বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো ‘তছনছ’

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবিতে সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো তছনছ হয়ে গেছে। ধরপাকড়, গুম-হত্যা, জেল-জুলুম ও পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ— সব মিলিয়ে টালমাটাল অবস্থা দলটির।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দশম জাতীয় নির্বাচন প্রতিহত করার ডাক দিয়েও রাজপথে নামাতে পারেনি নেতাকর্মীদের। তা ছাড়া নির্বাচনে অংশ না নিয়ে ‘নির্বাচনমুখী’ দলটির নেতাকর্মীরা অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরবর্তীকালে ওই নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে কর্মসূচি ৫ জানুয়ারি থেকে টানা অবরোধে ঘোষণা দিলেও সাংগঠনিকভাবে রাজপথ আন্দোলনে প্রতিরোধ গড়ে তুলে পারেনি দলটি। টানা ৯২ দিন কার্যালয়ে ‘অবরুদ্ধ’ থাকার পর গত ৫ এপ্রিল আদালতে হাজিরা দিয়ে বিনা বাধায় ঘরে ফেরেন খালেদা জিয়া। সর্বশেষ, ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিয়ে মাঝপথে সরে দাঁড়ানোয় রাজনীতির মাঠ থেকে অনেকটাই ছিটকে পড়েছে দলটি।

বিএনপির নেতাকর্মীদের দাবি, ঢাকা মহাগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে ব্যর্থতা ও দলের ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অধিকাংশই মেয়াদোত্তীর্ণ হবার কারণে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়তে ব্যর্থ হচ্ছে দলটি। এ ছাড়া দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় কাউন্সিল করতে না পারায় আন্দোলন ‘ব্যর্থ’ হয়েছে। (২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়) এ ছাড়া ঘোষণা দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কমিটি পুনর্গঠন না করায় দলের কর্মীরা অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থায় দলের নেতাকর্মীরা প্রতিনিয়তই সাংগঠনিকভাবে ঐক্য হারাচ্ছেন। ভেঙ্গে গেছে মূল দলসহ অঙ্গ দলগুলোরও সাংগঠনিক কাঠামো।

এ বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘দল পুনর্গঠন সময়ের ব্যাপার। ইলেকশন হচ্ছে না বলেই বিএনপি সুসংগঠিত নয়, এটা ঠিক নয়। ওয়ার্কাররা (বিএনপি নেতাকর্মীরা) যত্রতত্র ছড়িয়ে আছে। যখনই ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) ডাক দেবেন তখনই তারা চলে আসবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি সুসংগঠিত আছে। এখনতো রমজানে মাস। এই মাসে কিছু করা সম্ভব নয়। পরের মাসে কাজ করা হবে।’

দলের আরেক স্থায়ী সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বর্তমান সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে বলেন, ‘রাজনৈতিক ঝড়ঝাপটা ও সরকারের নির্যাতনের কারণে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো নির্দিষ্ট সময়ে পুনর্গঠন করা সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে প্রক্রিয়া চলছে। ঈদের পর পরই দল পুনর্গঠন করা হবে।’

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয়ে সম্প্রতি এক মতবিনিময়ে দাবি করেন, বিএনপি ৫০ লাখ নেতাকর্মী প্রায় ১০ হাজার মামলার আসামী। এ ছাড়া গত ৫ জানুয়ারি ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন’ নির্বাচনে বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালনকালে র‍্যাব-পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের হাতে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের ৭৮ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে বিএনপির রয়েছেন ৪৩ জন।

এদিকে, গত ১৬ জুন নোয়াখালী জেলার নবনির্বাচিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতাদের সঙ্গে গুলশানে নিজ কার্যালয়ে মতবিনিময়কালে খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপি শক্তিশালী আছে, থাকবে। বিএনপি কখনো ভাঙবে না। বিএনপির মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। বিএনপি ঐক্যবদ্ধ আছে। দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চলছে।’

