বৈশাখী সাজে হয়ে উঠুন অপরূপা

বছর ঘুরে আবার এলো বৈশাখ। বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানাতে প্রাণের এই মেলায় লাল-সাদার প্রাধান্য দিয়ে চলে সাজের পালা। শপিংমল থেকে শুরু করে মাঠে-ঘাটে থাকে কেনাকাটার ভিড়। কারণ বাঙালির প্রাণের উৎসব হলো বৈশাখ। পান্তা ইলিশ, লাল-সাদা শাড়ি ও পাঞ্জাবিতে সবাই যেন নিজেকে নতুন করে ফিরে পায়। নতুন রঙবেরঙের শাড়িতে দেখা যায় নারীদের। সুন্দর শাড়ি পরলেও এ উৎসবের দিনে নিজেকে অন্যভাবে সাজাবেন না তা কি হয়! তাই বৈশাখে নিজেকে কীভাবে আকর্ষণীয় করে তুলবেন তা থাকছে এ প্রতিবেদনে।
প্রত্যেকের সৌন্দর্যে একটি নিজস্বতা রয়েছে। সেই নিজস্বতা বহাল রেখে সাজগোজ করা উচিত। আর নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলার অন্যতম মাধ্যম হলো মেকআপ। বিউটি এক্সপার্ট কানিজ আলমাস খানের মতে, মেকআপ এমন একটি বিষয় যা সময়ের সঙ্গে পাল্টে যায়।
মেকআপের মাধ্যমে মুখের অনেক খুঁত ঢেকে ফেলা সম্ভব। প্রয়োজন শুধু একটু টাচ-আপের। যা আপনার সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করবে। তবে বিভিন্ন প্রসাধনী দক্ষভাবে ব্যবহার করার ওপরও নির্ভর করে। তাই বলে দিচ্ছি কিছু সহজ উপায়। যা আপনাকে করে তুলবে আরও দীপ্তিময় ও আকর্ষণীয়।
পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান শুরু হয় সকাল বেলায়। তাই হালকা ও ন্যাচারাল সাজলে দেখতে ভালো লাগবে। দিনের বেলায় বেশি সাজলে ভালো লাগে না। আর আবহাওয়ার কথাও মাথায় রাখতে হবে।
মেকআপ :
মেকআপ করার আগের দিন রাতে অবশ্যই আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী ফেসিয়াল করে নিন। আর যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে মাইল্ড ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ভালো করে ধুয়ে টাওয়েল দিয়ে হালকা করে মুছে নিন। মুখে তৈলাক্ত ভাব থাকলে মেকআপ ত্বকে বসবে না। যে কোনো ত্বকেই আপনি মেকআপ লাগাতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে জরুরি বিষয় হলো মেকআপ বেল্গন্ডিং। এরপর টোনার দিয়ে মুখের ত্বক টোন করে নিন।
ময়েশ্চারাইজার মুখে লাগান। ৫ মিনিট অপেক্ষা করে সানস্ক্রিন বা ফাউন্ডেশন লাগান। এরপর একটু অপেক্ষা করুন যাতে মেকআপের বেসটা ভালো হয়। এরপর ট্রান্সলুশান পাউডার অথবা পিঙ্ক শেডের ফেশ পাউডার পাফ করুন। এ সময় একটু বেশি পাউডার মুখে লাগাতে হবে। এরপর একটু পানি স্প্রে করে নিন। পাউডার ত্বকের সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। ঠিকমতো ত্বকে মেশানো হলে দেখতে সুন্দর লাগবে। তখন আর বেশি মেকআপ মনে হবে না। মনে হবে এটাই আপনার আসল ত্বক। পানি স্প্রে করে নিলে সারাদিন ঘাম হওয়ার ভয় থাকবে না। এরপর চিকবোন হাইলাইট করুন বল্গাসন দিয়ে। হালকা বল্গাসন যা আপনার ত্বকের রঙের কাছাকাছি যেন হয়। ফর্সা মেয়েদের ক্ষেত্রে গাঢ় রঙের বল্গাশন যেমন লাল, মেরুন গোলাপী বল্গাশন; আর যাদের গায়ের রঙ চাপা তারা বাদামি রঙের বল্গাশন লাগাতে পারেন।
