ভিক্ষাবৃত্তি করে কাটত জীবন, আজ তিনি কেমব্রিজের ইঞ্জিনিয়ার!
রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষাবৃত্তি করে দিন চলত ছেলেটির। সারা দিন যা আয় হত মায়ের হাতে তুলে দিত ছেলেটি। যার প্রায় পুরোটাই নেশা করে উড়িয়ে দিত তার মা। আধপেটা খাওয়া সেই ছেলেটির মাথা গোজার ঠাঁই পর্যন্ত ছিল না। ফুটপাথেই দিন কাটত তার। ফসলের বিপুল ক্ষতির পর নেল্লোরের ভিটেবাড়ি ছেড়ে সেই ছোট্ট ছেলেটি জয়ভেলা চেন্নাই চলে এসেছিলেন পরিবারের সঙ্গে। তারপর থেকে রাস্তার ফুটপাথই হয়ে উঠেছিল ছেলেটির ঠিকানা।
কিন্তু বিধাতার ইচ্ছা একটু অন্যরকম ছিল। আর তাইতো আজ চেন্নাইয়ের ফুটপাথ থেকে সেই ছেলেটি পৌঁছে গিয়েছে লন্ডনের কেমব্রিজে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডভান্স অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করছেন জয়াভেল। আগামী মাসে ইতালি যাওয়ার কথা তাঁর। এখন তাঁর বয়স ২২ বছর। এতক্ষন যে ছেলেটির কথা বলছিলাম তার নাম জয়াভেল
জয়াভেলের এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে অবশ্য এক দম্পতি। ১৯৯৯ সালে যে তাদের উপরে ভর করেই তিনি উড়তে শুরু করেন।
প্রতিদিনের মতো সে দিনও পেটের টানে চেন্নাইয়ের রাস্তায় ভিক্ষা করছিল জয়াভেল। পরিচয় হয় উমা মুথুরামন নামে এক মহিলা এবং তাঁর স্বামীর সঙ্গে। তাঁরা দু’জনেই একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। যে সংস্থা পথ শিশুদের নিয়ে কাজ করে থাকে। জয়াভেলকে ভিক্ষা করতে দেখে যেচে তার সঙ্গে পরিচয় করতে যান তারা। হুট করেই এই যেচে পরিচয় ভাল চোখে নেয়নি অনেকেই। জয়াভেলের মা এবং অন্য পথ শিশুদের পরিবার তাদের মারধর পর্যন্ত করতে উদ্যত হয়েছিলেন। তারা যে তাদের ভালর জন্যই কাজটি করছেন তা বোঝাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল।
শেষমেশ অনেক বুঝিয়ে জয়াভেলকে ভাল খাওয়াদাওয়া এবং শিক্ষা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজেদের সংস্থায় নিয়ে আসেন সে দম্পতি। জয়াভেলের সঙ্গে আরও বেশ কিছু পথ শিশুকেও নিয়ে এসেছিলেন উমা। তাদেরকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়। প্রথম দিকে মোটেই এখানে থাকতে ভাল লাগত না জয়াভেলের। সারাদিন শুধু খেলতে ইচ্ছা করত। চলে যেতে ইচ্ছা করত সেই চেনা ফুটপাথে।
তারপর জয়াভেল ধীরে ধীরে নিজের ফুটপাথের জগত ছেড়ে বেরিয়ে এলেন। স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণিতে ভাল নম্বর নিয়ে পাশ করলেন। উমা আর তার স্বামীর চেষ্টায় এডুকেশন লোন জুটে গেল। কঠোর পরিশ্রমে খুব তাড়াতাড়ি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষাতেও উর্ত্তীর্ণ হলেন। বর্তমানে পারফরম্যান্স কার এনহ্যান্সমেন্ট টেকনোলজি ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করছেন তিনি। সম্প্রতি ইতালিতেও পড়াশোনার জন্য ডাক পেয়েছেন তিনি। আর তার পড়াশোনায় যাতে কোনও ছেদ না পড়ে তার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন উমাদেবীর সংস্থা। জয়াভেলের ইতালিতে পড়াশোনার জন্য ৮ লক্ষ টাকা জোগাড় করে ফেলেছেন তাঁরা।
তবে এত দূর গিয়েও চেন্নাইয়ের সেই ফুটপাথকে কিন্তু ভোলেননি তিনি। ভোলেননি তার ফুটপাথের বন্ধুদেরও। দেশে ফিরলে সময় করে একবার অন্তত সেখানে ঢুঁ মেরে আসেন তিনি। জয়াভেলের মা যে আজও সেই ফুটপাথেরই বাসিন্দা। জয়াভেলের এই পরিবর্তন আজ অন্য পথশিশুদেরও কাছেও অনুপ্রেরণা।-বিডি প্রতিদিন
মন্তব্য চালু নেই