বিখ্যাত শিল্পীদের অনাহারে মৃত্যু
জীবন সবসময় পরিকল্পনা মাফিক চলে না। উত্থান আর পতনের খেলায় ব্যস্ত জীবন কখনো টেনে নিয়ে যায় গভীর অন্ধকারে, আবার কখনো আলোকের সন্ধানে। কিন্তু এমন যদি হয়, কেউ কেউ গোটা জীবন ধরে শুধু আলোই ছড়িয়ে গেছেন কিন্তু জীবন তাদের উপহার দিয়েছে শুধুই দারিদ্রতা আর অনাহার, তাহলে কেমন হয়। বাংলামেইলের পাঠকদের কাছে এমন ছয় শিল্পীকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হচ্ছে, যাদের সাহিত্যকর্ম আজও পাথেয় হয়ে আছে। কিন্তু তারা মৃত্যুবরণ করেছেন অনাহার আর দুর্দশায়।
এগন সিসিলি
১৯১৮ সালের দিকে স্পেনে প্রাণঘাতী ইনফ্লুয়েঞ্জা কেড়ে নেয় দুই কোটি মানুষের জীবন। সেই দুই কোটি মানুষের মধ্যে একজন ছিলেন স্প্যানিশ শিল্পী এগন সিসিলি। সিসিলির মৃত্যুর মাত্র তিনদিন আগে মারা যান তার ছয় মাসের অন্তস্বত্ত্বা স্ত্রী এডিথ। ভিয়েনার একটি ছোটো কামরায় মারা যান তিনি। ক্ষুধা আর অর্থনৈতিক কষ্টে দিন কাটতো এই দম্পতির। যদিও সিসিলি এই দুর্বিসহ সময়ের পুরোটাই ছবি এঁকে কাটিয়েছিলেন। যখন সিসিলি মারা যান তখন তার বয়স ছিল মাত্র ২৮ বছর এবং মৃত্যু আগ মুহূর্তেও তিনি ছবি এঁকে গেছেন।
পল গাউগুইন
পল বিখ্যাত ছিলেন তার পেইন্টিংয়ের জন্য। জন্মসূত্রে ফরাসি পল যখন মধ্যবয়সী তখন ফ্রান্স তার উপনিবেশিক আচরণ থেকে ক্রমশ পিছু হটতে শুরু করেছে। বাড়ি ফেরার জন্য নৌকায় যে খরচটুকু হয় তাও দেয়ার সামর্থ্য ছিল না তার। অথচ তিনি গোটা ফ্রান্সেই বেশ পরিচিত ছিলেন তার আঁকা নারীদের ছবির কারণে। অথচ ১৯০৩ সালে প্রায় অনাহারে এবং অর্থশূণ্য অবস্থায় মাত্র ৫৪ বছর বয়সে দুরোরোগ্য সিফিলিস রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। যদিও ডাক্তাররা তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে মরফিনের অতিরিক্ত ডোজকে দায়ি করেছিলেন।
এল গ্রেসো
বিখ্যাত পেইন্টার তিতিয়ানের শিষ্য ছিলেন এল গ্রেসো। গুরুর চেয়ে শিষ্য জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছিলেন তার ফিগার পেইন্টিংয়ের জন্য। তবে অনেক নারী এবং পরিবারের ছবি এঁকে তিনি স্পেনের অন্যতম শিল্পী হয়ে উঠেছিলেন সেই সময়েই। বর্তমানে গোটা ইউরোপে পেইন্টিংয়ের মাস্টার হিসেবে গণ্য করা হয় এল গ্রেসোকে। তবে সেটা তার মৃত্যুর আড়াইশ বছর পর। অথচ এই বিখ্যাত শিল্পীই ১৬১৪ সালের ৭ এপ্রিল টলেডোর এক নির্জন ঘরে একাকী মারা যান।
জোনাথন সুইফট
পাঠক জোনাথন সুইফট নামটির সঙ্গে অতটা পরিচিত না হলেও ‘গালিভার’স ট্রাভেলস’ নামটি সবার পরিচিত। সদা হাস্যোজ্জ্বল এই মানুষটির একাকী অনাহারে এবং অর্থকষ্টে মারা যাওয়ার কোনো কারণই ছিল না। কিন্তু প্রেমে প্রত্যাখ্যাত সুইফট একটা সময় তার বেঁচে থাকার মানে হারিয়ে ফেলেন। তাইতো তার একটি উক্তি আজও বিখ্যাত হয়ে আছে পৃথিবীর সাহিত্যের ভূবনে। ‘তুমি তখনই কিছু জিতবে, যখন তুমি কিছু হারাবে’। আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে জন্মগ্রহণকারী সুইফট ছিলেন জোনাথন সুইফট ও আবিগেইল এরিক দম্পতির একমাত্র সন্তান। ইংরেজ গৃহযুদ্ধের ফলে বাবার সম্পত্তি বিক্রি হয়ে যাওয়ায় ভাগ্যান্বেষণে তারা আয়ারল্যান্ডে চলে আসেন। এরপর জীবনের অনেক চড়াই উতরাই পারি দিতে হয় সুইফটকে। ১৭৪৫ সালের ১৯ অক্টোবর আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে দীর্ঘ কষ্ট ভোগের পর মারা যান তিনি।
অস্কার ওয়াইল্ড
অস্কার ফিঙ্গাল ও’ফ্ল্যাহারটি উইলস ওয়াইল্ড ছিলেন একজন আয়ারল্যান্ডীয় নাট্যকার, ঔপন্যাসিক এবং কবি। আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে তিনি জন্মান। তিনি অনেকগুলো ছোট গল্পও রচনা করেছেন সেই সময়ে। এছাড়া তিনি ছিলেন ফ্রিম্যাসন্স সোসাইটির সদস্য। ভিক্টোরিয়ান যুগের লন্ডন শহরে তিনি অন্যতম সফল নাট্যকার হিসেবে পরিচিত হন। তিনি তার চাতুর্যময় নাট্যরচনার মাধ্যমে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। তবে এক বিখ্যাত বিচারের রায়ের ফলে তার সাফল্যের পরিসমাপ্তি ঘটে এবং তাকে বড় মাপের অশ্লীলতা এবং সমকামিতার দায়ে কারাদণ্ড দেয়া হয়। তিনি প্যারিস শহরে মৃত্যুবরণ করেন।
এমিলি ডিকিনসন
উনিশ শতকের আমেরিকান কবিদের মধ্যে দু’জনকে সত্যিকার অর্থে কবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। একজন ওয়াল্ট হুইটম্যান অন্যজন এমিলি ডিকিনসন। এমিলি ডিকিনসন তার কবিতায় ভাঙা ছন্দ, ড্যাশ চিহ্ন, যত্রতত্র বড় হাতের অক্ষর ব্যবহারের মাধ্যমে নিজস্ব লেখক শৈলীর জন্য আজ বিশ্বব্যাপী খ্যাত। জীবদ্দশায় তিনি প্রায় ১৮০০ কবিতা লিখেছেন। তার কবিতা আজও মার্কিন মুলুকের পাঠ্যবইয়ে পড়ানো হয়। বিখ্যাত এই কবিও প্রায় অনাহারেই মারা যান ১৮৮৬ সালের ১৫ মে।
মন্তব্য চালু নেই