‘ভারমুক্ত’ মহাসচিবের গুঞ্জন বিএনপিতে
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরই বিএনপির পরবর্তী মহাসচিব হবেন এমনটা আশাবাদ অনেকের। এ পদটি ঘিরে কয়েকজন সিনিয়র নেতার আগ্রহ থাকলেও তার সম্ভাবনা আর দেখা যাচ্ছে না। শোনা যাচ্ছে, মির্জা ফখরুলকে ‘ভারমুক্ত’ করতে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব ঐক্যমতে পৌঁছেছে। খালেদা জিয়া দেশে ফিরে তাকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব ঘোষণা করতে পারেন।
বিভিন্ন সময় মহাসচিব হিসেবে দলটির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এম তরিকুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকা, হাফিজ উদ্দিন আহমদ বা যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদের নাম আলোচনায় এসেছে। তারপরও এ পদটি মির্জা ফখরুল ইসলামই পূরণ করবেন এমনটি বিশ্বাস সবার।
তবে সম্প্রতি কারাভোগ, উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ গমন সব মিলিয়ে রাজনীতিতে দীর্ঘদিন নিস্ক্রিয় ছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে সিনিয়র নেতাদের উপস্থিতি না থাকায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে। রাজনীতিতে ফখরুলের অনুপস্থিতিতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামের অপর সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কারামুক্তি পেয়ে খালেদা জিয়ার বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে পাশাপাশি বসতে দেখা যায়। ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুঞ্জন চলে আসে যে, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় হচ্ছেন বিএনপির পরবর্তী মহাসচিব।
কিন্তু সিঙ্গাপুর এবং যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার পর বিমানবন্দরে যে চিত্র দেখা গেলো, তাতে শোনা গেছে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মহাসচিব হচ্ছেন এমন গ্রিন সিগন্যাল নিয়েই দেশে ফিরেছেন। মির্জা ফখরুলকে অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দরে তখন নজরুল ইসলাম খান, আব্দুল্লাহ আল নোমান, মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপনসহ বেশ কয়েকজন নেতাকে দেখা যায়। সেই সময় তাদের হাস্যোজ্জ্বল মুখে ফখরুলকে বরণ রাজনীতিতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। ফখরুল গণমাধ্যমে তার চিকিৎসার খোঁজ খবর জানান এবং পরে কোরবানি করতে ঠাকুরগাঁওয়ে যান। ঈদের পরে আবার ঢাকায় ফিরে এসেছেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ঘোষণায় দলের অনেক সিনিয়র নেতা অসন্তুষ্ট ছিলেন। সিনিয়র নেতাদের কাঙ্ক্ষিত সহযোগিতা না পেয়ে সাংগঠনিকভাবে এখনও পরিপক্কতা দেখাতে পারেননি তিনি। তবে রাজনীতিতে সজ্জন পরিচ্ছন্ন নেতা হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে।
আবার তাকে পুঁজি করেও রয়েছে কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ।
এদিকে, চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি।
অবশ্য বুধবার তিনি নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন এবং সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন। তার বাসায় দল এবং জোটের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের যাতায়াতও অব্যাহত রয়েছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দেশে ফেরা এবং বিমানবন্দরে সিনিয়র নেতাদের অভ্যর্থনা, হাস্যোজ্জ্বল ছবি, ঈদ করা সব মিলিয়ে একটি মহলের দাবি, কোনো কারণে বেগম খালেদা জিয়ার দেশে ফিরতে দেরি হলে মির্জা ফখরুলকেই বিএনপির দায়িত্ব নিতে হতে পারে!
তবে দলের অনেকের দাবি, বিএনপির মতো একটি বড় দলে মহাসচিব নেই এটা নেতৃত্ব শূন্যতার বহি:প্রকাশ। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব দিয়ে দল চালানো হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে যিনি দায়িত্ব পালন করছেন তিনিও সিনিয়র নেতাদের কাঙ্ক্ষিত সহযোগিতা পাচ্ছেন না। বিএনপির গঠনতন্ত্রে যেখানে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলে কিছু নেই, সেখানে দীর্ঘদিন ধরে ভারপ্রাপ্ত থেকে মাঝে মধ্যে ফখরুলের মধ্যে এক ধরনের হতাশা তৈরি হতে পারে। যে দলের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জেল নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাকে মহাসচিবের দায়িত্ব না দেয়াটা অন্যায় হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের সালের ১৬ মার্চ বিএনপির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পান সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সজ্জন ব্যক্তি ও সুবক্তা হিসেবে রাজিনৈতিক অঙ্গনে এবং দলের নেতাকর্মীদের মাঝে জনপ্রিয় তিনি। দলের তৃণমূল নেতারা মনে করছেন তিনি ভারমুক্ত হয়ে দলের দায়িত্ব পেলে দলের কাজে আরো গতি আসবে। শীর্ষ নেতারাও ইতিবাচক।
‘এটাতো স্বাভাবিক’ বললেন দলের বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান। চেয়ারপারসন দেশে এসে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব ঘোষণা করবেন এ বিষয়ে এমনটি বলেন তিনি।
‘আমি তো মনে করি এটা আরো চার বছর আগে হওয়া উচিৎ ছিল। যা হওয়ার তাই হবে। এটা স্বাভাবিক’- এমনটাই বললেন দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহাবুবুর রহমান।
তবে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর বীর উত্তম বলছেন, ‘এটাতো শোনা কথা, বিষয়টি আমার জানা নেই।’
কারভোগ আর চিকিৎসা শেষে দীর্ঘ নয় মাস পর বুধবার নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে যান মির্জা ফখরুল। এখন অপেক্ষা বিএনপির চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের।
মন্তব্য চালু নেই