বেরোবির বধ্যভূমির বেহাল অবস্থা

বেরোবি প্রতিনিধি : বাংলাদেশের স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৫ বছর কেটে গেলেও এখনও সংরক্ষিত হয়নি মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিবিজড়িত রংপুরের দমদমায় অবস্থিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) একমাত্র বধ্যভূমি। যারা দেশের স্বাধীনতার জন্য অকাতরে প্রাণ দিয়ে গেছেন সেই বীর শহীদদের স্মৃতি বিজরিত বধ্যভূমির আজ অরক্ষিত ।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বধ্যভূমিটির দায়িত্ব নেয়ার প্রায় ছয় বছরেও নির্ধারণ হয়নি সীমানা প্রাচীর। ফলে বধ্যভূমির অনেক জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানটির সংরক্ষণ না করায় নতুন প্রজন্মের কাছে অগোচরেই রয়ে গেছে ঐতিহাসিক এই স্থানটি।
তবে সম্প্রতি বধ্যভূমিটি সংরক্ষণে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. একেএম নূর উন নবী। দ্রুত বধ্যভূমির জায়গা বেদখল এড়াতে সীমানা নির্ধারণ এবং যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হবে তিনি জানিয়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে থাকায় এবং সীমানা প্রাচীর না থাকায় সেখানে গরু-ছাগল অবাধে বিচরণ করছে। এতে একদিকে যেমন পবিত্রতা নষ্ট হচ্ছে। অপরদিকে দুইপাশে সীমানা প্রাচীর দিয়ে গড়ে উঠছে বহুতল ভবন। ফলে নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে বেরোবির একমাত্র বধ্যভূমি।
রংপুর মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয় সূত্রে জানা যায় , রংপুর-বগুড়া মহাসড়কের দমদমা ব্রিজের কাছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কারমাইকেল কলেজের ৬ শিক্ষকসহ শত শত নারী-পুরুষকে ধরে এনে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে।
সরেজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘদিন অরক্ষিত থাকার পর ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর কারমাইকেল কলেজ শিক্ষক পরিষদ সেখানে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করেন। ফলকটির চারপাশে সীমানা প্রাচীর না থাকায় গাছের গুঁড়ি ফেলে রাখা হয়েছে।

অবশেষে ২০১০ সালের ২৯ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ ও বধ্যভূমি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রথমদিকে কিছু মাটি কেটে সাইনবোর্ড টাঙানো হলেও দায়িত্ব নেয়ার প্রায় ছয় বছর পরও সেটির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়নি। এমনকি বর্তমানে সেখানে নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাইনর্বোডও। সীমানা প্রাচীর নির্মাণ না করায় পবিত্র সে স্থান আজ পরিণত হয়েছে গোচারণ ক্ষেতে।
ফলে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি নিশ্চিহ্ন হওয়ার আগেই এ বধ্যভূমিতে স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস সংরক্ষণ করা।
বধ্যভূমির সংরক্ষণ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে রংপুর বিভাগীয় বধ্যভূমি সংরক্ষণ পরিষদের সদস্য সচিব এবং বেরোবির সহযোগী অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, সংরক্ষণ না করাটা হতাশাব্যঞ্জক। এ হতাশা দূর করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোন রকম কালক্ষেপণ করা উচিত নয়।
এ ব্যাপারে কথা বললে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মো.আমিনুর রহমান জানান, বধ্যভূমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়ার পর সংরক্ষণের বিশেষ কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তবে উপাচার্যের বিশেষ নির্দেশে বধ্যভূমি সংরক্ষণের বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র বধ্যভূমিটির সংরক্ষণ সর্ম্পকে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. একেএম নূর উন নবী বলেন, নানা কারণে বধ্যভূমি সংরক্ষণ করতে পারিনি। তবে বিষয়টি নিয়ে গত ১১ ডিসেম্বর আলোচনা হয়েছে।
দ্রুতই বধ্যভূমির রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এ কে এম নূর-উন-নবী।



মন্তব্য চালু নেই