বিভক্ত বিএনপির শীর্ষ নেতারা
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও মহান শহীদ দিবস উপলক্ষে শ্রদ্ধা জানাতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শহীদ মিনারে যাওয়ার পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে দলটির শীর্ষ নেতারা। শহীদ মিনারে না গেলে ভবিষ্যতে তা বিএনপির জন্য নেতিবাচক প্রভাব হয়ে দেখা দেবে বলে মনে করছেন একটি পক্ষ। অন্যদিকে বিএনপি প্রধান রাজনৈতিক কার্যালয় ছাড়লে চলমান আন্দোলন থেকে দল ছিটকে পড়বে বলে মনে করছেন অপর অংশ। সেজন্য শহীদ মিনারে খালেদা জিয়ার যাওয়ার বিরোধিতা করছেন তারা।
দলীয় বিভিন্ন মাধ্যম বলছে, এখন পর্যন্ত খালেদা জিয়ার শহীদ মিনারে না যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারণ বিএনপি চেয়ারপারসন ঘোষিত অনির্দিষ্টকালের অবরোধ চলছে। অবরোধ-হরতালের বিএনপি প্রধান কর্মসূচি ভঙ্গ করে কখনো বের হন না। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর সঙ্গে অতীতে এই কারণেই সাক্ষাৎ করেননি খালেদা জিয়া। ৫ জানুয়ারির আগে হরতালের কর্মসূচির কারণে গণভবনে যেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেলিফোন দাওয়াতও গ্রহণ করেননি তিনি। তাই বিএনপি প্রধানের নীতি অনুযায়ী, শহীদ মিনারে যেতে হলে তাকে আগে অবরোধ শিথিল বা স্থগিত করতে হবে। আর এই মুহূর্তে কর্মসূচিতে বিরতি টানার নৈতিক কোনো সিদ্ধান্তই নেই দলের।
সূত্রের দাবি, বর্তমান খালেদা জিয়ার ‘সুবিধাজনক’ অবস্থান ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে শহীদ মিনারে না যাওয়ার পক্ষে মত দিচ্ছেন দলের শীর্ষ নেতাদের একটি অংশ। যুক্তি হিসেবে তারা বলছেন, এই মুহূর্তে বিএনপি প্রধান রাজনৈতিক কার্যালয় ছাড়লে সরকার কার্যালয়ে ফেরার পথ রুদ্ধ করে দেবে। সেক্ষেত্রে বিএনপি চেয়ারপারসনকে তার বাসভবনে ফিরে যেতে হবে। এতে গত বছরের ৫ জানুয়ারির আগের প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হবে। নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হবে। কোনো প্রকার দিক নির্দেশনা দিতে পারবেন না তিনি। এ ছাড়া বাসভবনেও একা হয়ে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়তে পারেন বিএনপি প্রধান। এ অবস্থায় কার্যালয়ে অবস্থান করাকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। কার্যালয়ে অবস্থান করে শহীদ মিনারে একটি প্রতিনিধি দল পাঠাতে বিএনপি চেয়ারপারসনকে পরামর্শ দিয়েছেন দলের নীতিনির্ধারকদের ওই অংশ।
এদিকে দলের অপর অংশ শহীদ মিনারে যাওয়ার পক্ষে তাদের অবস্থান বিএনপি প্রধানকে জানিয়ে দিয়েছেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এই স্পর্শকাতর দিনে শহীদ মিনারে না গেলে এর জন্য ভবিষ্যতে দল কতটা ক্ষতিগ্রস্থ হবে তা বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে তুলে ধরেছেন তারা।
সূত্র জানায়, দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্য দক্ষিণবঙ্গের এক প্রভাবশালী জ্যেষ্ঠ নেতা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর বিএনপি চেয়ারপারসনকে শহীদ মিনারে যাওয়ার পক্ষে তার জোরালো যুক্তি ও মতামত তুলে ধরেছেন। দলের এই অংশ মনে করে, স্পর্শকাতর একুশে ফ্রেব্রুয়ারিতে অতীতের মতো দলের প্রধানের শহীদ মিনারে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে যাওয়া উচিত। তাদের মতে, এই ‘ভুল’ করলে ভবিষ্যতে ভোটের হিসেবে দলকে চরম মূল্য দিতে হবে। তা ছাড়া বিএনপির প্রতি সরকারের আঙ্গুল তোলার একটি অস্ত্রও তুলে দেওয়া হবে। তাই শহীদ মিনারে যেতে বিএনপি প্রধানকে পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
তবে বৃহস্পতিবার বিকেলে দলের যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রতি বছরের ন্যায় এবারো মহান একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির পক্ষ থেকে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও পুস্পার্ঘ্য অর্পণ করা হবে।’
বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীকে শনিবার প্রথম প্রহরে রাজধানীর বলাকা সিনেমা হলের সামনে একত্রিত হয়ে শহীদ মিনারের উদ্দেশ্যে গমনের জন্য অনুরোধ করেন তিনি।
এই বিবৃতিতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া শহীদ মিনারে যাবেন কি না সে ব্যাপারে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়নি। বিএনপি প্রধান না গেলে দলের কোন নেতাদের নেতৃত্বে বিএনপি শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাবে সে ব্যাপারেও কিছু জানানো হয়নি। তা ছাড়া মাতৃভাষা দিবসে অতীতে বিএনপি যেভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সেই বিষয়টিও বিবৃতিতে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে তার কার্যালয়ে অবস্থান করা প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধিদল ২১ ফেব্রুয়ারি প্রভাত ফেরিতে অংশ নেবে। ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) যাওয়া নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। শিগগিরই এ বিষয়ে জানানো হবে।’
মন্তব্য চালু নেই