ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার সুযোগ

কাজী এ এইচ এস আহাসান : এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে পর্যটকদের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত স্থান হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। এখন সারা বিশ্ব থেকেই বাণিজ্য উদ্যোক্তাদেরকে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

এশিয়া প্যাসিফিক ট্রাভেল সার্ভে-২০১০ নামের এক জরিপে প্রশ্ন রাখা হয়, আগামী দুই বছরে ভ্রমণের জন্য কোন দেশকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করবেন? জরিপে অংশ নেওয়া উত্তরদাতাদের ১৭ শতাংশ বলেছেন অস্ট্রেলিয়ার নাম। প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশন (পিএটিএ) ও ভিসা কার্ডের সহযোগিতায় এ জরিপ পরিচালিত হয়। যারা গত দুই বছরে বিদেশ ভ্রমণ করেছেন বা আগামী দুই বছরের মধ্যে বিদেশ ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন এমন ১৮ বয়সোর্ধ্ব ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ওপর গত মে মাসে জরিপ পরিচালনা করা হয়। জরিপে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ছয় হাজার ৭১৪ জনকে তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়।

ভিসা কার্ডের আঞ্চলিক প্রধান রোস জ্যাকসন বলেন, `অস্ট্রেলিয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ইতিহাসের কারণে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন এ দেশটি ভ্রমণের কথা বললে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই।`

২০১৫ সালের আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচকে চতুর্থ অবস্থান অর্জন করছে অস্ট্রেলিয়া । দেশটির বিচার ব্যবস্থার মান সূচকের দিক থেকে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ। ঋণ প্রাপ্তির সূচকেও অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান ঈর্ষনীয় (১৮৯টি দেশের মধ্যে ৫ম)। ব্যাংকিং, আইনগত অধিকার, কর্পোরেট চুক্তি ক্ষেত্রে দেশটির সূচক উচ্চ। তা ছাড়াও বিশ্বের সর্বাধিক দক্ষ স্টক এক্সচেঞ্জ, পুরোমাত্রায় শক্তিশালী অর্থনীতি, ব্যাংকিং রেগুলেশন এবং এন্টিট্রাস্ট ল- এর ক্ষেত্রেও অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান গৌরবজনক।

এখন সারা বিশ্ব থেকেই ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদেরকে অস্ট্রেলিয়ায় আমন্ত্রণ জানাচ্ছে অস্ট্রেলিয় কর্তৃপক্ষ। যারা অস্ট্রেলিয়ার সুযোগ সুবিধাগুলো কাজে লাগিয়ে সেখানে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ইচ্ছা পোষণ করেন তাদের জন্য অস্ট্রেলিয়ার সরকার ব্যবসায়িক উদ্ভাবনী ও বিনিয়োগ ভিসা চালু করেছে। ব্যবসায়িক দক্ষতা সংক্রান্ত এই অভিবাসন নীতিমালা মূলত অস্ট্রেলিয়ান মাইগ্রেশন অ্যাক্ট ১৯৫৮ এবং মাইগ্রেশন রেগুলেশন ১৯৯৪-এর আলোকে তৈরি করা। অস্ট্রেলিয় আইন অনুযায়ী, শুধু অভিবাসন নিবন্ধভুক্ত প্রতিনিধিরাই এ ক্ষেত্রে আইনগত পরার্মশ দিতে পারেন। যে সকল ব্যবসায়ী অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে বাস করার জন্য আগ্রহী তাঁরা নিজেরাই আবেদন করতে পারবেন অথবা অস্ট্রেলিয় সরকারের নিবন্ধনভুক্ত অভিবাসন প্রতিনিধির মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন।

আবেদন করার শর্তাবলি:
অস্ট্রেলিয়া গমন, সেখানে স্থায়ী হওয়া এবং অস্ট্রেলিয়াকেই নিজের দেশ হিসেবে গ্রহণ করা এখন এতোটাই সহজ যে, এর জন্যে শুধু একটি আবেদনপত্র জমা দিতে হবে। বর্তমানে এই রেগুলেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী চারটি প্রধান শাখার আলোকে ১৮৮ উপশ্রেণির ভিসা আবেদন করা যেতে পারে। উপশ্রেণিগুলো হলো: ১. ব্যবসায়িক উদ্ভাবণী শাখা, ২. বিনিয়োগ শাখা, ৩. উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ শাখা, ৪. প্রিমিয়াম বিনিয়োগ শাখা। এগুলোর মধ্যে ব্যবসায়িক উদ্ভাবণী শাখাটিই বাংলাদেশি এবং ননসিটিজেনদের জন্যে সবচেয়ে সুবিধাজনক হতে পারে।

