ভিজিডি তালিকা প্রণয়নে দুর্নীতি : দুঃস্থদের কাছ থেকে অর্থ ওঠালেন ইউএনও!
কুড়িগ্রামের রৌমারীতে ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় দুঃস্থ মহিলাদের তালিকা প্রণয়নে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে ভিজিডি কর্মসূচীর আওতায় দুৎস্থদের চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশে বিলম্ব করা হয়েছে। গতকাল বৃহষ্পতিবার বিকালে উপজেলার ৬ ইউনিয়নের ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় চুড়ান্ত দুঃস্থদের তালিকা প্রকাশ করার পর ওই অনিয়মের বিষয়টি ফাঁস হয়। এতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যে তালিকা দাখিল করা হয়েছে সেখান থেকে ১৬০ জনের নাম নেই। ক্ষমতার অপব্যাবহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন তালুকদার ওই স্থানে নতুন নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলার ৬ ইউপি চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় ইউনিয়ন কমিটি যথা সময়ে প্রকৃত দুঃস্থদের তালিকা তৈরি করে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে দাখিল করে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন তালুকদার নিজেই দাখিল করা দুঃস্থের তালিকা থেকে দেড়শ’র বেশি নাম বাদ দিয়ে সে স্থানে নতুন করে নাম ঢুকিয়েছেন। এতে প্রতি ইউনিয়ন থেকে ২৫ থেকে ৪০ জন দুঃস্থের নাম কর্তন করেছেন। নতুন অন্তর্ভুক্ত করা ওই দেড়শ’ দুঃস্থের কাছ থেকে জনপ্রতি ৩ থেকে ৪ হাজার করে প্রায় ৫ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন ইউএনও। এমন অভিযোগ করেছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগামি ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৪ মাস মেয়াদি ৩ হাজার ২৫৩ জন দুঃস্থের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেয়া হয় ইউপি চেয়ারম্যানদের। এতে তালিকাভুক্ত প্রতি দুঃস্থ পরিবার বিনামূল্যে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাবে। ওই তালিকা দাখিল করার শেষ সময়ে ছিল গত বছরের ৩০ ডিসেম্বররের মধ্যে। দাখিল করা তালিকা উপজেলা মাসিক সভায় অনুমোদনের পর সেটা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সময় মতো তালিকা দাখিল ও মাসিক সভায় অনুমোদনে বিলম্ব হওয়ার কারণে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের বরাদ্দকৃত চাল বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। তবে দুই মাসের বরাদ্দ একসঙ্গে বিতরণ করা হবে।
অনুসন্ধান ও চেয়ারম্যানদের অভিযোগে জানা গেছে, ইউএনও আব্দুল্লাহ আল মামুন তালুকদার তার গাড়ির ড্রাইভার (চালক) ও পিয়ন দুইজনকে দিয়ে প্রতিটি ইউনিয়নের গ্রামে গ্রামে দুঃস্থদের তালিকা করেছে। এসময় দুঃস্থদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা করে আদায় করেছে। ওই দুই কর্মচারী আদায় করা টাকা থেকে জনপ্রতি ৩ হাজার টাকা করে ইউএনও’কে দিয়েছেন। এ হিসেবে দুইশ’ জনের কাছ থেকে প্রায় ৬ লাখ টাকা গ্রহণ করেন ইউএনও।
বন্দবেড় ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন অভিযোগ করেন, ‘নীতিমালা অনুসারে আমরা তালিকা তৈরি করে জমা দিয়েছি। ইউএনও স্যার সেখান থেকে নিয়ম বর্হিভূত ভাবে নাম বাদ দিয়ে তার নিজস্ব নাম ঢুকিয়েছে। এটা কথনও তিনি করতে পারেন না। ’ একই ধরণের অভিযোগ করেন চরশৌলমারী ইউপি ফজলুল হক। তিনি বলেন, ‘আমার তালিকা থেকেও ৩৯ নাম বাদ দিয়েছে। এভাবেও ঢালাও ভাবে নাম কর্তন করে সেখানে নতুন নাম দেয়ার কোনো ক্ষমতা নেই ইউএনও স্যারের। যদি কোনো নামের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে তাহলে সেটা তদন্তের মাধ্যমে ইউনিয়ন কমিটিকে সুপারিশ করতে পারেন তিনি। কিন্তু তিনি তা না করে ব্যবসা করেছেন। ’ এভাবে সকল ইউপি চেয়ারম্যানরা অভিযোগ করে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা তপন কুমার সরকার বলেন, ‘নাম কর্তন করা বা নতুন নাম ঢুকানোর বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। যা কিছু করেছে সেটা উপজেলা কমিটির সভাপতি ইউএনও স্যার। উপজেলা কমিটি যাচাইবাছাই করে চুড়ান্ত তালিকা অনুমোদন দিয়েছে সেই তালিকা আমি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। ’
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন তালুকদার বলেন, ‘দুঃস্থদের কাছ অর্থ গ্রহণের কথা অস্বীকার করেন। আমার কাছেও তো গরীব দুঃস্থ মানুষ সাহায্যের জন্য আসে। আমি ইউএনও আর আমি নাম দিতে পারব না? তবে হ্যাঁ ইউএনও হিসেবে কিছু নাম আমি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছি। ’
মন্তব্য চালু নেই