চোখের সাজ :
চোখের সাজ দিতে পারেন আপনার পছন্দ মতো। ড্রেস বা শাড়ির রঙের সঙ্গে মিলিয়ে কয়েকটি কালার একসঙ্গে করে দিতে পারেন শ্যাডো। চোখকে আকর্ষণীয় করার একটি কৌশল এখানে উল্লেখ করা হলো_ চোখের মাঝখানের অংশে একটু হালকা কালার দিন। কোনার অংশে লাগান ডার্ক করে আর ওপরের অংশে লাগান সফট গোল্ড আইশ্যাডো। তবে চোখের আকৃতির দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আকৃতি অনুযায়ী শ্যাডো লাগালে চোখ দেখতে আকর্ষণীয় লাগে। শ্যাডো চোখের পুরো অংশে ভালোভাবে বেন্ড হয়ে গেলে আইলাইনার দিন। এরপর মাশকারা। আর যদি বেশি ন্যাচারাল লুক চান তাহলে আইশ্যাডো ছাড়াই ব্রাউন কাজল দিয়ে আউটলাইন করতে পারেন। চোখের নিচের পাতায় দিন কাজলের রেখা। কাজল যেন ছড়িয়ে না যায় সেজন্য চোখের নিচের পাতায় আইশ্যাডো মাঞ্চ করে দিন।
ঠোঁটের সাজ :
নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হলে কোনো খুঁত রাখা যাবে না। এক্ষেত্রে ঠোঁটের সাজও গুরুত্বপূর্ণ। এখন ট্রেন্ডি লাল রঙের লিপস্টিক চলছে। বৈশাখেও শাড়ি বা অন্যান্য ড্রেসে লালের প্রাধান্য বেশি থাকে। আর এটি এমন একটি রঙ যা সবাই ব্যবহার করতে পারে। তাই আপনিও পরতে পারেন লাল লিপস্টিক। ঠোঁটের আকৃতি অনুযায়ী লিপলাইনার দিয়ে সুন্দর করে আউটলাইন এঁকে নিন। তারপর লিপস্টিক লাগান। আর যদি ক্যাজুয়াল লুক চান, তাহলে বেছে নিতে পারেন ন্যাচারাল কালার। একবার লিপস্টিক লাগিয়ে একটু পাউডার পাফ করে আবার লিপস্টিকের ছোঁয়া দিন। তাহলে আপনার লিপস্টিক সুন্দর থাকবে।
চুল :
যদি আপনার চুল স্ট্রেট হয় তাহলে চুল খোলা রাখতে পারেন। আর যদি সারাদিনের জন্য বের হন তাহলে খোঁপা করে নিতে পারেন। চাইলে একসাইডে স্টাইল করে বেণিও করতে পারেন। চুলের স্টাইল যাই হোক না কেন বিশেষ দিনে ফুল ছাড়া চুল ভাবাই যায় না। খোঁপা হোক বা বিনুনিই হোক_ থাকা চাই ফুল। যাদের চুল লম্বা তারা বেণি, যাদের ছোট চুল তারা টার্সেল দিয়ে লম্বা বেণি করে সঙ্গে কাঁচা গোলাপ, গাঁদা, গাজরা, বেলি কিংবা জুঁই ফুলের মালা লাগাতে পারেন। যা আপনার সাজে এনে দেবে সুরভিত পূর্ণতা।
সবই তো হলো, টিপটাই বা বাকি থাকে কেন! একটা গোল টিপ পরে আনতে পারেন সাজে পূর্ণতা। যেহেতু বৈশাখ, তাই চাইলে তুলি দিয়ে হালকা ডিজাইনের মানানসই টিপও এঁকে নিতে পারেন আপনার কপালে।
গরমে ঘেমে আপনার সৌন্দর্য খানিকটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। মেকআপ গলে যায়। তাই আপনার হাতব্যাগে কিছু দরকারি প্রসাধনী রাখুন। টিস্যুপেপার, সানগল্গাস, ছাতা ও পানির বোতল নিয়ে বের হওয়া উচিত।
নিত্যনতুন যত ফ্যাশনই থাকুক না কেন বৈশাখে আমরা বাঙালিরা নিজেদের চাকচিক্য প্রকাশ করি বিভিন্ন ঘরোয়া সাজে। ফুটিয়ে তুলি নিজেদের ঐতিহ্যও। আমাদের ঐতিহ্য এবং আভিজাত্যকে ধরে রাখতে এবং এই গরমে মানসম্মত পোশাক ও সাজে নববর্ষের প্রথম দিনেই নিজেকে রঙিন করে তুলুন বিভিন্ন সাজে।

































মন্তব্য চালু নেই