃশ্য ধারণের মধ্য অনেক ফুটেজ ছিল মারাত্ম ভায়োলেন্সময়, যেগুলো ডকুফিল্মটি রাখা হয়নি, ফাইনাল কাটে সে ভয়াবহ দৃশ্যগুলো বাদ দেয়া হয়েছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা চোখের সামনে দেখেছি নির্মমভাবে অত্যাচারিত মানুষ, প্রচুর লাশ পড়ে থাকতে দেখেছি মাটিতে, ছোট্ট শিশুদেরকেও ভয়ানকভাবে শ্যুট করতে দেখেছি; এইসব দৃশ্য ছবিতে রাখবো কি না শেষ মিনিট পর্যন্ত ভেবেছি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত মানুষকে এগুলো না দেখেোরই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ফলে ছবিতে এইসব ভয়াবহ দৃশ্য রাখা হয়নি।
আসছে অক্টোবরে ‘উইন্টার অব ফায়ার’ ডকুফিল্মটি যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে।
ভেনিস আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভাল পৃথিবীর সবচেয় প্রাচীনতম চলচ্চিত্র উৎসব। সবচেয়ে ভালো ছবি নিয়ে নির্মাতা আর মান সম্মত অভিনয়ের তকমা নিয়ে ইতালির ভেনিস শহরে এসে উপস্থিত হন বিশ্বের নামীদামী সিনেমা কলাকূশলীরা। প্রত্যেকেই তাদের সেরাটা নিয়েই এই গৌরবময় উৎসবে উপস্থিত থাকেন। এবারো তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। বিশ্বের অন্তত সেরা ৫৫টি ছবি ভেনিসের এই আসরে প্রদর্শন করা হবে মাত্র এগারো দিনে।
উল্লেখ্য, ১৯৩২ সালে কাউন্ট জুজেপ্পে ভল্পি-এর হাত ধরে প্রাচীন ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের যাত্রা, সেই থেকে প্রতি বছর আগস্ট এর শেষে অথবা সেপ্টেম্বর এর শুরুতে ভেনিসের লিডো দ্বীপে এই উৎসব উদযাপিত হয়ে আসছে। ‘লাঙ্গুমারে মারকুনি’ অঞ্চলের ঐতিহাসিক ‘পেলাজ্জু ডেল সিনেমা’ থিয়েটারে বাছাই প্রদর্শনী সংঘটিত হয়। এটি বিশ্বের সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ চলচিত্র উৎসবগুলোর মধ্যে একটি। এটি ভেনিস বিয়েনিয়াল এর একটি অংশ।
উৎসবের প্রধান পুরষ্কারগুলোর মধ্যে আছে ‘গোল্ডেন লায়ন’ যা প্রদর্শনীর সবচেয়ে ভালো চলচ্চিত্রকে দেয়া হয় এবং ‘ভলপি কাপ’ যা সবচেয়ে ভালো অভিনেতা এবং অভিনেত্রী কে দেয়া হয়। ২০০২ সালে স্রোতের বিপরীতে চলা সবচেয়ে ভালো চলচ্চিত্রের জন্য ‘স্যান ম্যাক্রো অ্যাওয়ার্ড’ নামে অপর একটি পুরস্কার প্রদান চালু হয়।
মন্তব্য চালু নেই