‘অনেকেই বলেন বিএনপি শেষ হয়ে গেছে, বিএনপি এগুতে পারছে না। এটা ঠিক নয়। মহাসচিবসহ নেতারা জেলে আছেন। আমরা সময়ের অপেক্ষায় আছি,’ বলেন খালেদা জিয়া।

সে সময় তিনি আরও বলেন, ‘দেশ কঠিন সময় পার করেছে, এই অবস্থায় আমরা বসে থাকতে পারি না। আমাদের সংগঠন আছে। কাজেই আমরা ছাত্রদল, যুবদল, মহিলা দল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও কৃষক দলসব সব দলকেই পুনর্গঠন করতে চাই।’

খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্যের পর নেতাকর্মীদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়। তবে দীর্ঘদিন পার হলেও দল ও সহযোগী সংগঠনগুলোর পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। ফলে কেউ কেউ হতাশা প্রকাশ করেছেন।

নতুন নির্বাচনের দাবিতে চলতি বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসের আন্দোলন, এরপর এপ্রিলে ঢাকা ও চট্রগ্রাম সিটি নির্বাচনের সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির ১৯ সদস্যের মধ্যে খালেদা জিয়াসহ হাতেগোনা কয়েকজন নেতাকে প্রকাশ্যে দেখা যায়।

বিএনপি সূত্র জানায়, সিটি নির্বাচনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ সক্রিয় হন। আন্দোলনের সময় এ দুই নেতাসহ নীরব ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আর এ গণি, জমির উদ্দিন সরকার, এম কে আনোয়ার, সারোয়ারী রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। যশোরে ছিলেন তরিকুল ইসলাম। মির্জা আব্বাস ছিলেন আত্মগোপনে, আর নজরুল ইসলাম খান শুরুতে আত্মগোপনে থাকলেও পরবর্তী সময়ে চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে অবস্থান নেন। ড. আব্দুল মঈন খান বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন। এর বাইরে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতারের পর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে, সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ফৌজদারি মামলায় কারাগারে আছেন। এম শামসুল ইসলাম অসুস্থ। তারেক রহমান লন্ডনে।

এ ছাড়া দলের ভারপ্রাপ্ত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ কারাগারে অন্তরীণ। যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন নিখোঁজ হওয়ার পর নাটকীয়ভাবে ভারতের শিলংয়ে সন্ধান মিলে। সালাহ উদ্দিন নিখোঁজ হওয়ার পর আরেক যুগ্ম-মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু দলের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেন। তিনিও এখন প্রকাশ্যে নেই।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির ৩৯১ সদস্যের মধ্যে বিগত আন্দোলনে সক্রিয় দেখা গেছে আব্দুল্লাহ আল নোমান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এ্যাডভোকেট আহমদ আজম, শামছুজ্জামান দুদু (বর্তমানে কারাগারে আটক), খায়রুল কবির খোকন, আসাদুল হাবীব দুলু, হাবীবুর রহমান হাবীবসহ গুটিকয়েক নেতা।

ঢাকা মহানগর বিএনপি ‘ব্যর্থ’ : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে সদস্য সচিব করে গত ১৮ জুলাই ২০১৪ সালে ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। তাদের এক মাসের মধ্যে সকল ওয়ার্ড ও থানা কমিটি এবং দুই মাসের মধ্যে মহানগর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট ওই সময়ের মধ্যে তারা নতুন কমিটি গঠনে ‘ব্যর্থ’ হন। এখনও মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি আলোর মুখ দেখেনি। পাশাপাশি আন্দোলনেও ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি নগরীতে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি।

এলোমেলো বিএনপির অঙ্গ দলগুলোও : বিগত আন্দোলনে বিএনপির ৯টি অঙ্গসংগঠন ও ২টি সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতাদের ব্যর্থতার কারণে পুরো আন্দোলনে এর প্রভাব পড়ে। ফলে অঙ্গ দলগুলোর কমিটি ভেঙ্গে নতুন কমিটি করার ঘোষণা করা হবে এমন ঘোষণা খালেদা জিয়া নিজেই দিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সংগঠনের কমিটি পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।

