বিলুপ্তির পথে সন্ধ্যারই বাঁশঝাড় !
ঠাকুরগাওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার সুনাম ধন্য গ্রাম হিসেবে পরিচিত সন্ধ্যারই বাঁশের জন্য বিখ্যাত। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল মানচিত্রের উত্তর কোণে সন্ধ্যারই গ্রামের ভিতরে মেঠো পথের দু’পাশ ঘিরে শুধু বাঁশ আর বাঁশ। চোখ জুড়িয়ে যায় এমন প্রাকৃতিক পরিবেশ চোখে দেখেলে। চোখ যে দিকে ঘুরে মনে হবে আফ্রিকার কোন এক জঙ্গলে গাঢ়ো সবুজ বর্ণের বিচিত্র সব বাঁশ।
জানাযায়, সন্ধ্যারই এর মানুষের উচু জমি গুলোতে বাঁশের চাষ বেশ ভালো এবং কৃষকেরাও লাভবান হয়েছে অনেক। এ এলাকায় বেশ নামধারী কয়েকজন সবার পরিচিত বাঁশ চাষী রয়েছেন, তার মধ্যে এমনি একজন আব্দুর রহিম (ঘোগলা) যার বয়স প্রায় ৮০।
প্রতি সপ্তাহে বুধবার রাণীশংকৈলে বাঁশের বাজার বসে। বছরের প্রতি সপ্তাহে তিনি বাঁশ বিক্রি করেন পাইকারী দরে। তার নেশা ও পেশা বাঁশের যত্ন নেওয়া। তার সাথে কথা বলে জানা যায় এ এলাকাতে এমন কোন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না যার নিজস্ব বাঁশ ঝাড় নেই। তিনি আক্ষেপের সাথে বলেন, বাঁশ ঝাড়ের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বনবিভাগ কিংবা কৃষি অধিদপ্তরের কোন সহযোগিতা তিনি পাননি।
তিনি বলেন, প্রায় ১০ একর জমিতে বাঁশ চাষ করে আসছি স্বাধীনের অনেক আগে থেকে। কোনদিন কারো সহযোগীতা কিংবা পরামর্শ পাইনি।
বাঁশ কৃষকেরা সঠিক পরিচর্যার অভাবে বাঁশ আবাদ করে লাভবান হতে পারছেন না। এলাকার অনেক বাঁশ ঝাড় প্রায় বিলুপ্তির পথে। যে বাঁশ শিল্পের মাধ্যমে সাধারণ দরিদ্র মানুষের জীবন জীবিকা অতিবাহিত হচ্ছে। পেটে দু বেলা দুমোঠো ভাত জুটছে এমন একটি শিল্প প্রায় ধ্বংসের পথে।
বাঁশ দিয়ে হরেক রকমের কারুপণ্য তৈরী করে দরিদ্র পরিবারের একমাত্র উপার্জন যা দিয়ে তৈরী হচ্ছে বইয়ের সেলফ, মোড়া, কুলা, ঝুড়ি, চাটাই, মাছ ধরার পোলো, হাঁস-মুরগির খাচা, শিশুদের ঘুমানোর দোলনা প্রভৃতি। যে সমস্ত এলাকাতে এখনও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নেই সে সমস্ত এলাকাতে হাত পাখার কদর নিতান্তই ভুলার নয়। মুলত এসব পেশায় যারা জড়িত তাদের মধ্যে অধিকাংশই আদিবাসী।
সন্ধ্যারই এর অনেক পুড়নো ঐতিহ্য বাঁশ ঝাড় শুধু নয়, বাঁশ শিল্পকে ধরে রাখতে হলে সাধারণ দরিদ্র মানুষের কথা ভেবে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এমনটি আশা করেন এ এলাকার মানুষ।
মন্তব্য চালু নেই