বিচারক নিয়োগ: খালেদার আবেদন খারিজ
দুটি দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনকারী বিচারকের নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ রোববার এই আদেশ দেয়।
গত বৃহস্পতিবার এ দুই আবেদনের শুনানি শেষ হয়। আদেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ডিসমিসড’।
ঢাকার বিশেষ জজ-৩ বাসুদেব রায় গত ১৯ মার্চ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপস্থিতিতে ‘জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট’ ও ‘জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট’ দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠন করেন।
এরপর ওই বিচারকের নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে এই আবেদন দুটি করেন খালেদা। সেগুলো হাই কোর্টে খারিজ হলে তিনি আপিল বিভাগে আসেন।
আদেশের সময় খালেদার আইনজীবী হিসাবে আদালতে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, এ জে মোহাম্মদ আলী, খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন ও মো. আসাদুজ্জামান।
রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলার শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তার সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও মো. মমতাজউদ্দিন ফকির। দুদকের পক্ষে ছিলেন মো. খুরশীদ আলম খান।
আদেশের পর অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, “আদালত দুটি আবেদন খারিজ করেছেন। আমরা মনে করি, এ আবেদনে এখনও কিছু আইনগত বিষয় আছে যার নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন।
“এ কারণে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনা করে এ আদেশ পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য আবেদন করতে পারি।”
তিনি বলেন,নিম্ন আদালতে বিচারাধীন খালেদা জিয়ার ওই দুটি মামলা নিয়ে আরো দুটি আবেদন আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।
“আবেদন দুটির নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রম চলতে পারে না বলে আমরা আবেদন করব।”
অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, “তাদের দুই লিভ টু আপিল খারিজ হয়ে গেছে। মামলা দুটির কার্যক্রম চলতে বাধা নেই। অন্য আবেদনের কথা বলা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আপিল বিভাগের কোনো স্থগিতাদেশ নেই।”
‘বিচার বাধাগ্রস্ত করতে’ খালেদার আইনজীবীরা এ সব করছেন বলেও মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
‘জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট’ ও ‘জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট’ মামলায় অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেও খালেদা হাই কোর্টে দুটি রিভিশন আবেদন করেছিলেন, যেগুলো হাই কোর্টে খারিজ হয়। হাই কোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে করা খালেদার আবেদন বর্তমানে আপিল বিভাগে বিচারাধীন।
‘জিয়া দাতব্য (চ্যারিটেবল) ট্রাস্ট’ ও ‘জিয়া এতিমখানা (অরফানেজ) ট্রাস্ট’ নামে দুদকের এই দুই মামলা বাতিলের জন্যও হাই কোর্টে এসেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। কিন্তু তার ওই আবেদনও খারিজ হয়। এ বিষয়ে তার আপিল আবেদন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
দুদকের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ ২০১১ সালের ৮ অগাস্ট ‘জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট’ দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয় ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি।
তেজগাঁও থানার এ মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টে অনিয়মের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় অন্য মামলাটি করা হয়। ২০১০ সালের ৫ অগাস্ট এ মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হয়।
এতিমদের সহায়তার জন্য একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে এ মামলায়।
পুরান ঢাকার বকশীবাজার এলাকায় আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আদালতের বিশেষ এজলাস বসিয়ে এই দুই মামলার বিচার চলছে। তবে আপিল বিভাগে শুনানি কথা বলে সেখানে আসামিপক্ষ কয়েকবার সময় নিয়েছেন।
জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টের মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা ও তার ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে। আর জিয়া চ্যারিটেবল (দাতব্য) ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে আসামি হিসাবে রয়েছেন আরও তিনজন।
এতিমখানা ট্রাস্ট মামলার অন্য আসামিরা হলেন- বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং প্রয়াত জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
এদের মধ্যে সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আছেন জামিনে। তারেক উচ্চ আদালতের জামিনে দেশ ছাড়ার পর গত ছয় বছর ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। এ মামলায় তাকে পলাতক দেখানো হয়েছে।
দাতব্য ট্রাস্ট মামলার অন্য আসামিরা হলেন- খালেদার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
এদের মধ্যে মামলার শুরু থেকেই পলাতক হারিছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। খালেদাসহ বাকি দুই আসামি জামিনে রয়েছেন।
মন্তব্য চালু নেই