যথাসময়ে সম্মেলন না হওয়ায় বাদ পড়ার আশঙ্কা
বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি ছাত্রলীগ নেতাদের
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্মেলন না হওয়ায় বয়স বাড়ার কারণে ছাত্রলীগের দায়িত্ব থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন নেতা। ২০০৬ সালের সম্মেলনে নেতাদের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ২৯ বছর নির্ধারিত হওয়ায় বর্তমান কমিটির অপেক্ষাকৃত বয়স্ক নেতারা নতুন কমিটিতে থাকতে পারবেন না।
ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, সংগঠনের সহ-সভাপতি জয়দেব নন্দী, আব্দুল কাদের মহিউদ্দিন মাহি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সামসুল কবির রাহাত, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, হাসানুজ্জামান তারেক, সাংগঠনিক সম্পাদক তরিকুল ইসলাম, দফতর সম্পাদক শেখ রাসেল, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আজিজুর রহমান সরকার, ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক নূরে আলম, গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক অহিদুর রহমান জয় বয়সের কারণে পরবর্তী কমিটি থেকে বাদ পড়বেন।
তবে বয়স্ক নেতাদের দাবি, তাদের বয়সসীমা যেন বাড়ানো হয়। অন্তত দুই বছর বাড়ানো হলে বর্তমান কমিটির অভিজ্ঞ নেতারাই সংগঠনের দায়িত্ব পাবেন। ফলে সংগঠনে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রলীগের নেতৃত্ব থেকে অছাত্রদের বাদ দিয়ে তরুণ, নিয়মিত ছাত্রদের নেতৃত্বে রাখার জন্যই মূলত বয়সসীমা ২৯ বছর করা হয়। কিন্তু সময়মতো সম্মেলন না হওয়াতে সে উদ্দেশ্য অনেকাংশেই ব্যাহত হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, ‘আগামী সম্মেলনের মাধ্যমে যারা ছাত্রলীগের দায়িত্বভার নেবেন, তারা অপেক্ষাকৃত অনভিজ্ঞ। বর্তমান কমিটির সহ-সম্পাদক অথবা সদস্য থেকেই কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ দুই নেতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য যারা ২৯ বছর বয়সের ক্রাইটেরিয়ায় বাদ পড়ছেন তাদের বয়স ২ বছর বাড়ানো হলে সংগঠন চাঙ্গা হতো।’
কেন্দ্রীয় কমিটিতে আবারো পদপ্রত্যাশী কিন্তু বয়সসীমার কারণে বাদ পড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন এমন একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আগামী ২৫-২৬ জুলাই ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের ২৮তম জাতীয় সম্মেলন ঘোষণা করেছে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন করা গেলে আমরাই ছাত্রলীগকে নেতৃত্ব দিতে পারতাম।’
গত ছাত্রলীগের কমিটিতেও বয়সের কারণে বাদ পড়েছিলেন বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। ২০০৬ সালের শেষের দিকে গঠিত ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন মাহমুদুল হাসান রিপন আর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন। ২০১১ সালের জুলাইয়ে ওই কমিটি সম্মেলন দেয়।
সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ওই সময় ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে বয়সের কারণে বাদ পড়েছিলেন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি শেখ সোহেল রানা টিপু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশা, সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েল, প্রচার সম্পাদক আরিফুল ইসলাম উজ্জল।
বাদ যাওয়া কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার দাবি, বর্তমানে যারা ২৯ বছর বয়সের কারণে বাদ পড়ছেন মূলত তারাই ছাত্রলীগের প্রথম সারির নেতা। বিগত সময়ে ছাত্রলীগের সাংগঠনিকসহ বিভিন্ন ঝড়ঝঞ্ঝা তারাই সামলিয়েছেন। এ কারণে সারা বাংলাদেশে সংগঠনের সকলের মধ্যে বেশ পরিচিতও হয়ে উঠেছেন তারা। তাই আগামীতে এ সব ছাত্র নেতারা নেতৃত্বে যেতে পারলে সংগঠনে একটি স্থিতিশীলতা আসতে পারত।
সংগঠনের অপেক্ষাকৃত তরুণদের হাতে নেতৃত্বের ভার দেওয়া হলে বিশৃঙ্খলা বাড়ার আশঙ্কা থাকে বলে মনে করছেন ছাত্রলীগের ওই নেতারা।
ছাত্রলীগের বিভিন্ন কমিটি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০০২ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কমিটির দায়িত্ব পালন করেন লিয়াকত শিকদার-নজরুল ইসলাম বাবু। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন বাহাদুর ব্যাপারী-অজয় কর খোকন কমিটি। ৯৪ থেকে ৯৮ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দায়িত্ব পালন করেন এনামুল হক শামীম-ইসহাক আলী খান পান্না। ব্যতিক্রম ছিল মাইনুদ্দিন হাসান চৌধুরী-ইকবালুর রহিম কমিটি। এ কমিটি ৯২ থেকে ৯৪ দায়িত্ব পালন করে দুই বছরের মাথায় সম্মেলন করে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। এরপরে আবারো কমিটি গঠনে দীর্ঘসূত্রিতা দেখা দেয়।
এ ছাড়া ১৯৮৮ সাল থেকে ৯২ সাল পর্যন্ত দুই বছরের কমিটি চার বছর পদে বহাল থাকেন। ওই কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন শাহে আলম ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন অসীম কুমার উকিল। ৮৫ থেকে ৮৮ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও আবদুর রহমান। ৮৩ থেকে ৮৫ পর্যন্ত আব্দুল মান্নান ও জাহাঙ্গীর কবির নানক কমিটি, ৮১ থেকে ৮৩ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও খ ম জাহাঙ্গীর কমিটি দায়িত্ব পালন করেন। ৭৭ থেকে ৮১ সাল পর্যন্ত দুই বছরের কমিটি দীর্ঘ চার বছর দায়িত্ব পালন করেন ওবায়দুল কাদের ও বাহালুল মজনু চুন্নু কমিটি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশা বলেন, ‘নিয়মিত সময়ে সম্মেলনের ব্যবস্থা করা গেলে তো কাউকে বয়সের কারণে বাদ যেতে হয় না। কেউ যদি বেশি বয়স নিয়ে সংগঠনের দায়িত্ব পালন করতে চায় সেটা অন্য ব্যাপার।’
তবে ২৯ বছর বয়সের বাধ্যবাধকতা রেখে নিয়মিত সময়ে সম্মেলন করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, ‘গত ৬৮ বছরে ছাত্রলীগের ২৮ বার সম্মেলন হয়েছে। বিভিন্ন কারণে সম্মেলন হতে একটু বিলম্ব হয়েই থাকে। কিন্তু তাতে সংগঠনের ওপর কোনো প্রভাব পড়ে না।’
বর্তমান ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী কমিটি হয়েছিল ২০১১ সালের ১১ জুলাই। গঠনতন্ত্র অনুসারে ২০১৩ সালের ১০ জুলাই ওই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। এর পর প্রায় ২ বছর সম্মেলন দিতে ব্যর্থ হয় সংগঠনটি। এ কারণে ছাত্রলীগের অনেক নেতা সংগঠনের নেতৃত্বে আসা থেকে বাদ পড়ছেন। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের প্রথম ভাগের ১১(খ) ধারায় বলা আছে, ‘কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কার্যকাল ২ বছর। উক্ত সময়ের মধ্যে সম্মেলন আয়োজন করতে হবে। অন্যথায় নির্বাহী সংসদের কার্যকারিতা লোপ পাবে।’দ্য রিপোর্ট
মন্তব্য চালু নেই