ভারত ‘বাঁধ খুলে দেওয়ায়’ হাতীবান্ধার চরাঞ্চল প্লাবিত

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। গত চার দিনে প্লাবিত এলাকায় কোনো ত্রাণ সামগ্রী না পৌঁছানোয় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।

উজানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার গজলডোবা বাঁধ দিয়ে তীব্র পানি প্রবাহের ফলে বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার চরখরিবাড়ি মৌজার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে হাতিবান্ধার ভাটি এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শহিদুল ইসলাম জানান, গজলডোবা বাঁধের পানি প্রবাহ আটকানোর জন্য শুকনো মৌসুমে চরখরিবাড়ি এলাকায় স্থানীয়দের স্বেচ্ছাশ্রমে এক হাজার মিটার একটি মাটির বাধ নির্মাণ করা হয়েছিল।এই বাঁধের একশত মিটার ভেঙ্গে গিয়ে ভাটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে, গত চার দিনের উজান ঢল ও জলাবদ্ধতায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় অবস্থিত তিস্তা ব্যারেজ রক্ষা বাঁধ ‘গাইডবান’ হুমকির মুখে পড়েছে। গাছ কেটে রশি টানা দিয়ে ‘গাইটবান’ রক্ষার ব্যবস্থা করেছে স্থানীয়রা। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এসব এলাকার জনজীবন।

এই মানবেতর অবস্থার মধ্যেও স্থানীয় প্রশাসন নির্বিকার। গত চার দিনে এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার কেউ খোঁজ খবর নেননি, পৌঁছেনি কোনো ত্রাণ সামগ্রি।

শুক্রবার সরেজমিনে পানিবন্দী এলাকায় গেলে এ প্রতিবেদককে মানবেতর জীবন যাপনের কথা বলেন এলাকার লোকজন।

চর খড়িবাড়ি এলাকার মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ আলীর স্ত্রী মোমেনা খাতুন আক্ষেপ করে বললেন, ‘চার দিন ধরে পানিবন্দী অবস্থায় আছি। চেয়ারম্যান, মেম্বার, রাজনীতিক দলের নেতা কেউ এ পর্যন্ত আমাদের খোঁজ খবর নেননি।’

একই অভিযোগ করেন, সানিয়াজান ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের নাজমা।

ভোলার চরের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সুমি আকুতি করে বলে, ‘এ অবস্থা আর কতদিন থাকবে। আমাদের জন্য একটা কিছু করেন। সকাল বেলা বাঁশের ভুরা (ভেলা) পাড়াপাড়ের জন্য কেউ না থাকলে সাঁতরে খাল পাড় হয়ে প্রাইভেটে যেতে হয়।’

স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইমান আলী জানালেন, ভারত প্রতিবছর আগাম কোনো ম্যাসেজ না দিয়ে গজলডোবা বাঁধের গেইট ছেড়ে দেওয়ার কারণে আমাদের এ ধরনের দুঃখের মধ্যে পড়তে হয়।

সানিয়াজান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এনায়েত উল্লাহ জানালেন, বেশ কয়েক বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ভারতের ফারাক্কা ও গজলডোবা বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে প্রতিবছর এসব এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

চেয়ারম্যান আব্দুল গফুরের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বললেন, ‘আজ শনিবার সকালে শুকনো খাবার নিয়ে এসেছি। বন্যা কবলিত এলাকার সার্বিক অবস্থা উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় দ্রুত ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানোর ব্যবস্থা হচ্ছে।’

হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন বাচ্চু জানালেন, উপজেলা প্রকৌশলী ও উপজেলা প্রোজেক্ট বাস্তবায়ন অফিসারকে নিয়ে এলাকা পরিদর্শন করেছি।



মন্তব্য চালু নেই