বিয়ের তেরো বছর পর স্ত্রী পুরানো প্রেমিকের সাথে চরম পর্যায়ে, এখন কী করব?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানিয়েছেন নিজের সমস্যার কথা।
“আমার ১৮ বছর বয়সে আমি প্রথম কারও প্রেমে পড়ি, যাতে আমি ব্যর্থ হয়েছিলাম। দ্বিতীয় বার যখন প্রেমে পড়লাম তখন দেখলাম আমার প্রতি তাঁর অনেক আগ্রহ। পারিবারিক এবং মানসিকভাবে অনেক একা থাকার কারণে আমিও তাকেই আমার সবকিছু ভেবে নেই।
তারপর হঠাৎ করে আমি তাকে বিয়ের কথা বলি। আর তাতে দেখি আমার চেয়ে তার আগ্রহই বেশি। আমার পকেটে তখন বিয়ে করার মত টাকা ছিল না, সে নিজেই টাকা জোগাড় করল। আর আমিও আমার বাবা এবং বোনদের অজান্তে তাকে বিয়ে করি।
বিয়ের মাসখানেক পর আমি বিদেশ চলে যাই। দেড় বছর পর আমি দেশে ফিরে আসি। তারপর আমার পরিবারের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা করে আমি তাঁকে আমার বাড়ি নিয়ে যাই। কিন্তু আমার বাড়িতে সে থাকবে না বলাতে আমি তাঁকে নিয়ে তাঁর বাবার বাড়িতে চলে আসি।
এর কিছুদিন পর আমি জানতে পারি যে আমার সাথে পরিচয়ের পুর্বে সে অন্য কাউকে পছন্দ করত। কিন্তু আমি জেনেও সেটা না জানার মতই ছিলাম। ভেবেছিলাম আমিও তো কাউকে পছন্দ করতাম। এভাবে ঘরজামাই হয়েই আমার জীবন কাটছিল। মাঝে মাঝে সে আমার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করত। তাতে আমি ভাবতাম ভালবাসার মানুষের সাথে কেউ কি এমন ব্যবহার করতে পারে? তবুও আমি ব্যাপারটা এড়িয়ে যেতাম।
কিন্তু হঠাৎ একদিন শুক্রবার আমি বাসায় থাকা অবস্থায় স্ত্রীর মোবাইলে একটা কল আসে যা আমি রিসিভ করি। আর ফোনে সেই ছেলেটি ছিল সে, যাকে আমার স্ত্রী পছন্দ করত। তার কয়েকদিন পর আমি সেই ছেলেটিকে কল করাতে ছেলেটি আমাকে কথা দিয়েছিল যে সে আর কখনো আমার স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ রাখবে না। ছেলেটি সে বারের মত কথা রেখেছিল। আমার স্ত্রী তখন অনেক চেষ্টা করেও তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি।
কিন্তু আজ চার বছর পর সেই ছেলেটির সাথে আবার সম্পর্ক শুরু করেছে। যা অনেক চরম পর্যায়ে চলে গেছে। আমি অনেক চেষ্টা করেও তাকে ফেরাতে পারছি না। বিয়ের ১৩ বছর বয়স আমাদের। ২টা বাচ্চাও আছে আমাদের। জীবনের এই পর্যায়ে এসে আজ আমি দিশেহারা হয়ে গেছি। যার জন্য আমি আমার সবকিছু ছাড়লাম, সে কেন আমার সাথে এমন প্রতারণা করছে। কেন সে আমাকে তার জীবনে টেনে নিল? কেনই বা স্ত্রী আজ আবার তাঁর পুরনো প্রেমিকের কাছে যেতে চাচ্ছে? আমার এখন কী করা উচিৎ?”
