চট্টগ্রামে বিভাগীয় পর্যায়ে খাদ্য নিরাপত্তায় অবদান রাখা সফল নারী কৃষক সম্মাননা প্রদান

ভূমি ও ঋনে নারী কৃষকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকার সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে : ভূমি প্রতিমন্ত্রী

বর্তমান সরকার জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি নারী ও কৃষি বান্ধব সরকার। বর্তমান সরকার প্রধান শুধু নারী নয়, তিনি মহান জাতীয় সংসদের স্পীকার হিসাবে একজন নারীকে দায়িত্ব প্রদান ছাড়াও সরকারও প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় নারীকে বসিয়েছেন এবং তারা সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। নারীর অবদান ছাড়াও পৃথিবীর সবকিছুই অচল ও অসম্ভব। তাই নারীকে বাদ দিয়ে যে কোন উন্নয়ন পরিকল্পনা সফল সম্ভব নয়। তাই নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন জোরদারে ভুমি ও ঋনে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার নারী কৃষানী কার্ড প্রবর্তন করেছে। একই সাথে নারী কৃষকরা যাতে বিনা জামানতে কৃষি খাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋন নিতে পারে এবং সরকারী খাস জমি বিতরনে নারীরা যাতে অগ্রাধিকার পায় সে জন্য সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিবে।

বৃহস্পতিবার ১৫ জানুয়ারি ২০১৫ নগরীল সার্কিট হাউজ সম্মেলন কক্ষে আইএসডিই বাংলাদেশ, ক্যাব চট্টগ্রাম যুক্তরাজ্য ভিত্তিক আর্ন্তজাতিক উন্নয়ন সংস্থা অক্সফাম এর সহযোগিতায় চট্টগ্রামে “বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তায় নারীদের অবদানের স্বীকৃতির জন্য প্রচারাভিযান ২০১৪-১৫” শীর্ষক প্রচারভিযান এর আওতায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ে খাদ্য নিরাপত্তায় অবদান রাখা সফল নারী কৃষকদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে ভুমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জমান চৌধুরী জাবেদ এমপি উপরোক্ত মন্তব্য করেন।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবুল হোসেন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় ভুমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জমান চৌধুরী জাবেদ এমপি, বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম ভেটেনারী ও অ্যানিমেল সাইন্স ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ডঃ গৌতম বৌদ্ধ দাস, রূপালী ব্যাংকের পরিচালক ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান, প্রাক্তন সাংসদ মাজহারুল হক শাহ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মুজিবর রহমান, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রিয় কমান্ড কাউনিন্সলের ভাইস চেয়ারম্যান মর্তুজা হোসেন, জনতা ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোস্তফা আনোয়ার। আইএসডিই বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক এস এম নাজের হোসাইনের সুচনা বক্তব্যে আলোচনায় অংশনেন দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ এর নগর সম্পাদক এম নাসিরুল হক, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট রেহেনা আকতার, রাউজান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফউজিয়া আকতার, চট্টগ্রাম সিটিকর্পোরেশনের কাউন্সিলর লুৎফুন্নেসা দোভাস, বাশখালী উপজেলা সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ইয়ামুন্নাহার, ক্যাব বোয়ালখালীর সভাপতি আবদুল মান্নান, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রিয় সহ-সভপাতি আবদুল ওয়াহাব চৌধুরী, নারী নেত্রী আবিদা আজাদ, জেসমিন পারভীন জেসি, সায়মা হক, জান্নাতুল ফেরদৌস ও যুব নেতা কে এন এম রিয়াদ চৌধুরী প্রমুখ। ক্যাব চট্টগ্রামের সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরীর সঞ্চালনায় নির্বাচিত নারীদের তালিকা ঘোষনা করেন বিশিষ্ঠ নারী নেত্রী জেসমিন সুলতানা পারু। নির্বাচিত নারী কৃষকদের পক্ষে প্রতিক্রিয়া জানান উম্মে কুলসুম মিনু।

বক্তাগন অভিযোগ করে বলেন খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি উৎপাদন বিশেষ করে রবি শস্য, গবাদি পশু, হাঁস মুরগি, সবজি চাষ, মৎস্য চাষ, বনায়ন ইত্যাদি কাজে নারীরা পুরুষের পাশাপাশি সমান অবদান রাখলেও সামাজিক ও ধর্মীয় গোড়ামীকে পুঁজি করে কৃষি উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তায় নারীর অবদানকে যথযথ মুল্যায়িত না হবার কারনে নারী অধিকারকে অবমুল্যায়ন করা হচ্ছে। অথচ আদিকাল থেকেই নারীরা কৃষি কাজের বিশাল অংশ বিশেষ করে বীজ সংরক্ষন, বাড়ীর আঙ্গীনায় কৃষি কাজ করে পরিবারের খাদ্য নিরাপত্তা বিধান করে আসছিল। অন্যদিকে কৃষক যখন তার উৎপাদিত ফসল বাড়ীতে নিয়ে আসে তার পুরো দায়িত্বই নারীর হাতে। তার পরেও কৃষিতে নারীর অবদানকে রাস্ট্রীয় ও সামাজিক ভাবে স্বীকৃতি প্রদান করা হচ্ছে না।

বক্তাগন আরো বলেন দেশ খাদ্যে শস্যে বিপুল অগগ্রতি অর্জন করলেও নারী কৃষকরা যেভাবে অবহেলিত তেমনি প্রকৃত উৎপাদনকারী কৃষকরা এখনও তাদের পণ্যের ন্যায্য মুল্য পাচ্ছে না। একটি মধ্য স্বত্বভোগী ফারিয়া শ্রেনীর কৃষকের পুরো লাভই হজম করছে। আর কৃষির জন্য সরকারী প্রনোদনা ও যাবতীয় সুবিধাদি অন্যরা শুষে নিচ্ছে। তাই রাস্ট্রীয় কাঠামোতে নারীর কৃষককে মুল্যয়িত করার পাশাপাশি কৃষি পণ্যের ন্যায্য মুল্য নিশ্চিত করার দাবী জানানো হয়।

বক্তাগন খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানানো হয়। একই সাথে রাজনৈতিক কর্মসুচির নামে কৃষি পণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্য পরিবহন যেন রাজনৈতিক কর্মসুচির আওতা বর্হিভুত হয় সে বিষয়ে সকল রাজনৈতিক শক্তির মতৈক্য প্রতিষ্ঠা জরুরী বলে মতপ্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তায় অবদান রাখার জন্য ফাতেমা বেগম, (বানিজ্যিক ভাবে নার্সারী), শাহানা বেগম(বানিজ্যিক ভাবে পশু ও মৎস্য সম্পদ), উম্মেকুলসুম মিনু(বানিজ্যিক ভাবে মৎস্য, কৃষি), রোকেয়া বেগম বেবী(ফলজ বাগান), আনার কলি জলদাস(মৎস্য চাষ), ফাতেমা বুলবুল(রবি শস্য) চাষের জন্য সম্মাননা প্রদান করা হয়। প্রধান অতিথি সম্মাননাপ্রাপ্ত নারী কৃষকের হাতে ক্রেষ্ঠ ও পুরস্কার তুলে দেন।



মন্তব্য চালু নেই