ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে লতিফ সিদ্দিকীর আসনে ভোটগ্রহণ চলছে
ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের উপ-নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলছে ভোটগ্রহণ। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিশালী কোনো প্রার্থী না থাকায় তেমন কোনো আমেজ নেই। ভোটারদের ধারণা আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয় নিশ্চিত।
টাঙ্গাইল জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপ-নির্বাচনে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারি (নৌকা), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) প্রার্থী আতাউর রহমান খান (টেলিভিশন) ও ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির (এনপিপি) প্রার্থী ইমরুল কায়েস (আম)।
এ আসনের মোট ভোটার ৩ লাখ ৭ হাজার ৭০০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫২ হাজার ৮৩৩ ও নারী ভোটার ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৬৭। মোট ভোটকেন্দ্র ১০৭টি, মোট ভোটকক্ষ ৬৬১টি। এ ছাড়া প্রিজাইডিং অফিসার ১০৭ জন, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ৬৬১ জন। পোলিং অফিসার ১৩২২ জন।
টাঙ্গাইল জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে আরো জানা যায়, ১০৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ৭৫টি, সাধারণ কেন্দ্র ৩২টি। গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি কেন্দ্রে ২৪ জন এবং সাধারণ কেন্দ্রে ২২ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালন করছেন। নির্বাচনে পুলিশ ১৩২৫ জন, বিজিবি ২ প্লাটুন (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) আনসার ১৪৯৮, র্যাবের ১৫টি মোবাইল টিম (প্রতিটি টিমে ২৪ জন) করে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া ২১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং দু’জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন।
জেলা নির্বাচন অফিসার এবং টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের উপ-নির্বাচনের সহকারী রিটানিং অফিসার তাজুল ইসলাম বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। প্রতিটি কেন্দ্রেই পর্যাপ্ত সংখ্যক আইশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েত রয়েছে। ভোটররা নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে এসে ভোট দিতে পারবেন।
গত ২০১৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সেখানকার টাঙ্গাইল সমিতি আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী হজ ও তাবলিগ জামাত বিষয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন। পরে তিনি দেশে ফিরে গ্রেফতার হন এবং জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয় এবং সংসদ সচিবালয় ৩ সেপ্টেম্বর তার সংসদীয় আসনটি (টাঙ্গাইল-৪) শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে। পরে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এ আসনে উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। ২০১৫ সালের ১০ নভেম্বর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়।
ওই শূন্য আসনে উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দেন আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর ভাই কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রধান কাদের সিদ্দিকী। তবে কাদের সিদ্দিকী ঋণ খেলাপি থাকায় তৎকালীন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলীমুজ্জামান ২০১৫ সালের ১৩ অক্টোবর তার মনোনয়নপত্র বাতিল বলে ঘোষণা করেন। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কাদের সিদ্দিকীর আপিল ওই বছরের ১৮ অক্টোবর ইসি খারিজ করে দিলে আবার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। এ তফসিল অনুযায়ী ২০১৬ সালের ২০ মার্চ এ আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
এরপর নির্বাচন কমিশনের মনোনয়নপত্র বাতিলের আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন কাদের সিদ্দিকী। ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র বৈধ নয় মর্মে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া সিদ্ধান্তই বহাল রাখেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে কাদের সিদ্দিকী লিভ টু আপিল করলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ তার আবেদন মঞ্জুর করেন। সেই আপিল শুনানি শেষে গত ১৮ জানুয়ারি কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এতে ভোটগ্রহণের সব বাধা কেটে যায়।
মন্তব্য চালু নেই