বেরোবিতে হল আধিপত্য নিয়ে ছাত্রলীগের মারামারি, আতঙ্কিত সাধারণ শিক্ষার্থীরা

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) হলে সীট আধিপত্যকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই দলের মারামারি ও সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটেছে।বুধবার রাতে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলী রাজ দলের মৃথিশ-ফাহিমের নের্তৃত্বে সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মাহমুদ দলের ইমরান ও শুভকে মারলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে রাজ গ্রুপের ফাহিম মোস্তফা দলের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ছাত্রলীগ সভাপতি ইমরানের এক ছোট ভাইয়ের কক্ষে আরেকজন শিক্ষার্থীকে উঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এর ফলে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহিম ও ইমরানের মাঝে কথা কাটাকাটি হয় এবং উভয়ের মাঝে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এরই জের ধরে বুধবার সন্ধ্যা ৭ টার দিকে সেক্রেটারি গ্রুপের ইমরান,ছাত্রলীগের সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক শুভ এবং ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আদনান পার্ক মোড়ে আসলে ফাহিমের নের্তৃত্বে দলীয় লোকজন তাদের উপর চড়াও হয় এবং মারপিট করে। এতে মোস্তফা গ্রুপের ইমরান ও শুভ আহত হয়। পরে তাদের দুইজনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

এদিকে এ খবর পেয়ে মোস্তফা গ্রুপ বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং শহীদ মুখতার ইলাহী হলের ছাত্রলীগের সদস্যদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিয়ে উত্তেজিত অবস্থায় পার্ক মোড়ে আসে এবং রাস্তায় লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে চলাচলরত যানবাহন ও দোকানগুলোতে ঢিল ও আঘাত করে । মুহুর্তেই পার্ক মোড় থেকে মর্ডানের সামনে পর্যন্ত রাস্তা ফাঁকা হয়ে যায়। ভয়ে পরিমরি করে দোকান বন্ধ করে দৌড়ে দোকানদাররা নিরাপদ স্থানে যায়। রাত ৮ টা থেকে থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে থাকলেও ৯ টা থেকে প্রায় ১০ টা পর্যন্ত পার্ক মোড়সহ রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান গ্রহণ করে।

অপরদিকে রাজ গ্রুপের ফাহিমের নের্তৃত্বে ৩০-৪০ জনের একটি সসস্ত্র গ্রুপ সর্দারপাড়া ব্রীজের উপর দেড় ঘন্টা যাবত অবস্থান নেয়। মোন্তফা গ্রুপ পার্ক মোড় থেকে অবস্থান নিয়ে চলে গেলে রাজ গ্রুপ পার্ক মোড়ে রাত ১১ টায় শোডাউন দেয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখে অতিরিক্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।

যে কোনো সময় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বারগুলোতে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। আজ থেকে বহিরাগতদের প্রবেশ রুখতে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে ঘুরতে এবং মেয়েদের হলের সামনে সন্ধ্যার পর অবস্থানের উপর কড়া নজর রাখা হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পুলিশ সদস্য।

এ দিকে ভয়ে আতংকিত হয়ে হল ছেড়ে বাইরে অবস্থান করছে সাধারণ অনেক শিক্ষার্থী। অনেকের অভিযোগ দুই দলের আধিপত্যে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোনঠাসা হয়ে পড়েছে এবং সীট ছাড়তে হচ্ছে অনেকের। দিনে দিনে এ পরিবেশ ভয়ংকররুপে অশান্ত হয়ে পড়ছে। বহিরাগতদের সীট ছাড়তে হল প্রশাসন নোটিশ দিলেও দলীয় প্রভাবের কারনে তা অনেকটাই কার্যকর হচ্ছে না বলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় শান্ত রয়েছে এবং অতিরিক্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই