বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবরের ঘুম ভাঙ্গে কুঁড়ে ঘরে

কাজী আনিছুর রহমান, রাণীনগর (নওগাঁ) থেকে: নওগাঁর রাণীনগরের বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর রক্তঝড়া স্বাধীনতার এই মাসেও তার মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা চালু না হওয়ায় রনাঙ্গনের বীরসেনানি মজিবর রহমানের অভাব অনাটনের সংসারে জীবনের শেষ মহুর্তে ঘুম ভাঙ্গে তার কুঁড়ো ঘরে। সবকিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকা সত্বেও মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা থেকে মজিবর রহমান আজও বঞ্চিত। সরকারি বরাদ্দকৃত মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকা চালু করার জন্য কর্তাব্যক্তিদের দ্বারে দ্বারে ধর্না দেওয়ার পরেও যথাযথ প্রক্রিয়ায় কাজ না হওয়ায় এক ছেলে চার মেয়েকে নিয়ে অভাব অনাটনের সংসার আর বয়সের ভারে মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান এখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। বয়সের ভারে আর শারীরিক অসুস্থ্যতার কারণে কেহ তাকে আর শ্রমিক হিসেবে নেয় না। অনেকটা লাজ-লজ্জা ত্যাগ করে স্বজন সহ কিছু পরিচিত জনের কাছ থেকে ২০/৫০ টাকা চেয়ে নিয়ে তার কোন মতে ডাল ভাত খেয়ে জীবন চলে।

১৯৭১ সালের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐত্যিহাসিক ৭মার্চ ভাষণে উদ্ধবধ্য হয়ে দেশমাতৃকাকে শুক্রর হাত থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে খুলনার দৌলতপুরে ক্রিসেন্ট জুট মিলে কর্মরত অবস্থায় চাকরি ছেড়ে পাকিস্তান আমলের প্রশিক্ষিত আনসার ব্যাটেলিয়ানের সাবেক সদস্য তৎকালিন সময়ের টগবগে যুবক মজিবর রহমান রাণীনগরে এসে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। দেশ হানাদার বাহিনীর কবল হতে মুক্ত করে স্বাধীনতার লাল-সবুজের পতাকা, সার্বভৌমত্ব, মানচিত্র, গণতন্ত্রের স্বাদ পেলেও নিজের জীবনযুদ্ধে পরাজিত এই বীর সৈনিকের এখনো প্রতিনিয়ত অভাব অনাটন আর শারীরিক অসুস্থ্যতায় তারাকরে রাত কাটে ছোট্ট কুঁড়োঘরেই। সেই ঘরটুকু অর্থ অভাবে দীর্ঘ দিন মেরামত করতে না পাড়াই প্রাকৃতিক দূর্যোগ ঝড় বৃষ্টি হানা দিলে শেষ সম্বল টুকু রক্ষা করতে পারবেন বলে মজিবর রহমান জানান। বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার প্রধান মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে রাস্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য তার হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের পশ্চিম বালুভরা গ্রামের মৃত তুমিজ উদ্দিনের ছেলে সাবেক আনসার ব্যাটেলিয়ান সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান সহ ১৭জনের নাম উল্লেখ্য করে তারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কি না তা যাচাই-বাচাই এর জন্য জেলা প্রশাসক নওগাঁ ০৭/০৭/২০১৪ইং তারিখে একটি তালিকা মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রালয় বরাবর ০৫.৪৩.৬৪.০০.১১১.১২.০২২/২০১৪/৭০৫ নাম্বার স্মারকে প্রেরণ করলে মোঃ মজিবর রহমানের গেজেট নং ৩০৬৩, তাং ৩০-০৫-২০০৬ইং, সনদ নং ম-১৬২১৮৮, তাং-২১-১২-২০১০ইং যা বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রনালয় হতে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কি না তা যাচাই বাছাই শেষে গত ১২ আগষ্ট ২০১৪ ইং তারিখে উপ-সচিব মোহাম্মদ নূর-আলমের স্বাক্ষরিত ৪৮,০০,০০০০,০২,৩৯,০০১, ১৩/২৭৪ নাম্বার স্মারকে উক্ত ১৭জনের তালিকার মধ্যে ১৪ নাম্বারে মোঃ মজিবর রহমান একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা, তার গেজেট ও সনদ সঠিক আছে বলে জেলা প্রশাসক নওগাঁকে একটি চিঠি দেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে অদ্যবদি সে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা ও অন্যান্য রাস্ট্রীয় কোন সুযোগ-সুবিধা পাননি বলে মজিবর রহমান জানান।

রাণীনগর উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ এমদাদুল হক গামা জানান, মজিবর রহমান আমার জানা মতে একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা এবং এই কাউন্সিলেরই ভোটার। সে কেন মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা পাচ্ছে না তা আমার জানা নেই।

নওগাঁ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ হারুন অল-রশিদ জানান, মোঃ মজিবর রহমান একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। গত ২০১৩ইং সালের মুক্তিযোদ্ধা ভোটার তালিকায় তার নাম রয়েছে। সে এখন পর্যন্ত কেন মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা পাচ্ছে না তা খতিয়ে দেখে অতিস্বত্বর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



মন্তব্য চালু নেই