শেখ হাসিনাকে তারেক রহমান :

ভাষা ব্যবহারে আরো যত্নশীল হোন

ভাষা ব্যবহারে আরো যত্নশীল এবং দলের নেতাদেরকে অপপ্রচার থেকে বিরত রাখতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহবান জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

শনিবার যুক্তরাজ্য বিএনপির মাধ্যমে লন্ডন থেকে তারেক রহমান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে তিনি এ আহবান জানান।

বিবৃতিতে তারেক রহমান বলেন, “অপপ্রচার এবং মিথ্যাচার বন্ধের কাজটি আওয়ামী লীগেরই আগে শুরু করা দরকার। কারণ অপপ্রচারের কাজটিও তারাই আগে শুরু করেছিল। তাহলে আর কাউকে শেখ হাসিনা কিংবা আওয়ামী লীগের নেতাদের অপপ্রচারের জবাব দিতে হবে না। ”

শেখ হাসিনার প্রতি আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “ইতিহাসকে আপন গতিতে চলতে দিন। নিজের স্বার্থে সেটিকে বাধাগ্রস্ত করবেন না। ইতিহাসকে আদালতের কাঠগড়ায় তুলবেন না। বরং ইতিহাসবিদদের নির্মোহ তথ্য উপাত্তে কালের পরিক্রমায় প্রকৃত সত্য নিয়ে ইতিহাস আপন আলোয় উদ্ভাসিত হবে।”

রাজনীতি হওয়া উচিত দেশ এবং জনগণের উন্নয়নের জন্য এ কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, “বরাবরই শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক শক্তি ও সমর্থনকে ব্যক্তিগত রেষারেষি এবং প্রতিহিংসায় পরিণত করেন।”

বিবৃতিতে তারেক রহমান আরো বলেন, “শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি দীর্ঘসময় রাষ্ট্রপরিচালনা করেছে। কিন্তু বিএনপি কখনোই কোনো প্রতিহিংসার আশ্রয় নেয়নি। কারো বিরুদ্ধে মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়নি। ক্ষমতায় গিয়ে নিজের মতো ইতিহাস বিনির্মাণের চেষ্টা করেনি। এমনকি আদালতের আশ্রয় নিয়ে ইতিহাসের সত্যমিথ্যা নিরূপণেরও চেষ্টা করেনি।”

তারেক রহমান অভিযোগ করে বলেন, “আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় গিয়েছে তারা ইতিহাস পাল্টে দেয়ার চেষ্টা করেছে। আদালতের আশ্রয় নিয়ে জনগণের ওপর ইতিহাস চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে। এমনকি স্কুলের পাঠ্যপুস্তক থেকে স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, স্বাধীনতার অন্যতম পথিকৃত মাওলানা ভাসানীর নামও বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে।”

ইতিহাসের আলোকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে ২০১৪ সালে বিভিন্ন সময়ে দেয়া নিজের বক্তব্য সম্পর্কে তারেক রহমান বলেন, তিনি বেশ কয়েকটি বক্তৃতায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বইপত্র এবং দেশ বিদেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও জার্নালের রেফারেন্স তুলে ধরে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট ও স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভুমিকা তুলে ধরেছিলেন। সেইসব বক্তৃতায় অত্যন্ত প্রাসঙ্গিকভাবেই সেই সময়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ভুমিকাও তার বক্তৃতায় উঠে এসেছে।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, ওইসব বক্তব্যে তিনি যা বলেছেন, এর কোনো কথাই তার মনগড়া কিংবা বানোয়াট ছিল না। একইসঙ্গে তিনি এও বলেছিলেন, তার কোনো বক্তব্য ভুল প্রমাণিত হলে এবং এর বিপরীতে দলিল প্রমাণসহ প্রকৃত তথ্য উপস্থাপিত হলে তিনি সেটি শুধরে নিতে কোনো দ্বিধা করবেন না।

তিনি অভিযোগ করেন, তার বক্তব্যের কোন অংশটি ভুল কিংবা অপ্রাসঙ্গিক এসবের কোনো যুক্তিসংঙ্গত ব্যাখ্যা না দিয়েই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দলের কতিপয় নেতা তার ওপর অশালীন বাক্যবানে হামলে পড়েছে। তার বিরুদ্ধে ক্রমাগত অশ্লীল ও অশোভন উক্তি করেছে। তিনি বলেন, এরপরও তিনি কারো বিরুদ্ধে কোন কটুক্তি না করে হযরত আলির (রা.) একটি বাণী উদ্ধৃত করে বলেছিলেন ‘যুক্তিবুদ্ধিহীনরাই অশ্লীল কথা বলে’।

তারেক রহমান বলেন যুক্তি ও তথ্যপ্রমানসহ তার উপস্থাপিত সব তথ্যই আওয়ামী লীগের চোখে ‘অপপ্রচার’ বলে গণ্য হচ্ছে এবং আওয়ামী লীগ তাদের ভাষায় এই ‘‘অপপ্রচার’ বন্ধের আহবান জানিয়েছে।

তারেক রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যদি মনে করে, এইসব বন্ধ হওয়া দরকার তাহলে তাহলে এই কাজটি তাদেরই আগে বন্ধ করা দরকবার। কারণ তারাই শুরু করেছে। ”

বিবৃতিতে তারেক রহমান অভিযোগ করে বলেন, তার মা বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া যিনি বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী এবং তিনবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, শেখ হাসিনা প্রায়শই তার সম্পর্কে অশোভন মন্তব্য করেন, নানারকম কটুক্তি করেন। তারেক রহমান বলেন, “১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমার বাবা যখন মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে পাকিস্তানি শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন তখন আমরা ছোট্ট দুইভাই মায়ের আশ্র্রয়ে এক অনিশ্চিত গন্তব্যে। কিন্তু দেখা যায়, খোদ শেখ হাসিনা এবং তার দলের কতিপয় নেতারা এ সম্পর্কে নির্দ্বিধায় অশালীন অরুচিকর মন্তব্য করেন।”

বিবৃতিতে তারেক রহমান প্রশ্ন করে বলেন, কখনো তিনি নিজে কিংবা তার দলের নেতাকর্মীরা প্রশ্ন করেননি, ৭১ সালের ওই সময়টিতে কোথায় ছিলেন শেখ হাসিনা? কাদের আশ্রয়ে ছিলেন তিনি ? মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এত নিরাপদে কেমন করে তার সন্তানের জন্ম হয়েছিল? মুক্তিযোদ্ধাদের যখন পাকিস্তানি হায়েনারা নির্মমভাবে হত্যা লিপ্ত তখন শেখ হাসিনাকে তারা কেন এত সহায়তা করেছিল? কারা করেছিল? কেন করেছিল?”

তারেক রহমান বলেন, “বিএনপি নেতাকর্মৗরা কখনোই এসব নিয়ে প্রশ্ন না করলেও শেখ হাসিনা এবং তার দলের কতিপয় নেতা এর মর্যাদা রাখেনি। ”

প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে বিরত থাকার আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নামে সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো সিটি প্রশাসন ‘জিয়াউর রহমান ওয়ে’ নামে একটি সড়কের নামকরণ করেছে। জিয়াউর রহমানের নামে শিকাগোতে সড়কের নামকরণ মেনে নিতে পারছেন না শেখ হাসিনা । তাই এই নামকরণ বাতিলের জন্য তিনি রাষ্ট্রীয় প্রশাসনকে ব্যবহার করছেন। এই অপতৎপরতার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ দূতাবাসকেও জড়িত করা হয়েছে।”

তারেক রহমান বলেন, “প্রশাসনকে ব্যবহার এই ধরণের প্রতিহিংসা দেশ ও জনগণের জন্য কোনো সম্মান বয়ে আনতে পারে না এমনকি এটি রাষ্ট্রীয় শিষ্টাচার ও সংস্কৃতিবিরোধী।”

দীর্ঘ বিবৃতিতে তারেক রহমান আরো অভিযোগ করে বলেন, তার সম্পর্কে শেখ হাসিনা প্রায় সময়ই বেফাঁস মন্তব্য করেন। তার সম্পর্কে শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক মন্তব্য কোনো সুস্থতার পরিচয় বহন করে না বলেও তারেক রহমান উল্লেখ করেন। তারেক রহমান বলেন, “ আমার জীবনযাপন সম্পর্কে শেখ হাসিনা না জেনেই বিভিন্ন সময় নানারকম মন্তব্য করেন। তবে এটি তার স্বভাবজাত ভেবে আমার মা কিংবা আমাদের পরিবার সবসময়ই তার এইসব নোংরামির জবাব দেয়া থেকে সচেতনভাবেই বিরত থেকেছি।”

তারেক রহমান প্রশ্ন করে বলেন, “বিএনপির নেতাকর্মীরা যদি বিদেশে শেখ হাসিনার সন্তানের যাবতীয় অনৈতিক জীবনাচার এবং অপকর্মের তথ্য প্রমাণ হাজির করে এবং শেখ হাসিনা যেইসব শব্দ ব্যবহার করেন, যেমন ‘জানোয়ার’ ‘শকুন’, তার পুত্র সম্পকের্ও যদি এইসব ভাষা প্রয়োগ করা হয়, তখন এসব কি শেখ হাসিনার কাছে ভালো লাগবে?



মন্তব্য চালু নেই