ভূতুড়ে আত্মার যমজ পুতুল

অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ বলা হয় আফ্রিকাকে। এ কাঁটার মুকুটটা পরিয়েছে অন্যেরা, আফ্রিকা নিজেই নিজের মাথায় তোলেনি। মূলত, আফ্রিকা এতোসব প্রতীকী ক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যায়, তাত্ত্বিক বস্তুবাদ যা অনুবাদে অক্ষম। তবে মহাভারতবর্ষে যারা মানুষ হয়েছে, তারা তা বুঝতে সক্ষম। কারণ আচারের পৃথক প্রতীকধর্মীতা এ মাটির মানুষেরাও অত্যন্ত তাৎপর্যসহকারে বহন করে।
যাহোক। এখানে আফ্রিকার একটি পরিবারের কথা বলা হবে। পরিবারটি ফন গোত্রভুক্ত। পৃথিবীর পরিব্রাজকদের মধ্যে একজন আছেন, যার নামের সঙ্গে ‘ফন’ উপাধিটি আছে। এরিক ফন দানিকেন। তার নাম পাঠকেরা শুনে থাকবেন। বেনিনের দক্ষিণাঞ্চলে বসবাসরত এই ফনদের সঙ্গে স্ক্যান্ডিনেভীয় পরিব্রাজক পুরুষের ‘ফন’ উপাধির যোগাযোগ নেই। কিংবা কে জানে। হয়ত আছে।
তো, ঐ ফন পরিবারে একজোড়া যমজ সন্তান হয়েছিল। শৈশবেই তাদের মৃত্যু ঘটে। ভয়াবহভাবে বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন বাবা-মা। অবশেষে, আশ্চর্য এক প্রতীকধর্মী আচারের মধ্যে তাদের সান্ত্বনা খুঁজে পান। কী সেই আচরণ?
তারা শিশুদুটির অনুরূপ দুটি পুতুল বানালো। আর তাতে আরোপিত হলো শিশুদ্বয়ের আত্মা।
আফ্রিকার রয়েছে জাদু এবং বিচিত্র ধর্মীয় আচরণের সুপ্রাচীন ইতিহাস। এর অসংখ্য শাখা ও প্রশাখা রয়েছে। একটি পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া অথবা ধর্মের নাম বইপত্র আর রহস্য-চলচ্চিত্রগুলোর দৌলতে বিশ্বে সুপরিচিত, আর তা হলো— ভুডু।
যমজ সন্তানহারা পিতামাতা ভুডুর তত্ত্বে তাড়িত হয়ে মৃত দুই সন্তানের দুটো পুতুল বানালেন। পুতুল দুটোকে নিয়মিত স্নান করান তারা। পোশাক পরান। এমনকি স্কুলেও পাঠান। তারা আদিষ্ট হয়েছেন এমনটা করতে। দৈবক্রমে জানতে পেরেছেন— পুতুল বানিয়ে সন্তানসেবা না করলে, তাদের আত্মা কষ্ট পাবে, এবং তাদেরও কষ্ট দেবে। নানা রকম দুর্যোগে তারা আক্রান্ত করতে থাকবে তাদের পরিবারকে।
অন্যদিকে, যদি তাদের যত্ন করা হয়, দেখভাল করবে। পরিবারের সবাইকে নিরাপদে রাখবে, খারাপ জাদুর প্রভাব থেকে রাখবে মুক্ত।
বেনিনের এই ফন জাতির মধ্যে যমজ সন্তানের জন্মহার খুব বেশি। এর জীবতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা নিশ্চয়ই আছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতি কুড়িটি পরিবারের একটিতে যমজ শিশু জন্ম নিয়েছে।
ফন ভাষায় ভুডু শব্দের আভিধানিক অর্থ আত্মা। ফনরা যখন কোনো মানুষের ওপর প্রভাব ফেলতে চায়, তখন ঐ মানুষ সদৃশ একটি পুতুল তৈরি করে তাতে তার আত্মাকে ডেকে এনে আরোপ করে। অতঃপর পুতুলের সঙ্গে যে ‘আচরণ’ করা হয়, ওটাই ঐ আত্মাধারী প্রকৃত মানবদেহে আরোপিত হয়।
এই পরিবারটির বিশ্বাস মতে, তাদের মৃত দুই সন্তানের আত্মা এ দুটি পুতুলে আরোহন করেছে। এ মুহূর্তে অবস্থান করছে। পুতুল দুটো কি তাদের সন্তান হারানোর শোক ভুলিয়ে দিতে পেরেছে?
মন্তব্য চালু নেই