বিশ্বে সবচেয়ে সফল মেয়রদের অজানা যত গল্প !

যে শহরের আবর্জনা সরানোর জন্য একটি গাড়ি কেনার মতো সামর্থ্য ছিল না, সেই শহরটি একসময় বিশ্বের শীর্ষ আধুনিক শহরে পরিণত হয়েছে। ভেড়া দিয়ে করেছেন বর্জ্য অপসারণের কাজ। আর লোম বিক্রি করে করেছেন অন্যান্য উন্নয়নের অর্থের সংস্থান। একপর্যায়ে বিশ্বের সবচেয়ে ভালো শহরে পরিণত হয় ব্রাজিলের কুরিটিবা। আর এই কাজ করেন ওই শহরের মেয়র জেমি লারনার। তার মতো আরও সাতজন বিশ্বের সমস্যাসংকুল বড় শহরকে আধুনিক শহরে পরিণত করেছেন।

জেমি লারনার :

১৯৭১ থেকে ১৯৭৪, ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৩ ও ১৯৮৯ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত কুরিটিবা শহরের মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন জেমি লারনার। বর্জ্য অপসারণেরকাজে ভেড়া ব্যবহারের পাশাপাশি শহরে শুরু করেন সবুজায়ন। মাথাপিছু সবুজের পরিমাণ ১ থেকে ৫২ বর্গমিটারে উন্নীত করেন তিনি। এর স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৭ সালে বিশ্বের তৃতীয় সবুজের শহরের খ্যাতি লাভ করে কুরিটিবা। আবর্জনা রিসাইক্লিং করে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। ব্যবহৃত কাগজকেই কৌশলে বাসের টিকিট হিসেবে ব্যবহার শুরু হয় তার সময়।

মাইকেল ব্লুমবার্গ :

২০০২ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে শহরের ২০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সবুজে ভরে তোলেন। শহরের ভেতরে তৈরি করেন ছোট ছোট সবুজ পরিসর। তার সময়ে শহরের ফুটপাতে ১০ লাখ গাছ রোপণ করা হয়। পুরো শহরের আবর্জনা দিয়ে পাহাড় তৈরি করে তাতে সবুজায়ন ঘটান। বর্তমানে পাহাড়টি শহরবাসীর বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। নিউইয়র্কে মানুষের মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহারের প্রবণতা বেশি। এটা নিয়ন্ত্রণে আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। নগরবাসীর স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে হাঁটার জন্য আধুনিক ফুটপাত ও বাইসাইকেল চালানোর সুযোগ তৈরি করেন।মাইকেল হপ :অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা শহরের মেয়র হিসেবে ১৯৯৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকালে শহরের ৫১ শতাংশ এলাকায় সবুজায়ন ঘটিয়েছেন। জনপ্রতি ওই শহরে সবুজের পরিমাণ ১২০ বর্গমিটার। সবুজায়নের মাধ্যমে ওই শহরে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের পরিমাণ বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। আবর্জনা ব্যবস্থাপনার স্বীকৃতি হিসেবেও ২০১০ সালে বিশ্বের সেরা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শহরের খ্যাতি পেয়েছে ভিয়েনা। এই শহরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয় পথচারীদের। এ ছাড়া গণপরিবহন ও সাইকেল চালানোকে গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন হপ।

কোভার মুর :

২০০৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরের মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন। পরিবেশবান্ধব, নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও স্বাস্থ্যসম্মত যাতায়াত ব্যবস্থার জন্য ২০০ কিলোমিটার সাইকেল নেটওয়ার্ক তৈরি করেছেন। বর্তমানে এই শহরের স্কুল, কর্মক্ষেত্র, পার্কসহ বিভিন্ন গন্তব্যে বিপুলসংখ্যক মানুষ সাইকেলে যাতায়াত করেন। বিনামূল্যে সাইকেল চালানোর প্রশিক্ষণও দিয়ে থাকে সিটি করপোরেশন। পথচারীবান্ধব রাস্তার সংখ্যাও প্রচুর।জোকো উইডোডোর :২০০৫ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার সুরাকার্তার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সুরাকার্তার গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি শহরের হকারদের জন্য নয়টি বৃহৎ মার্কেট তৈরি করেন। সুরাকার্তা শহরের প্রধান সড়কে হাঁটার জন্য তিন মিটার প্রশস্ত ফুটপাত তৈরি করা হয়েছে। শহরের মূল সড়কের সঙ্গে রয়েছে গাছ। পুরো শহরকে গণমানুষের মিলনমেলা হিসেবে তৈরি করেছেন তিনি।

এনরিক পেনলোসা :

১৯৯৮ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত কলম্বিয়ার বোগোটা শহরের মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় ৩০ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণের অর্থে ৩৮৮ কিলোমিটার বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট নেটওয়ার্ক তৈরি করে বিপুলসংখ্যক মানুষকে গণপরিবহনের আওতায় নিয়ে আসেন। ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমাতে গ্যাসের ট্যাক্স বাড়িয়ে ওই অর্থে বাসের মান বৃদ্ধি করা হয়। শহরের প্লাজাগুলোকে গণপরিসর হিসেবে পরিণত করা হয়। তার সময়ে শহরে ছোট-বড় এক হাজার ২০০ পার্ক, ৩০০ কিলোমিটার সাইকেল লেন ও ৭০০ কিলোমিটার আধুনিক ফুটপাত তৈরি হয়েছে।

লি মিউং :

দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল শহরের মেয়র হিসেবে ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে সিউল ফরেস্ট, সিউল ফরেস্ট পার্ক ও সিউল সিটি হলের সামনে সবুজ মাঠ তৈরি করেন। যাতায়াত ব্যবস্থায় বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের ব্যবস্থা করেন। তার সময়ে কংক্রিটের নগরী থেকে সবুজের নগরীতে পরিণত হয় সিউল। ২০০৭ সালে তিনি পরিবেশের নায়ক নির্বাচিত হন।

বরিস জনসন :

২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরের মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে পরিবেশ দূষণ রোধে ঘণ্টাপ্রতি ২০ পাউন্ড পার্কিং ফি নির্ধারণ করেন। লন্ডনবাসীর স্বাস্থ্যের চিন্তা করে সাইকেল চালানোকে প্রাধান্য দেন। সাইকেল চালানোর অবকাঠামো নির্মাণে এক বিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ করেন। পূর্ব থেকে পশ্চিম লন্ডনে যাতায়াতের জন্য ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সাইকেল লেনও তার সময়ে তৈরি হয়।

প্রথম প্রকাশ সুত্র-



মন্তব্য চালু নেই