ভারতের কাঁচ তৈরির শহর
বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের ছোট্টো এক শহর ফিরোজাবাদ। রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে মাত্র দুইশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই শহরটি কাঁচ শিল্পের জন্য বিশেষভাবে বিখ্যাত। বিশ্বে কাঁচ মিল্পে সবচেয়ে এগিয়ে বেলজিয়াম। শুধু বেলজিয়াম নয় পৃথিবীর অন্যান্য যেসব দেশে কাঁচ তৈরি করা হয় সেখানে কাঁচ নির্মানে ব্যবহার করা হয় আধুনিক প্রযুক্তি। কিন্তু এই প্রাযুক্তিক উৎকর্ষতার সময়েও ভারতের ফিরোজাবাদে কাঁচ তৈরি করা হয় সেই সেকেলে পদ্ধতিতে।
প্রায় দুইশ বছর ধরে ফিরোজাবাদের জনগোষ্ঠি কাঁচ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তবে ফিরোজাবাদের কাঁচ শ্রমিকরা মূলত দুইটা বিশেষ জিনিস তৈরিতে দক্ষ। এরমধ্যে অন্যতম হলো কাঁচের চুড়ি এবং অন্যটি হলো চিমনি। এখানকার বানানো চুড়ি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। শহরের বোরহান গলি নামক একটি স্থানে গেলে সারি সারি কাঁচের চুড়ির দোকান দেখতে পাওয়া যায়। এই দোকানগুলো থেকেই মূলত বিভিন্ন স্থানে চুড়ি রপ্তানি হয়ে যায়।
শহরের বাসিন্দাদের অধিকাংশেরই শারীরিক অবস্থা অতটা ভালো নয়। ফুসফুসে সংক্রমন একটি সাধারণ বিষয় এই শহরের বাসিন্দাদের জন্য। যে পদ্ধতিতে কাঁচ তৈরি করা হয় তাতে সূক্ষ্ণ কাচের গুড়ো এবং কাঠ-কয়লার ছাই সহজেই নিঃশ্বাস হয়ে ফুসফুসে প্রবেশ করে। এছাড়াও কারখানাগুলোতে কর্তব্যরত অবস্থায় অনেকেরই শরীরের ত্বক অতিরিক্ত তাপে পুড়ে যায়। শুধু তাই নয়, চোখের সমস্যাও অহরহ দেখা যায় সেখানে।
ফিরোজাবাদের এই কাঁচ শিল্প বিশ্বে বেশ সুনাম করলেও এর শ্রমিকরা কিন্তু তেমন পারিশ্রমিক পান না। দিন প্রতি একজন শ্রমিককে মাত্র ৮০-৯০ রুপি করে দেয়া হয়। তবে সব শ্রমিকই কিন্তু এই পরিমান মজুরি পায় না। নারী-শিশুরা আরও অনেক কম মজুরি পায়। বৃহৎ শিল্প হওয়া স্বত্ত্বেও শ্রমিকদের উন্নয়নে নেই ভারত সরকারের কোনো পদক্ষেপ। একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফিরোজাবাদের এক একটি কারখানায় অন্তত দুইশ শ্রমিক কাজ করে। কিন্তু কাগজে কলমে শ্রমিকের সংখ্যা অনেক কম দেখানো হয়। সরকারি আয়কর ফাঁকি দেয়ার জন্য কারখানা মালিকেরা এই চাতুরি করে থাকে।
মন্তব্য চালু নেই