বিদায় ডেভিড ময়েস
অভিমানের কালো মেঘ বেশ কিছুদিন ধরেই জমছিল ওল্ডট্রাফোর্ডের আকাশে। সেই মেঘ এবার শুধু বৃষ্টি নয়, ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিল। যেই ঝড়ে উড়ে গেলেন স্কটিশ কোচ ডেভিড ময়েস। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের অবসরের পর তিনি দায়িত্ব পেয়েছিলেন ইংল্যান্ড তথা ইউরোপের অন্যতম সেরা ক্লাবটির। এর মাঝে সমর্থকদের জন্য ন্যূনতম আশার আলো দেখাতে পারেননি। তাই ছয় বছরের চুক্তিবদ্ধ হলেও ১০ মাসের ব্যবধানে সেই দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত হলেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে একের পর এক ব্যর্থতায় ক্লাব কর্তৃপক্ষ আর সমর্থকদের শুধু হতাশই করেছেন। সবশেষ এভারটনের বিপক্ষে হারে পরবর্তী মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলার দৌড় থেকেও ছিটকে পড়ে ম্যানইউ। তারপর থেকেই ইংলিশ গণমাধ্যমে জোরেশোরেই বাজতে থাকে বিদায়ের সানাই। সেই বাজনার সঙ্গে এবার সুরের মূর্ছনাও যোগ হলো। ময়েস বরখাস্ত হওয়ার পর তার উত্তরসূরি নিয়েও গুঞ্জন শুরু হয়েছে। ক্লাবটির খেলোয়াড় কোচ রায়ান গিগস মৌসুমের বাকি সময়ের জন্য অন্তর্বর্তী দায়িত্ব পাচ্ছেন।
মঙ্গলবার ক্লাবের এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান এড উডওয়ার্ডের সঙ্গে বৈঠক করেন ময়েস। সেখানেই ক্লাবের সিদ্ধান্ত তাকে জানিয়ে দেয়া হয়। দায়িত্ব পালনকালে সহযোগিতার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান ৫০ বছর বয়সী এই কোচ। অপরদিকে তার অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য ক্লাব কর্তৃপক্ষও ধন্যবাদ জানায়। এ সবই আসলে সৌজন্যতা ছাড়া আর কিছুই নয়। টানা ২৬ বছর দায়িত্ব পালনের পর গত মৌসুমের শেষে অবসরে যান ফার্গুসন। তার পরামর্শেই অনেকটা অখ্যাত এই স্কটিশকে নিয়ে আসা হয় ওল্ডট্রাফোর্ডে। যদিও প্রিমিয়ার লিগেরই অপর একটি ক্লাব এভারটনে ১১ বছর কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ময়েস। তথাপি কোচ হিসেবে নিজের কোনো বিশেষত্ব এর আগে দেখাতে পারেননি।
মৌসুমের শুরুতে ইউরোপের নামিদামি কোচদের দৃষ্টি ছিল ওল্ডট্রাফোর্ডের দিকে। কে হচ্ছেন ফার্গুসনের উত্তরসূরি সেদিকে তাকিয়েছিলেন অনেকেই। তবে সবাইকে হতাশ করে তখন ডেভিড ময়েসকে নিয়োগ দিয়েছিল ম্যানইউ। মৌসুমের শুরু থেকেই তার সক্ষমতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন। দলবদলে যেমন কোনো চমক দেখাতে পারেননি তেমনি মাঠেও সাফল্যের স্বাক্ষরও রাখতে পারেননি। তবে ক্লাব কর্তৃপক্ষ শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন। আরও সময় দেয়ার ন্যূনতম সুযোগ তাকে দিতে চেয়েছিল ক্লাব কর্তৃপক্ষ। প্রায় দুই দশক পর যখন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলার সুযোগ হারায়, তার পরই সেই নীরবতা ভাঙে। এভারটনের কাছে হারের পর হঠাত্ করেই গণমাধ্যমে সরব হতে থাকে ময়েসের বরখাস্ত হওয়ার সংবাদ। শীর্ষ ইংলিশ অনলাইনগুলো জানিয়ে দেয় খুব দ্রুতই বরখাস্ত হচ্ছেন তিনি। তবে গণমাধ্যমের এই আশঙ্কা কখন সত্যতায় রূপ নেয় সেই অপেক্ষা চলছিল। সেই প্রহরটা দীর্ঘ হলো না, মঙ্গলবার ভোরেই নিশ্চিত হয়ে যায় মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই চলে যেতে হচ্ছে ময়েসকে। আগামী শনিবার ঘরের মাটিতে নরউইচ সিটির বিপক্ষে খেলবে ম্যানইউ। ধারণা করা হচ্ছে সেই ম্যাচের আগেই গিগসের কাঁধে দায়িত্ব তুলে দেয়া হবে।
