“ভাই আমারে বাঁচান, মুক্ত করেন : আমি পাগল নই, আমার স্ত্রী-ছেলে যা বলছে সবই মিথ্যা”
ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর): ‘ভাই আমারে বাঁচান, আমারে মুক্ত করেন। আমার স্ত্রী আর সন্ত্রাসী ছেলে মহসিন আমার বিরুদ্ধে যা বলছে সবই মিথ্যা কথা। আমি কোনো পাগল নই, আমাকে পাগল বানানো হয়েছে।’
ফরিদগঞ্জ উপজেলার পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের শাশিয়ালী গ্রামের শিকলবন্দি বৃদ্ধ শরাফত উল্লার আকুতি করে সাংবাদিকদের একথা বলেন।
জন্মদাতা বৃদ্ধ বাবাকে পাগল সাব্যস্ত করে হাত-পা বেঁধে গত ৮ দিন ধরে শিকলবন্দি করে ঘরের মধ্যে আটকে রেখেছে তার স্ত্রী ও নিষ্ঠুর সন্তান।
অমানবিক এ ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদগঞ্জ উপজেলার পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের শাশিয়ালী গ্রামে। রাতের আঁধারে আবার ছেলের এলোপাতাড়ি মারধরের কারণে ওই বৃদ্ধ বাবার আত্মচিৎকারে ওই গ্রামের নিরবতা ভাঙে প্রায়ই। স্থানীয় সাংবাদিকরা ঘটনা শুনে উপস্থিত হলে ছেলের হাতে শিকলবন্দি বৃদ্ধ শরাফত উল্লা তাকে বাঁচানোর আকুতি জানান।
শাশিয়ালী গ্রামের শরাফত উল্লার (৬৫) সঙ্গে তার স্ত্রী ও সন্তান মহসিনের পারিবারিক বিরোধ শুরু হয়। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে গত কয়েক মাস আগে শরাফত উল্লাকে তার ছেলে মহসিন ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। পরে এলাকাবাসী শরাফত উল্লাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়। চিকিৎসা শেষে শরাফত উল্লা বাড়ি এসেই ছেলে মহসিনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তার ডান হাতের দুটি আঙ্গুল কেটে ফেলে। এরপর থেকেই শুরু হয় বাবা-ছেলের দ্বন্দ্ব।
বৃদ্ধ শরাফত উল্লার ৬ ছেলে ১ মেয়ের মধ্যে মহসিন ৫ম। বাকি সন্তানরা নিজেদের কর্মের কারণে ঢাকায় থাকেন। গত এক সপ্তাহ আগে মহসিন তার ক’জন সহযোগী নিয়ে তার বাবা শরাফত উল্লাকে আটক করে এবং এক পর্যায়ে তার বাবার হাত-পা বেঁধে ৮টি তালা লাগিয়ে তাকে শিকলবন্দি করে ঘরের এক কোণে আটকে রাখে। এদিকে আটক অবস্থায় শরাফত উল্লাকে ঠিকমতো খাবার না দেয়ায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাছাড়া প্রতিনিয়ত ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে রাখায় তিনি দুর্বল হয়ে পড়েছেন।
সরেজমিন গেলে দেখা যায়, হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বৃদ্ধ শরাফত উল্লা টিনশেড ঘরের এককোণে বসে আছেন। আর তাকে পাহারা দিচ্ছেন স্ত্রী মনোয়ারা ও সন্তান মহসিন।
কথা হয় শরাফত উল্লার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম জানান, তার স্বামী মানসিক রোগী, এছাড়াও তার কিছু চরিত্রগত দোষ রয়েছে। তাকে বেঁধে না রাখলে তাদের আতঙ্কে থাকতে হয়। তবে তারা মানসিক রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনো ব্যবস্থাপত্র দেখাতে ব্যর্থ হন। তবে সহসাই তাকে ডাক্তারের কাছে নেয়া হবে বলে জানান।
এ সময় ছেলে মহসিন নিজের জখমকৃত হাত দেখিয়ে বলেন, ‘আমার বাবা একজন মানসিক রোগী। যে কারণে বাধ্য হয়ে তাকে শিকলবন্দি করে রাখতে হয়েছে।’
তবে উক্ত ঘটনা শুনে কাকতালিয়ভাবে সেই বাড়িতে উপস্থিত উপজেলা সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব ও দুনীতি প্রতিরোধ কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামরুল ইসলাম সাউদ বৃদ্ধকে শিকলমুক্ত করতে মহসিনকে অনুরোধ করে ব্যর্থ হন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মহসিন পাটওয়ারী বলেন, ‘শরাফত উল্লা কোনো পাগল কিংবা মানসিক রোগী নন। এরা বাবা ছেলে দুজনই উগ্র স্বভাবের।’
উক্ত গ্রামের বাসিন্দা ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যাস রিনা নাছরিন জানান, জন্মদাতা বাবাকে শিকলবন্দী করে রাখার বিষয়টি জেনে তাকে শিকলমুক্ত করার জন্য উদ্যোগ নিয়ে ঘটনাস্থলে তার স্বামীকে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সফল হতে পারিনি।
এ ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ থানার ওসি নাজমুল হক জানান, তিনি এ ঘটনার ব্যাপারে গতকাল শনিবার পর্যন্ত কিছু জানেন না। তবে মানসিক রোগী হলে তাকে বেঁধে রাখা বেআইনি। তাকে বেঁধে না রেখে চিকিৎসা করানো উচিৎ।
মন্তব্য চালু নেই