বিনা মূল্যে পাউরুটি বিতরণ করেন যে দোকানদার

আহমেদ শরীফ : রাশিয়ার ভ্লাদিমির ওবলাস্ট এলাকার ছোট্ট শহর স্ট্রুনিনো। এখানে প্রায় ২০০ মানুষের বসবাস। গত ৮ বছর ধরে ওই এলাকার মানুষের পাউরুটি কিনে খেতে হয় না। একটি মুদি দোকানের মালিক বিনা পয়সায় রুটি বিলি করেন সবাইকে।

২৫ বছর আগে আর্মেনিয়া থেকে মামুদ শাভারশায়ান নামে এক ব্যক্তি রাশিয়ায় আসেন। ব্যবসা শুরুর আগে ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন তিনি। স্ট্রুনিনো শহরের অন্য সব স্টোরের মতোই তার স্টোরটি। তবে ৮ বছর আগের একটি ঘটনা মামুদকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। তিনি দেখতে পান- বয়স্ক এক নারী মাত্র দুই পিস পাউরুটি কিনতে তার কাছে থাকা সব কয়েন গুণছেন। দুই পিস পাউরুটি কেনার কয়েন না থাকায় ওই নারী বেশ বিব্রত ছিলেন। তাকে আশ্বস্ত করে মামুদ বিনা মূল্যেই তাকে রুটি দিয়ে বিদায় করেন। সে দিনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন পেনশনে থাকা লোকদের বিনামূল্যে রুটি বিলি করবেন। এর পর কুপন ছেপে তা পেনশনারদের জন্য দেন মামুদ। আর স্থানীয় পত্রিকাতে বিজ্ঞাপন দিয়ে তার এই উদ্যোগের কথা জানান। এরপর অক্ষম লোকদের, কম অর্থে চলা বড় পরিবারের জন্য ও দরিদ্রদের জন্য বিনা মূল্যে রুটি বিলি করার কাজ শুরু করেন মামুদ। এই খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আশে পাশের গ্রামগুলোতে। অন্য গ্রামের দরিদ্ররা তাই ছুটে আসেন এই স্টোরের কুপন সংগ্রহ করে বিনা মূল্যে পাউরুটি পেতে।

‘এরিক’ নামের ওই স্টোর থেকে প্রতি মাসে প্রায় ২ হাজার সাদা পাউরুটি ও ১ হাজার কালো পাউরুটি বিলি করা হয়। এ ছাড়া স্টোরটি থেকে আশেপাশের কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ও হলিডেতে কুপন নিয়ে আসা লোকদের মাঝে জিনজার ব্রেড বিতরণ করা হয় বিনা মূল্যে। তবে উপকার করলে বেশিরভাগ মানুষ উল্টো তার প্রতিদান দেয়। মামুদের বেলাতেও তা-ই হচ্ছে। বেচারা রাশিয়ান নয় বলে স্থানীয়রা, যারা তার কাছ থেকে বিনা মূল্যে রুটি নিচ্ছে, তাদের বেশিরভাগই তাকে সরকারের অর্থ আত্মসাৎকারী বলে অপবাদ দিচ্ছে। রুটি হাতে নিয়েই অনেককে উদ্ধত ভঙ্গিতে বলতে শোনা গেছে- ফ্রি রুটি বিলি করার অধিকার একমাত্র প্রেসিডেন্ট পুতিনের। মামুদ নাকি অন্য কোনো কারণে এই সহায়তা করছেন। যারা বিনা মূল্যে রুটি নিচ্ছেন, তাদের মাত্র ১০ শতাংশের মতো মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বলেই জানান মামুদের স্ত্রী।

তবে এ নিয়ে মামুদের কোনো দুঃখবোধ নেই। তিনি বলেন, ‘দয়ার বিষয়টি শুধুমাত্র স্রষ্টাই স্বীকৃতি দেন, মানুষ না।’

স্থানীয়রা তার এই উদারতাকে নেতিবাচকভাবে দেখায় তার পরিবারের লোকেরা অনুতপ্ত। তবে মামুদ তার স্ত্রী ও দুই মেয়েকে বলেছেন, ‘এ লোকদের কখনো কেউ এভাবে সহায়তা করেনি। তাই তারা উদারতা বুঝতে পারে না, ক্ষুব্ধ তারা। আমি তাদের ধন্যবাদ বা স্বীকৃতির আশা করি না। শুধু চাই তারা সুন্দর জীবন যাপন করুক।’

সত্যি, মানব সেবা করাও যে এখন বিতর্কের জন্ম দেয় তার আরেকটি প্রমাণ পাওয়া গেলো মামুদের এই ঘটনায়।



মন্তব্য চালু নেই