ক্লাবের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্তের পর আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়া হয়নি। তবে মঙ্গলবার ক্লাবের টুইটার পেজে একটি পোস্ট দেয়া হয়। যাতে বলা হয়, ‘কর্মচাঞ্চল্য, সততা ও দায়িত্বশীল ভূমিকার জন্য আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাই।’ ময়েসের বরখাস্তের পরই ওল্ডট্রাফোর্ডের উত্তরসূরির তালিকায় অনেক নামিদামি কোচের নাম আসতে শুরু করেছে। যার মধ্যে আছেন নেদারল্যান্ডস কোচ লুই ভন গল, বরুসিয়া ডর্টমুন্ড বস ইয়ার্গেন ক্লপ, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ম্যানেজার দিয়েগো সিমিওনে ও প্যারিস সেইন্ট জার্মেইর ম্যানেজার লঁরা ব্ল্যাঁ।
প্রিমিয়ার লিগের পয়েন্ট তালিকায় এখন সপ্তম স্থানে আছে ম্যানইউ। প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে আছে দলটি। প্রায় দুই দশক পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার সুযোগ পাচ্ছে না। শেষবার ১৯৯৫ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের বাইরে ছিল ম্যানইউ। এবার লিগের ছয়টি হোম ম্যাচে ইতিমধ্যে হেরেছে। এফএ কাপের সোয়ানসি সিটির কাছে এফএ কাপেও ঘরের মাটিতে হারে রেড ডেভিলসরা। সান্ডারল্যান্ডের কাছে হেরে ক্যাপিটাল ওয়ান কাপের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় হয়।
মার্চে কিছু সমর্থক অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে খেলায় একটা বার্তা দিয়েছিলেন ময়েসকে। মাথায় দলীয় পতাকা বেঁধে একটা ব্যানার বহন করেন, যাতে লেখা ছিল, ‘ভুল ব্যক্তি…..ময়েস চলে যাও।’ ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে কোচ ছাঁটাইয়ে সবচেয়ে বিখ্যাত ক্লাব চেলসি। ম্যানচেস্টার সিটির মতো দলও গত মৌসুমে রবার্তো মানচিনিকে বরখাস্ত করে। তবে এই সংস্কৃতি দীর্ঘদিন চর্চা করেনি ম্যানইউ। ক্লাবটির ইতিহাসে তৃতীয়বারের মতো কোচ বরখাস্তের ঘটনা ঘটল। যার মধ্যে প্রথম ঘটনাটি ছিল ১৯৭০ সালে। যখন উইলফ ম্যাকগিনেসকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। সর্বশেষ ১৯৮৬ সালের ৬ নভেম্বর ওল্ডট্রাফোর্ডে কোচ ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটে।
অবশ্য গণমাধ্যমে যখন ঝড় বইছিল তখনও যেন মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন ডেভিড ময়েস। এভারটনের বিপক্ষে হারের পরও এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তবে খেলায় যে দলটির উন্নতি হচ্ছে সেই যুক্তি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
মন্তব্য চালু নেই