বেশি বেশি অধিকার খাটাচ্ছেন না তো?
ঘণ্টাখানেক পর পরই হয় তো ফোন দিচ্ছেন বন্ধুকে। সে কী করছে না করছে, সেগুলো টু দ্য পয়েন্টে জানা চাই। না জানলে অস্থির লাগতে থাকে। একপর্যায়ে এই বারবার ফোন করাই হয়তো বিরক্তির কারণ হয়ে উঠল বন্ধুটির জন্য। আর এ নিয়ে শুরু হলো মান-অভিমান। আপনিও বুঝতে পারলেন অধিকারবোধের বাড়াবাড়িটা হয়তো মাত্রাতিরিক্ত করে ফেলছেন। আর এতে সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে।
অধিকারবোধ মানুষের একটি স্বাভাবজাত বিষয়। তবে অধিকার বোধের বাড়াবাড়ি অনেক সময় অবস্থা বা সম্পর্কের অবনতি ঘটায়। আপনি হয়তো ভাবছেন তাকে অনেক ভালোবাসেন। তবে আপনার এই ভালোবাসার বাড়াবাড়ি অপর পাশের মানুষটির স্বাধীনতায় আঘাত হানতে পারে। আমরা কখনো কখনো ভুলে যাই যে সত্তার ওপর কখনো অধিকার খাটানো যায় না। আবার কখনো দায়িত্ববোধ থেকেও কিন্তু অধিকারবোধের জন্ম হয়। তবে এরও মাত্রা থাকা চাই। একটু ভেবে দেখবেন কোনো কিছু খুব জোর করে আসলে ধরে রাখা যায় না। বরং ছাড় দিলেই পাওয়ার সম্ভবনা বেশি।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক আহমেদ হেলাল বলেন, ‘অধিকারবোধ তখনই জন্মে যখন দায়িত্ববোধ থাকে। যার ওপর অধিকার বোধ আছে মনে হয় তার ওপরই কিন্তু আমরা দায়িত্ব পালন করি। দায়িত্ব পালন না করলে অধিকার হারায়। অধিকারবোধে বাড়াবাড়ি তখনই হয়ে যায় যখন আমরা ব্যক্তির স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করি। আসলে আগে ভাবতে হবে একটি মানুষের ব্যক্তিগত জগতে আপনি কতটুকু প্রবেশ করবেন। প্রতিটি সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি স্পেস (জায়গা) দরকার। যেমন মা যখন শিশুকে কিছু বলেন সেটি অধিকারবোধ থেকে। আবার যখন বেশি অধিকার খাটান তখন মৌলিক বিষয়গুলো নষ্ট হয়।’
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক অভ্র দাস ভৌমিক বলেন, ‘অধিকারবোধের বিষয়টি ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে। মানুষ ছোটবেলা থেকে বা জন্মগতভাবে কিছু জিনিস চায়। এটি ধর্ম, জাতি, পরিবেশ ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে। আসলে মানুষটি ছোটবেলা থেকে কীভাবে বড় হচ্ছে তার ওপরও অধিকারবোধের বিষয়টি নির্ভর করে।’
অধিকারবোধের বাড়াবাড়ি নয়
অধিকার যে ফলায় তার নিজের মধ্যে চাপ তৈরি হয় জানিয়ে আহমেদ হেলাল বলেন, ‘যে অধিকারবোধ বেশি দেখাতে চায় তার মধ্যে টানাপড়েন তৈরি হয়। নিরপত্তাহীনতা ও উদ্বেগ তৈরি হয়। এটি মানসিক চাপ তৈরি করে। এ ছাড়া যে ব্যক্তির ওপর এই অধিকার খাটানো হচ্ছে সে বের হওয়ার জায়গা খুঁজতে থাকে। ব্যক্তির ভিতর বিরক্তি তৈরি হয় তখন। কখনো কখনো বিষয়গুলো এতটাই অবদমনের পর্যায়ে পড়ে যে এ থেকে সে হয়তো আর সহজ হতে পারে না বা লুকানো শুরু করে।’
কোনো কিছুতেই বাড়াবাড়ি ভালো নয়, সেটা অধিকারের ক্ষেত্রেও নয়, এমনটা জানিয়ে অভ্র দাস ভৌমিক বলেন, ‘দেখতে হবে আমার অধিকারবোধ অবদমনের পর্যায়ে চলে যাচ্ছে কি না। যেকোনো সম্পর্কে এটা বোঝা জরুরি। কেননা দুজন দুটো ভিন্ন সত্তা।’
অধিকারবোধ কখন করতে হবে
অধিকারবোধ কখনো কখনো দেখানো প্রয়োজন জানিয়ে আহমেদ হেলাল বলেন, ‘যেখানে নিজের বা অপরব্যক্তির অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে, সেসব ক্ষেত্রে অধিকারবোধ খাটানো যেতে পারে।’
সম্পর্কের ক্ষেত্রে বুঝতে হবে কোন সময় আমি ছাড়ব আর কোন সময় ছাড়ব না। অভ্র দাস ভৌমিক বলেন, ‘পরিবেশ, ব্যক্তি ও অবস্থান ভেদে এই অধিকারবোধের চর্চা করতে হবে। একেকজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিষয়টি একেক রকম হবে। ছাড় দেওয়ার পরও যদি সে না শোনে তখন অধিকার দেখানো উচিত।’
অধিকারবোধের বাড়াবাড়ি করা ঠিক নয়, আবার অধিকারবোধ কখনো কখনো দেখানো প্রয়োজন। তাই মাঝামাঝি জায়গা থেকে অধিকারচর্চা করা মন্দ নয়। তবে অধিকারবোধ যেন অন্যকে অবদমিত না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
মন্তব্য চালু নেই