বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পরাজয়ের পেছনে গোপন রহস্য !

চলতি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সম্পর্কে ব্রিটেনের প্রভাবশালী ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্ট এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশ বনাম ভারতের মধ্যে কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচটি ছিল পূর্বকল্পিত একটি পাতানো ম্যাচ। আর এর দায় চাপছে ক্রিকেটের শীর্ষ সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের ওপর। অভিযোগ উঠেছে আইসিসি’র ইশারাতেই হচ্ছে সব। তাদের অর্থের লোভেই ক্রিকেট তার শ্রী হারাচ্ছে।

এতে বলা হয়, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া ১১ তম ক্রিকেট বিশ্বকাপ কুশিলবদের প্রধান লক্ষ, বিশ্বকাপের সরাসরি সমপ্রচার হচ্ছে যে স্টার স্পোর্টস-এ তারাই ভারতীয় দলের পৃষ্ঠপোষক। ধারা বিবরণীতেও ভারতীয় সাবেক ক্রিকেটারদের অধিপত্য। ভারত যদি বিদায় হয়ে যায় তবে কি ক্ষতি হয় তা আইসিসি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে ২০০৭-এ। আর সেই ২০০৭ সালের সেই দিনটি যেন পূণরাবৃত্তি না ঘটে। এবারের ৪২টি খেলার ৭টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্য ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্টে যে বিপর্যয় ঘটেছিল তা ছিল ক্রিকেটের জন্মগত চরিত্রের প্রতিদান। এতে প্রথম ধাপেই ঐতিহ্যগতভাবে দারিদ্রতাড়িত ভারতীয় দলের ছিটকে পড়ায় যে বিপর্যয় হয়েছিল তাতে তারা বাণিজ্যিকভাবে চরম ক্ষতির শিকার হয়। সেখান থেকে চতুর শিক্ষা নিয়ে এবারের ম্যাচকে সাজানো হয়েছে। ক্রিকেট এখন আর নিছক কোন খেলা নয়। ক্রিকেটও আজ পণ্য। অর্থ আয়ের মেশিন। মানুষের আগ্রহকে পুঁজি করে ক্রিকেটের সব আজ বাণিজ্যিকীকরণ করা হয়েছে। সোয়াশ’ কোটি লোকের দেশ ভারত বিশ্বের সব বড় বড় প্রতিষ্ঠানের উত্তম বাজার।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৭ সালে ভারতীয় দল শোচনীয়ভাবে পরাজয় গ্রহণ করে মাঠ থেকে বিদায় নিলে ক্রিকেট ভক্তরা খেলা দেখার আগ্রহ হারিয়ে টেলিভিশন বন্ধ করে রাখে। একশত ত্রিশ কোটি লোকের দেশ ভারত বিশ্বের সব বড় বড় প্রতিষ্ঠানের উত্তম বাজার। ফলে ব্রডকাস্টার ব্যবসায়ীদের হাজার কোটি ডলার লোকসান হয়। কারণ খেলার দর্শক না থাকায় তারা বিজ্ঞাপন পায়নি তারা। অন্যদিকে ভারতীয় চক্রান্তকারী রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীরা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক। ব্যবসায়ীরা যেমন বিজ্ঞাপন দিয়ে ব্যবসা করে তেমনি রাজনীতিককরাও মানুষের আবেগকে নিয়ে রাজনীতি-ব্যবসা করেন। এবারের বিশ্বকাপে একটি লক্ষণীয় দিক ছিল ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা সর্বত্রই ক্রমবর্ধমান দেখা গেছে। বিশ্বজুড়ে বিশ্বকাপের সরাসরি সমপ্রচার হচ্ছে যে স্টার স্পোর্টস-এ তারাই ভারতীয় দলের পৃষ্ঠপোষক। ধারা বিবরণীতেও ভারতীয় সাবেক ক্রিকেটারদের অধিপত্য। ভারত যদি বিদায় হয়ে যায় তবে কি ক্ষতি হয় তা আইসিসি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে ২০০৭-এ। ৫০ শতাংশের কম আয় হয় তাদের।

সবদিক টার্গেট করে চলতি বিশ্বকাপের ফাইনালে দুটি বৃহৎ দলের লড়াই নিশ্চিত করা হয় পূর্ব পরিকল্পনামাফিক। সে অনুযায়ী হিসেব নিকেশ করেই একটি নিখুঁত ডিজাইনও করা হয়।

মূলত ভারতীয় দল হেরে গেলে ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির শিকার হয় এবং রাজনীতিকরা ভীষণভাবে অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়েন। অর্থাৎ উভয়ের স্বার্থের জায়গা একই। আর তা হচ্ছে মানুষের নিরীহ আবেগ। দেশটির অভ্যন্তরীন ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নানা সমস্যা আড়াল করতেই ক্রিকেটকে মওকা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দেখা যায় খেলার বিজয়ে রাষ্ট্রের শীর্ষ কর্তারা এমনকি প্রধানমন্ত্রীও হর্ষ-উল্লাস করেন। গুটিকয়েক বিজনেজ গ্রুপ এবং রাজনীতিক বনে যাওয়া কতিপয় ছাড়া সাধারণ সরল মানুষ লাভবান না হলেও মানষিক উত্তেজক এই ক্রিকেট বিশ্ব জুড়েই বিশাল একটি জনগোষ্ঠির মধ্যে উন্মাদনা সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছে। রাজনীতিক ও বিজনেজ গ্রুপই এর পিছনের কুশীলব। উন্নত বিশ্বে খেলার উল্লাস খেলার মাঠ পর্যন্ত এবং গণমাধ্যমে সীমাবদ্ধ থাকে। কর্মস্থল, হাট-বাজারে, যাত্রী পরিবহনে, আড্ডায় বা অন্য কোথাও দেখা যায় না। নানা সমস্যা জড়িত দেশগুলো কেবল এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।

এক জরিপে দেখা যায়, ভারতে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ক্রিকেট ভক্ত রয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশের বয়স ২৫ বছরের নিচে। তবে নিউজিল্যান্ডের অধিকাংশ মানুষই রাগবি খেলা পছন্দ করে। পরবর্তী ফাইনাল খেলায় প্রধানত ভারতীয়রাই হবে সর্বাধিক দর্শক।
প্রতিবেদনে বলা হয়, হাজার বছরের জরাজীর্ণ অর্ধনগ্ন বসনে অভ্যস্থ অপুষ্টিতে ভোগা কাতর জাতি ভারতীয়দের ক্রিকেট চর্চা দিনদিনই বেড়ে চলেছে। ক্রিকেট মূলত পুষ্টিতে ভরপুর দেশের অভিজাত সমাজের মানুষের অবসরের বিনোদন মাত্র।



মন্তব্য চালু নেই