বিখ্যাত আলোকচিত্রের রহস্য

প্রায় দিন দশক আগেকার কথা। স্টিভ ম্যাকুরি নামের এক আলোকচিত্রী আফগানিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে তুলেছিলেন একজন আফগান কিশোরীর ছবি। আশ্চর্যজনকভাবে সেই আফগান কিশোরীর ছবিটি সর্বকালের সেরা আইকনিক পোট্রেট হয়ে যায়। টাইম ম্যাগাজিন থেকে শুরু করে বিশ্বের অধিকাংশ বিখ্যাত পত্রিকাই এই আলোকচিত্রটিকে অনেক মর্যাদার সঙ্গে প্রচার ও প্রকাশ করে। সেই থেকে আজ অবধি ওই ছবিটি ‘আফগান গার্ল’ নামে পরিচিতি পেয়ে আসছে।

ম্যাকুরি ছবিটা সম্পর্কে আমাদের জানান, ‘আমি জানতাম তার চেহারায় একটা বিশেষ কিছু আছে। সোজা কথায় তার চোহারা আমাকে বারবার তার দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু আমাদের চারপাশে অনেক মানুষ ছিল এবং ধূলা উড়ছিল বেশ। যেহেতু আমার কাছে ডিজিটাল ক্যামেরা ছিল না তাই বোঝার উপায় ছিল না ঠিক কি তোলা হচ্ছে। যখন আমি ছবি ডেভেলপ করলাম তখনই বুঝতে পারলাম ওই ছবিটা বিশেষ কিছু। ওটা আমি ন্যাশনাল জিওগ্রাফির সম্পাদককে ছবিটা দেখালাম এবং তিনি ছবিটা দেখে চিৎকার করে উঠলেন এবং বললেন, ‘এটাই আমাদের পরবর্তী কাভার’।’

শুধু যে এই ছবিটা ন্যাশনাল জিওগ্রাফির ম্যাগাজিন প্রচ্ছদে জায়গা করে নিয়েছিল বিষয়টি তা নয়। কিন্তু এই ছবিটার পেছনে যে গল্পটা ছিল তাও ছড়িয়ে যায়। ওটা ছিল মূলত ১২ বছর বয়সী সারভাত গুলা নামের এক মেয়ের ছবি। আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তবর্তী নাসিরবাগ শরণার্থী শিবিরের এক পশতুন অনাথ ছিল সে। সেই ১২ বছর বয়সী মেয়ে এখন পূর্ণবয়স্ক নারী এবং তিনি পাকিস্তানে বসবাস করছেন। ম্যাকুরি যখন খ্যাতির শীর্ষে পৌছে যান মাত্র একটি আলোকচিত্রের কাধে চেপে তখন বাস্তবের দুনিয়া তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। হয়তো ম্যাকুরি একজন আলোকচিত্রীর বাইরে একজন শিল্পী ছিলেন বলেই বাস্তবতা তার সামনে বারবার ধরা দিয়েছিল।

‘শুধু এই ছবিটার জন্য অনেক স্বেচ্ছাসেবী শরণার্থী শিবিরে কাজ করতে আসে। আফগানরা নিঃসন্দেহে এই ছবিটি নিয়ে গর্বিত ছিল। কারণ ছবির মেয়েটি গরীব হতে পারে কিন্তু তার চেহারায় ছিল স্পষ্ট গর্ব এবং আত্মমর্যাদা। এই ভঙ্গিটাই মূলত সবার ভালো লাগে এবং অনেকেই অনুপ্রেরণা পায়।’

এই ছবিটির ব্যাপ্তি এই ক্ষুদ্র পরিসরে বললে আসলে সব বলা হয় না। ওই ছবিটি প্রকাশের পর ন্যাশনাল জিওগ্রাফি আফগান শিশুদের নিয়ে ফান্ড গঠন করে এবং অনেক অনাথ শিশুর জীবন পাল্টে যায় এই কারণ। তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, এরপর যতবার স্টিভ ম্যাকুরি আফগানিস্তানে যান কোনোবারই কোনো ট্যাক্সিচালক তার কাছ থেকে ভাড়া নেননি।

ম্যাকুরির তোলা এরকম অনেকগুলো আইকনিক ছবি নিয়ে সম্প্রতি ইতালির মোনযাতে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী শুরু হয়েছে, যা আগামী ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। ‘এটা আমার জন্য বিশাল ব্যাপার এই জন্য যে, ছবির বিষয়বস্তু কিভাবে যোগসূত্র রচনা করছে। কিন্তু আমি কখনও এই কাজ থেকে বিদায় নেয়ার কথা ভাবতে পারি না।’ ৬৪ বছয় বয়সী ম্যাকুরি এখনও প্রতিদিন নিয়ম করে ছবি তোলেন এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তিনি নিরলস ছুটে যান।

‘আমি বিশ্বাস করি যখন আপনি এমন কিছুর প্রতি ছুটবেন যা আপনি ভালোবাসেন, সেটা আপনার গোটা জীবন ধরে ছুটতে হবে। আপনি যেটা করতে করতে ভালোবাসেন সেটা থেকে কেন আপনি অবসরে যাবেন।’ বিশ্বের সকল আলোকচিত্রীদের উদ্দেশ্যে তিনি এভাবেই বলেন। ম্যাকুরি তার চল্লিশ বছরের আলোকচিত্রী জীবনে এরকম অনেক দুর্দান্ত সব ছবি তুলেছেন যা তাকে বিশ্বজোড়া খ্যাতি এনে দিয়েছে। কিন্তু এতোকিছুর পরেও তিনি ছুটে চলেছেন মুহূর্তের সন্ধানে।

উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় তিনি ছুটে গেছেন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। খুব কাছ থেকে দেখেছেন সাদ্দাম হুসেইন বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ। ‘সাদ্দাম হুসেইন কমপক্ষে ৬০০টি তেলক্ষেত্র স্রেফ জ্বালিয়ে দিয়েছিল। এটা পরিবেশের জন্য ছিল মারাত্মক বিপর্যয়। গোটা দেশব্যাপী এই তেল ছড়িয়ে পরেছিল এবং জনস্বাস্থ্যের অনেক ক্ষতিসাধন করে ওই অপরিশোধিত তেল।



মন্তব্য চালু নেই