যুবদল : সংগঠনটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পর পর কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটির গঠনের কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। ২০১০ সালের ১ মার্চ এ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে সভাপতি ও সাইফুল আলম নীরবকে সাধারণ সম্পাদক করে পাঁচ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীকালে ২০১০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া ২০১ সদস্যবিশিষ্ট যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি অনুমোদন করেন।

পুনর্গঠন সম্পর্কে যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, যুবদল পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। দলীয় প্রধান যে সময় চাইবেন আগের কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি দেবেন।

কৃষক দল : কৃষক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কারাগারে আছেন। একই সঙ্গে তিনি ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতিও। কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামছুজ্জামান দুদু কারাগারে আছেন। ১৯৯৮ সালের ১৬ মে সম্মেলনের মাধ্যমে মাহবুবুল আলম তারাকে সভাপতি ও শামসুজ্জামান দুদুকে সাধারণ সম্পাদক করে কৃষক দলের কমিটি গঠন করা হয়। ২০০১ সালে তারা বহিষ্কৃত হলে সিনিয়র সহ-সভাপতি মজিবুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়। ২০০৮ সালে তিনি মারা যাওয়ার পরে আরেক সহ-সভাপতি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সভাপতি করা হয়। বিএনপির মহাসচিব এ্যাডভোকেট খন্দকার দেলোয়ার হোসেন ২০১১ সালে মারা যাওয়ার পরে ফখরুল দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পান। দুদু ২০০৯ সালে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার দায়িত্ব পান। কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্যসহ কৃষকদের বিভিন্ন দাবি আদায়ে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। দুই নেতা বিএনপির দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে সংগঠনটি অভিভাবকহীন হয়ে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে।

স্বেচ্ছাসেবক দল : ২০১০ সালে ২৩ আগস্ট স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩৩৩ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন এ কমিটি অনুমোদন করেন। এর আগে ২০০৯ সালের ১১ অক্টোবর হাবিব-উন-নবী সোহেলকে সভাপতি ও মীর সরাফত আলী সপুকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। কয়েক মাস পর সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে শফিউল বারী বাবুকে মনোনীত করা হয়।

স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতিকে ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব করা হয়েছে। ফলে তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন মহানগর বিএনপি নিয়ে। এদিকে শীর্ষ দুই নেতা সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু ও সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবুও প্রকাশ্যে নেই।

আত্মগোপনে থাকায় এ বিষয়ে বিএনপির অন্যতম শক্তিশালী অঙ্গ সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলেন প্রধান তিন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ দফতর সম্পাদক মো. আখতারুজ্জামান বাচ্চু জানান, ম্যাডাম বিএনপির অঙ্গ সংগঠন পুনর্গঠন ও নতুন নেতৃত্বের কথা বলেছেন। স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী সোহেল যেহেতু ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন সেহেতু তিনি সংগঠনের সভাপতির পদ থেকে সরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

শ্রমিকদলেরয়েছে বিদ্রোহী কমিটি : মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর প্রায় দুই বছর পর বিএনপির অন্যতম সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের ৭ম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালে ১৯ এপ্রিল। এ কাউন্সিলে আনোয়ার হোসেনকে সভাপতি ও নূরুল ইসলাম নাসিমকে সাধারণ সম্পাদক করে শ্রমিক দলের ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। অনেক হট্টগোল ও বির্তকের পর কাউন্সিলের সাত দিনের মাথায় রাতে নতুন এ কমিটি প্রকাশ করা হয়। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও শ্রমিক দলের কাউন্সিল সাবজেক্ট কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানের স্বাক্ষরে নতুন এ কমিটি প্রকাশ করা হয়। এর আগে শ্রমিক দলের সভাপতি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বিএনপির শ্রম বিষয়ক সম্পাদক জাফরুল হাসান।

কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি হওয়ার কথা থাকলেও সাত দিন পর এই কমিটি ঘোষণা করায় এর গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। কমিটিতে যোগ্যদের স্থান না দেওয়া এবং অর্থ লেনদেনের অভিযোগও উঠে। ২০১৪ সালে ২৪ সেপ্টেম্বর গত কমিটিকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ২০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করে বিদ্রোহীরা। কমিটিতে নাজিম উদ্দিনকে সভাপতি ও আব্দুল খায়ের খাজাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল : আগের কমিটি আন্দোলনে ব্যর্থ হলে দুই বছরের মাথায় গত বছর ১৪ অক্টোবর নতুন কমিটি দেওয়া হয়। রাজিব আহসানকে সভাপতি ও মো. আকরামুল হাসান সাধারণ সম্পাদক করে বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ২০১ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করেন। কিন্তু এই কমিটিও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। প্রায় ৮ মাসেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি। মহানগর ও ইউনিট কমিটিও পুনর্গঠন প্রক্রিয়া দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি চোখে পড়েনি।

আত্মগোপনে থাকায় এ প্রসঙ্গে জানার জন্য ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। ছাত্রদলের সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শেষ পর্যায়ে। খুব গিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। নেতাকর্মীদের দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে। কমিটি পুনর্গঠনে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কাজ করছেন।

জাতীয়তাবাদী ওলামা দল : ২০০৫ সালের প্রথমদিকে আব্দুল মালেককে সভাপতি ও শাহ নেছারুলকে সাধারণ সম্পাদক করে ওলামা দলের কমিটি করা হয়। মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির নেতারা দলীয় মিলাদ ও দোয়া মোনাজাতের মধ্যেই কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রেখেছেন।

মহিলা দল : ২০১০ সালের মার্চ মাসে নূরে আরা সাফাকে সভাপতি ও শিরিন সুলতানাকে সাধারণ সম্পাদক করে মহিলা দলের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও এ সংগঠনটি পুনর্গঠন করা হয়নি। জন্মলগ্ন থেকে ১৯৭৯ সালে একবার কাউন্সিল হয়েছিল। বর্তমানে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৩৫১ জন সদস্য রয়েছে।

১৯৭৮ সালে পয়লা সেপ্টেম্বর বিএনপি গঠন হওয়ার সাত দিন পর ৯ সেপ্টেম্বর ড. আমেনা রহমানকে সভাপতি ও সারোয়ারী রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৮ সালের কমিটি দিয়ে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত কার্যক্রম চালিয়েছে এ সংগঠন। প্রায় ১১ বছর পর ২২ মার্চ ২০১০ সালে বর্তমান কমিটি গঠন করা হয়। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে চূড়ান্ত গঠনতন্ত্র করা হয়।

তাঁতী দল : ২০০৮ সালের ২২ মে হুমায়ুন ইসলাম খানকে সভাপতি ও আবুল কালাম আজাদকে সাধারণ সম্পাদক করে তাঁতী দলের কমিটি গঠন করা হয়। তাঁতশিল্পের মতোই এ সংগঠনটি বিলুপ্তির পথে।

মৎস্যজীবী দল : ২০১১ সালে ১৭ ডিসেম্বর সভাপতি রফিকুল ইসলাম মাহতাব ও সাধারণ সম্পাদক মো. নূরুল হক মোল্লার দ্বন্দ্বের কারণে পাঁচ বছরেও মৎস্যজীবী দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়নি।

জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) : জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে অনেক আগে। ২০১০ সালে এম এ মালেককে সভাপতি ও কণ্ঠশিল্পী মনির খানকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৪৫ সদস্যবিশিষ্ট জাসাসের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল।দ্য রিপোর্ট



মন্তব্য চালু নেই