পরামর্শ:
ভীষণ কষ্ট হলো আপনার চিঠি পড়ে ভাই। জীবন মাঝে মাঝে কিছু মানুষের জন্য এত নিষ্ঠুর হয়ে ওঠে যে কল্পনাও করা যায় না। সবদিক এলোমেলো হয়ে যায়, মনে হয় চারদিকে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই নেই। আপনার জীবনটিও এখন এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছে।
আপনার চিঠিতে একটি কথার উল্লেখ নেই, সেটা হলো আপনি কী করেন? আপনার আর্থিক অবস্থা কেমন? আর আপনি এখনো সন্তানদের সহ ঘর জামাই থাকেন? আর আপনার আর্থিক অবস্থা কি এতটুকু ভালো যে শ্বশুরবাড়ির সাপোর্ট ছাড়াও চলতে পারবেন? কারণ ভাই, হয়তো জীবনে সেই সময়টাই আসতে চলেছে।
যাই হোক, আপনার চিঠি পড়ে যেটা আমি বুঝতে পারছি সেটা হলো, আপনার স্ত্রী ঝোঁকের মাথায় আপনাকে বিয়ে করেছিলেন। তাঁর সেই কথিত প্রেমিক তাঁকে বিয়ে করেনি বা প্রতারণা করেছিল, সেই সময়ে আপনি তাঁর জীবনে এসেছিলেন। মেয়েটি তখন ভেবেছিল যে আপনিই তাঁর ভালোবাসা। কম বয়সের আবেগের মাথায় তখন হুট করে বিয়েও হয়ে যায় আপনাদের।
আপনি যেটা ভুল করেছেন ভাই, স্ত্রীর কথায় ঘরজামাই থাকতে রাজি হয়ে গিয়েছেন যা একেবারেই উচিত হয়নি। এতে স্ত্রীর কাছে আপনার গুরুত্ব কমে তো গিয়েছে অবশ্যই, একই সাথে সংসারের কোন মূল্যও আর নেই। কারণ আপনাদের নিজেদের কোন সংসারই নেই! এই কারণেই স্ত্রী আপনার সাথে কারণে-অকারণে খারাপ ব্যবহার করেন বা পরকীয়া করেন, কারণ আপনাকে হারানর ভয় তাঁর নেই। তিনি জানেন যে যত যাই হোক আপনি তাঁদের বাড়িতেই থাকবেন।
বিয়ের কিছু বছর পর এমনিতেই সংসারের প্রতি আগ্রহটা কমে যায়। সেখানে আপনার ঘর জামাই থাকা ও স্ত্রীর আগের প্রেমিকের ফিরে আসাটা তাঁকে পরকীয়া করতে উসকে দিয়েছে। এবং এখন সত্য এটাই যে কেউ যদি কারো সাথে থাকতে রাজি না হয়, তাঁকে আসলে জোর করে ধরে রাখা যায় না। স্ত্রীর যদি মনে হয় যে তিনি আপনার সাথে থাকতে চান না ও আপনাকে তালাক দিতে চান, আপনি তাঁকে জোর করে ধরে রাখতে পারবেন না। কিন্তু হ্যাঁ ভাই, হয়তো আবেগ ও একটু বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ দিয়ে ধরে রাখতে পারবেন।
একটি সত্য কথা বলি ভাই, দুই বাচ্চার মায়ের সাথে পরকীয়া করা এক জিনিস, আর তাঁকে বিয়ে করে বউ বানিয়ে নিয়ে যাওয়া অন্য জিনিস। তাই এটা হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল যে প্রেমিক কেবল প্রেমই করবেন স্ত্রীর সাথে, পরকীয়া চালিয়ে যাবেন, বিয়ে আর করবেন না। তাই আপনি নিজেই ভেবে দেখুন, আপনি কী চান? স্ত্রী সারা জীবন এভাবে পরকীয়া করে যাবে, আর আপনি তাকিয়ে দেখবেন- সেটাই কি চান? উত্তর যদি না হয়, সরাসরি স্ত্রীর সাথে কথা বলুন। তাঁকে স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিন যে সবকিছুই আপনি জানেন। স্ত্রী আপনাকে আর ভালোবাসে না, এটা নিয়ে আপনি খুব কষ্ট পাচ্ছেন। বাচ্চাদের কী হবে, সেটাও নিয়েও আপনি শংকিত। এসব বলে স্ত্রীর কাছেই জানতে চান যে তিনি কী চান? তিনি যদি বলেন যে প্রেমিকের কাছে চলে যাবেন, তাহলে যেতে দিন। কারণ আপনি যত আটকাবেন, স্ত্রীর আগ্রহ প্রেমিকের প্রতি তত বাড়বে। বরং ছাড় দিলে এটা হবার সম্ভাবনা প্রবল যে ওই লোক আপনার স্ত্রীকে গ্রহণ করবে না এবং প্রেমিকের আসল চেহারা দেখতে পেয়ে স্ত্রী অনুতপ্ত হবেন ও আপনার কাছেই ফিরে আসবেন।
শুধু এটাই নয়, আমার মনে হয় স্ত্রীর পরিবারের মুরুব্বীদের সাথেও আপনার কথা বলা উচিত। স্ত্রী ও তাঁর পরিবারকে খুব স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিন যে স্বামী হিসাবে এমন পরকীয়া মেনে নেয়া আপনার পক্ষে সম্ভব নয়। স্ত্রী যদি নিজেকে সংশোধন করতে না পারেন, আপনি সন্তানদের নিয়ে আলাদা হয়ে যাবেন। এবং যদি আসলেই স্ত্রী অন্য পুরুষকে ভালোবেসে থাকেন, তাহলে সেটা করাই উচিত হবে ভাই। কারণ এমন নারীর সাথে সংসার করে আপনি কী পাবেন? আর বাচ্চারাই বা কী পাবে? একজন পিতা চাইলে একাই বাচ্চাদেরকে সুন্দরভাবে মানুষ করতে পারে, তাই ভাই সাহস হারাবেন না।
জীবন মাঝে মাঝে আমাদেরকে খুব কঠিন অবস্থার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়, যখন হয়তো কিছু না কিছু হারাতেই হয় আমাদের। তবে অবস্থা যতই কঠিন হোক, এখন আপনাকে খুব শক্ত হতে হবে। নিজের জন্য, বাচ্চাদের জন্য। তাছাড়া আপনাকে নরম দেখলে স্ত্রী আরও পেয়ে বসবেন। তাই মনের মাঝে যাই থাকুক না কেন, শক্ত হাতে অবস্থা সামাল দিতে চেষ্টা করুন ভাই।প্রিয়.কম
মন্তব্য চালু নেই