এক দফা আন্দোলনের পরিকল্পনা
বিএনপির মূল লক্ষ্য মধ্যবর্তী নির্বাচন
বিএনপির আন্দোলনের মূল লক্ষ্য মধ্যবর্তী নির্বাচন। সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ঘোষণা দিলেই চলমান আন্দোলন থেকে সরে আসার কথা ভাবতে পারে দলের হাইকমান্ড। সরকার দ্রুত এ ধরনের উদ্যোগ না নিলে আরও কঠোর আন্দোলনের কথাই ভাবছে। সেক্ষেত্রে সরকার পতনের লক্ষ্যে এক দফার আন্দোলনের পরিকল্পনা করছে ২০ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ।
এদিকে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মহল থেকে সংলাপের আহ্বান জানালেও সরকার এখনও এ ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। সরকার যদি আন্তরিকভাবে সংলাপের উদ্যোগ নেয় সেক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দিতে পারে। তবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন থেকে সরে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন বলেন, সরকার পদত্যাগ ও নতুন নির্বাচনের ঘোষণা দিলেই অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহারের চিন্তাভাবনা করা হবে। তিনি বলেন, সরকার দেশকে অন্ধকার গহ্বরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তারা বিরোধী নেতাকর্মীদের হত্যা করছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করছে। আমরা এখনও বলছি, চলমান সংকটের অবসান করতে হলে সরকারকে পদত্যাগ করে মধ্যবর্তী নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে হবে। তাহলে একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিষয়ে সংলাপ হতে পারে। দেশে শান্তিও ফিরে আসবে। হাফিজ দাবি করেন, তাদের আন্দোলন বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নয়। জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্যই।
জানা গেছে, সংলাপসহ বিদ্যমান সংকট নিরসনে সরকারের ওপর দেশী-বিদেশী চাপও বাড়ছে। দেশের সংকট নিরসনে তৃতীয় কোনো পক্ষের হস্তক্ষেপ চায় তারা। সেক্ষেত্রে কূটনীতিকদের ওপরই বেশি ভরসা রাখতে চায় বিএনপি। কারণ আন্দোলনের বর্তমান অবস্থায় সরকার বা বিএনপি কারও পক্ষেই এগিয়ে আসা সম্ভব নয়। তৃতীয় কোনো পক্ষ উদ্যোগ নিয়ে তারা নিজ নিজ ইমেজ রক্ষা করেই সংলাপে বসতে পারে।
এ অবস্থায় বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতের কর্মকাণ্ডের ওপরও গভীরভাবে নজর রাখছে জোটের নেতারা। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূতের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সম্প্রতি নবনিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও ভারতের হাইকমিশনারের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠককে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হয়েছে। সবশেষ ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতের বাসায় আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির কয়েকজন নেতার রুদ্ধদ্বার বৈঠককেও গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন দলের শীর্ষ নেতারা। কারণ কূটনীতিকদের এমন দৌড়ঝাঁপকে সরকারের ওপর চাপ হিসেবে দেখছে তারা। বিভিন্ন রাষ্ট্রের পর যুক্তরাষ্ট্রেরও উদ্বেগ জানিয়ে দেয়া বিবৃতিকে সরকারের ওপর চাপ হিসেবে দেখছে তারা। তাদের মতে, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সরকারের ওপর নানামুখী চাপ অব্যাহত রাখা ছাড়া দাবি আদায় সম্ভব নয়। তাই আন্দোলন জোরদারের পাশাপাশি দেশী-বিদেশী চাপ অব্যাহত রাখার দিকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, তাদের দাবি তো স্পষ্ট। সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ট নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। সরকার এ দাবি মেনে নিলে তো আন্দোলনের প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সরকারকে সংলাপের আবহ তৈরি করতে হবে। সরকারের আন্তরিকতার প্রমাণ দিতে হবে। তবেই আন্দোলন শিথিল করার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করা যাবে। কারণ বিএনপির আন্দোলন যে পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে সেখান থেকে সরে আসার কোনো উপায় নেই।
সূত্র জানায়, ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের পর থেকে দেশে-বিদেশে ওই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সব মহল থেকে আবারও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি জানানো হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে একই দাবিতে জনমত সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়া হয়। গত এক বছরে সারা দেশে বেশ কয়েকটি জনসভা করেন খালেদা জিয়া। ওই সব জনসভা থেকে অবিলম্বে সব দলের অংশগ্রহণে দ্রুত একটি নির্বাচন দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও একই দাবি ওঠে। বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় অংশীদারিত্ব নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।
সূত্র জানায়, বিএনপিরও ধারণা ছিল ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ দ্রুত আরেকটি নির্বাচনের উদ্যোগ নেবে। নির্বাচনের আগে জাতিসংঘের মধ্যস্থতা দুই দলের মধ্যে অনুষ্ঠিত সংলাপে এমন আভাসই ছিল। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যেই বলা হয়েছিল, এটা হল সংবিধান রক্ষার নির্বাচন। কিন্তু নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ তাদের আগের অবস্থান থেকে সরে আসে। ২০১৯ সালের আগে কোনো নির্বাচন নয় বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়। সরকারের এমন ঘোষণার পরও বিএনপির প্রত্যাশা ছিল, গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সংলাপে বসবে। সব দলের অংশগ্রহণে কিভাবে নির্বাচন করা যায় তার একটি ফর্মুলা বের করার উদ্যোগ নেবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডে এমন কোনো লক্ষণ চোখে পড়েনি। তাই সরকারকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে তারা রাজপথে নামার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই কৌশলের অংশ হিসেবে চলছে টানা আন্দোলন।-যুগান্তর।
মন্তব্য চালু নেই