ভুলে যাওয়ার রোগ থেকে বাঁচতে যা করবেন

ডিমেনশিয়া বা ভুলে যাওয়ার রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে৷ শুধু জার্মানিতেই ডিমেনশিয়া বা আলৎহাইমায় ভুগছেন ১৬ লাখ মানুষ৷ মানসিকভাবে সক্রিয় থাকলে এই রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন দু’জন জার্মান বিশেষজ্ঞ৷

নিয়মে খানিকটা ব্যতিক্রম

‘মানুষ অভ্যাসের দাস’ অর্থাৎ মানুষ রুটিনমাফিক কাজ করতেই পছন্দ করে৷ সকালে দাঁত ব্রাশ করা, গোসল, নাস্তা এই কাজগুলো একই নিয়মে করে থাকে৷ এতে ভাবা বা চিন্তার কোনো প্রয়োজন হয়না৷ তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই কাজগুলো প্রতিদিন একই নিয়মে না করে মাঝে মাঝে একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে করুন৷ তাহলে কোনো বড় ধরণের পরিবর্তন ছাড়াই ব্রেনের ট্রেনিং হয়ে যাবে৷

সামাজিকভাবে সক্রিয় থাকুন
সামাজিক অনুষ্ঠান, বন্ধুবান্ধব বা পারিবারিক আলোচনায় শুধু চুপচাপ বসে না থেকে সক্রিয়ভাবে আলোচনায় অংশ নেয়ার পরামর্শ দেন আলৎসহাইমার বিশেষজ্ঞ৷ তাছাড়া যে কোনো ধরণের স্বেচ্ছাসেবীর কাজ করার পরামর্শও দেন৷ ডিমেনশিয়া বিশেষজ্ঞ ডা. টোবিয়াস হার্টমান জানান, সাহায্য করার মনোভাব মানুষকে মানসিকভাবে সুস্থ রাখে এবং সেখানে বিভিন্ন ধরণের কাজ করা ও জানার সুযোগ থাকে৷

বন্ধুত্বের যত্ন নিন
ডা.মাথিয়াস লিন্ডেনাউ বলেন, ‘‘বন্ধুরা কথা বলার সময় তাদের হাসি, বিরক্তিবোধ, গলার আওয়াজ বা সন্তুষ্টভাবের দিকে ভালো করে লক্ষ্য রাখুন৷ দেখবেন এতে আপনার ব্রেন বা মস্তিষ্ক বেশ সক্রিয় হয়ে উঠবে৷ বিশেষ করে খেয়াল করবেন, বিজ্ঞান এবং পরিবেশ বিষয়ক আলোচনা করার সময়৷ এসব বিষয় মস্তিষ্ক ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারলে তা পরের আলোচনায় অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে দেয়ায় মধ্য দিয়ে মস্তিষ্কের বড় ধরণের ট্রেনিং হয়৷’’

শারীরিক চেকআপ
রক্তচাপ এবং ডায়েবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নিয়মিত চেকআপ করতে হবে৷ আর অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে ও হাঁটা-চলা করে শরীরের ওজন ঠিক রাখতে হবে৷

ভালো চিকিৎসা
শরীরের কোনো সমস্যা থাকার কারণে যদি কোনো ওষুধ খেতে হয়, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন৷ জেনে নিন সে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মস্তিষ্কে কোনো রকম নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে কিনা৷ সেরকম হলে এক্ষেত্রে বিকল্প ওষুধের কথা ভাবতে হবে৷

পানি শরীরকে সচল রাখে
পানির অভাব হলে শরীরে অস্বস্তিভাব দেখা দেয়৷ তাই যথেষ্ট পানি পান করতে হবে৷ এক্ষেত্রে ‘প্লেন’ পানি, গ্রিন টি বা সবুজ চা এবং বিভিন্ন ফল বা সবজির চা পান করাই শ্রেয়, তবে অবশ্যই চিনি ছাড়া ৷ বলা বাহুল্য, বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের পানির পিপাসা কমে যায়, তাই সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে৷

ঘুম খুব জরুরি
মানুষের ঘুমের সময়ই মস্তিষ্ক নানা বিষয় ‘সেভ’ করে৷ আর পাশাপাশি বিষক্রিয়া বা টক্সিন বের করে দিয়ে মস্তিষ্ককে আবর্জনা মুক্ত করে৷ তাই ভালো ঘুম প্রয়োজন৷ আর সেজন্য চাই বেডরুমে যথেষ্ট আলো বাতাস এবং স্বাস্থ্যসম্মত বিছানার ম্যাট্ট্রেস, চাদর, বালিশ ইত্যাদি৷ প্রতিটি মানুষের রাতে কমপক্ষে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানো দরকার৷

মানসিক চাপ দূরে রাখুন
শুধুমাত্র স্ট্রেসের কারণে কখনো ডিমেনশিয়া হয় না৷ তবে মানসিক চাপ ডিমেনশিয়া বা ভুলে যাওয়া রোগকে ত্বরান্বিত করতে পারে৷ তাই মানসিক চাপকে কখনো হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়৷ মানসিক চাপ কমাতে যে কোনো ধরণের মেডিটেশন বা ইয়োগা করা উচিৎ৷

ইতিবাচক চিন্তা
বয়স বাড়বে, সমস্যা দেখা দেবে এই ভাবনা সকলের মাথায়ই থাকা উচিৎ৷ এ নিয়ে ভয় বা চিন্তার কিছু নেই৷ উদ্বেগহীন এবং হাসি-খুশিভাবে সময় কাটানো নিঃসন্দেহে যে কোনো মানুষকে ডিমেনশিয়া রোগ থেকে দূরে রাখতে সহায়তা করতে পারে৷ তাছাড়া মাঝে মাঝে ক্রসওয়ার্ড, পাজল বা শব্দের ধাঁধার মতো খেলাও খেলা যেতে পারে মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখতে৷ এই পরামর্শগুলো দিয়েছেন ডিমেনশিয়া বিশেষজ্ঞ ডা. টোবিয়াস হার্টমান এবং ডা.মাথিয়াস লিন্ডেনাউ।- ডয়চে ভেলে



মন্তব্য চালু নেই