বেসিক ব্যাংক ইস্যুতে সংসদীয় কমিটির মুখোমুখি দুদক
বেসিক ব্যাংকে দুই হাজার কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারি মামলার তদন্তসহ সামগ্রিক কার্য্ক্রম নিয়ে এবার অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির মুখোমুখি হচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত দল।
বেসিক ব্যাংকের অনিয়ম, দুর্নীতি ও মামলাগুলোর তদন্তের অগ্রগতিসহ সামগ্রিক বিষয় জানতে সংশ্লিষ্ট দুদক কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন বেসিক ব্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুসহ পরিচালনা পর্ষদকে কেনো মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি এবং তদন্তে তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গিয়েছে কি না তা নিয়ে নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে যাচ্ছে দুদকের তদন্ত দল।
দুদকের সচিব আবু মো. মোস্তাফা কামাল বরাবর পাঠানো ওই চিঠিতে দুদকের তদন্ত দলকে আগামী ২৮ জানুয়ারি সকাল ১১টায় উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত স্থায়ী কমিটি।
চলতি মাসের ১৭ জানুয়ারি ওই চিঠি দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠায় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়, কমিটি শাখা-৫। যার স্বারক নং হচ্ছে- ১১.০০.০০০০.৭০৫.১৪.০০১.১৪.০৪।
অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সচিব মোশতাক আহমদের সই করা ওই চিঠির সূত্রে জানা যায়, অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বিগত ১১তম বৈঠকে বেসিক ব্যাংকের অনিয়ম সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। পরবর্তী বৈঠকে বেসিক ব্যাংকের অনিয়ম ও দুর্নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনার জন্য দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি।
এ বিষয়ে সূত্রটি আরো জানায়, ১০ম জাতীয় সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কিমিটির ১৩তম বৈঠকটি গত ২১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অনিবার্য্ কারণে তা পিছিয়ে আগামী ২৮ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) সকাল ১১টায় জাতীয় সংসদের পশ্চিম ব্লকের দ্বিতীয় লেভেলের এক নম্বর স্থায়ী কমিটির কক্ষে অনুষ্ঠিত হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, অর্থমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি প্রয়োজনে যেকোন ব্যক্তিকে ডাকতেই পারে। এটা নতুন কিছু নয়।
তিনি বলেন, যেহেতু দুদক বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতি নিয়ে ৫৬টি মামলা করেছে। তাই স্থায়ী কমিটির তা নিয়ে অনেক কিছু জানার থাকতেই পারে। দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সঠিক সময়ে উপস্থিত থাকবেন।
তবে তদন্তের সঙ্গে জড়িত এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা পড়েছি উভয় সঙ্কটে। না কাউকে মুখ খুলে বলতে পারছি, না কিছু করতে পারছি। স্থায়ী কমিটির সামনে কীভাবে যে ব্যাখ্যা করবো সেটা চিন্তুা করছি’।
বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে ২০১৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর তিন দিনে টানা ৫৬টি মামলা করে দুদকের অনুসন্ধান দলের সদস্যরা। রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও গুলশান থানায় এসব মামলায় মোট আসামি করা হয় ১৫৬ জনকে। মামলাগুলোতে মোট দুই হাজার নয় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আসামিদের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা রযেছেন ২৬ জন। বাকি ১৩০জন আসামি ঋণগ্রহীতা ৫৪ প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী ও সার্ভে প্রতিষ্ঠানের। ব্যাংকার ও ঋণগ্রহীতাদের অনেকেই একাধিক মামলায় আসামি হয়েছেন।
এর মধ্যে ব্যাংকের প্রাক্তন এমডি কাজী ফখরুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে ৪৮টি মামলায়। সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া ডিএমডি ফজলুস সোবহান ৪৭টি, কনক কুমার পুরকায়স্থ ২৩টি, গ্রেফতার হওয়া মো. সেলিম ৮টি, বরখাস্ত হওয়া ডিএমডি এ মোনায়েম খান ৩৫টি মামলায় আসামি হয়েছেন।
তবে কোনো মামলায় ব্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই ওরফে বাচ্চুরসহ পরিচালনা পর্ষদের কাউকে আসামি করা হয়নি। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, সিএজি কার্যালয় ও খোদ বেসিক ব্যাংকের নানা প্রতিবেদনে এ কেলেঙ্কারির সঙ্গে প্রাক্তন চেয়ারম্যান বাচ্চুসহ অনেকের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে দুদকের কোনো মামলায় তাকে আসামি না করায় বিভিন্ন মহলে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়।
এ বিষয়ে দুদকের মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের কোনো সম্পৃক্ততা দুদকের অনুসন্ধানে আসেনি। তবে তদন্তকালে যদি তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় তাহলে জাড়িতদের পরবর্তীকালে আসামি করা হবে।
২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর মামলার তদন্তে দুদকের উপপরিচালক মোরশেদ আলম, মো. ইব্রাহিম ও ঋত্বিক সাহা, সহকারী পরিচালক শামসুল আলম, উপসহকারী পরিচালক ফজলে হোসেন ও মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীনকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। মামলার তদারককারী কর্মকর্তারা হলেন পরিচালক নূর আহম্মেদ ও উপপরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন।-রাইজিংবিডি
মন্তব্য চালু নেই