অধিকাংশ আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ভিসা আবেদনের ন্যূনতম শর্ত পুরণের জন্যে ‘ব্যবসায়িক উদ্ভাবণী’ শাখাটিই সর্বাধিক মানানসই। এই শাখার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী যে সব ব্যবসায়ী বা বিনিয়োগকারীর কমপক্ষে চার বছরের ব্যবসায়িক ও ব্যবস্থাপনাগত অভিজ্ঞতা প্রমাণিত হবে, তারাই সুযোগ পাবেন। ব্যবসায়িক উদ্ভাবণী শাখায় ভিসাপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ অস্ট্রেলিয়ায় মানসম্পন্ন ব্যবসা স্থাপন অথবা চলমান ব্যবসা ক্রয় করার সুবিধা পাবেন।

নিজ দেশে যাদের চলমান ব্যবসা রয়েছে, যাদের বার্ষিক টার্নওভার ন্যূনতম পাঁচ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার (আনুমানিক তিন কোটি টাকা ) এবং যাদের সাকুল্যে সম্পদের পরিমাণ (ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক ও স্বামী বা স্ত্রীর সম্পদ সহ) আট লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার (আনুমানকি পাঁচ কোটি টাকা ) তারা এই শাখায় ভিসা পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন। এই সম্পদের পরিমাণ পূর্ববর্তী চার অর্থ বছরের মধ্যে যে কোনো দুই বছর স্থিতিশীল থাকা প্রয়োজন। সংবিধিবদ্ধ নীতিমালা আইএমএমআই ১২/০৪১ অনুযায়ী সন্তোষজনক যোগ্যতার পয়েন্ট হচ্ছে ৬৫। ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা বা শিক্ষাগত যোগ্যতা এ ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক নয়।

আবেদন করার পদ্ধতির সার সংক্ষেপ:
ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে মনোনীত হওয়ার জন্যে এবং আবেদন জমা দেওয়ার আমন্ত্রণ পাওয়ার জন্যে আবেদনকারীকে অবশ্যই যথাযথ দক্ষতার আলোকে তার আগ্রহ ব্যক্ত করতে হবে।

আবেদনকারীকে কেন্দ্রীয় এবং আঞ্চলিক উভয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মনোনয়নের জন্যে তিনি আসলে কেন্দ্রীয় অঞ্চলে নাকি প্রান্তিক অঞ্চলে বসবাস ও ব্যবসা করতে আগ্রহী, এ বিষয়টি উল্লেখ করে আবেদন করতে হবে। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ মিলে সিদ্ধান্ত নেবে যে, তাকে কোথায় মনোনয়ন দেওয়া যায়।

আবেদনকারী তার নিজের অভিবাসনের জন্যে আবেদন করবেন কি না, তা অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন কর্তৃপক্ষই নির্ধারণ করে দেবে। আবেদনের জন্যে আমন্ত্রণ পেলে আবেদনপত্রে উল্লেখিত সময়ের মধ্যেই ভিসার জন্যে আবেদন করতে হবে।

আবেদনপত্র গৃহীত হলে আবেদনকারীকে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার জন্যে একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। এই ভিসা হবে প্রাথমিকভাবে চার বছরের জন্য। যে কোন প্রবেশ পথে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় যেতে পারবেন। পরবর্তীকালে ব্যবসায়িক উদ্ভাবণী শাখা এই ভিসার মেয়াদ নাও বাড়াতে পারে। শর্ত পূরণ সাপেক্ষে পরবর্তী সময়ে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যাবে ।

এই শ্রেণির ভিসার আওতায় অস্ট্রেলিয়ায় পূর্ণকালীন কাজ করা যাবে এবং পরিবারের সদস্যরাও অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূর্ণকালীন পড়াশোনার সুযোগ পাবে। ভিসার প্রাথমিক মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই আবেদনকারীকে প্রমাণ করতে হবে যে, তিনি একটি সফল ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন এবং আঞ্চলিক বা কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী যথেষ্ঠ পরিমাণে বিনিয়োগ করেছেন। এ পর্যায়টি সন্তোষজনক হলে তিনি দ্বিতীয় পর্যায়ে ভিসার আবেদন করতে পারবেন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যস্ত থাকার ক্ষেত্রে আবেদনকারীর পরিবারের সদস্যরাও দ্বিতীয় পর্যায়ে ভিসার আবেদন করতে পারবেন। ব্যবসায়িক ব্যস্ততার কারণে যাদের পক্ষে নিজ দেশ ত্যাগ করা সম্ভব হয় না, তাদের জন্যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা। এই শ্রেণির ভিসা অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব পাওয়ার সবরকম শর্তই পূর্ণ করে। বিস্তারিত তথ্যের জন্য http://eduaid.net/business/ এই লিঙ্কটি প্রবেশ করে ফর্ম পূরণ করুন।

লেখক: অস্ট্রেলিয়ান ইমিগ্রেশন কনসালট্যান্ট এবং সিইও, এডুএইড।



মন্তব্য চালু নেই