বিএনপির নাড়ী দেখে নড়বে জামায়াত
৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ ঘোষণা করে যেকোনও মূল্যে রাজপথে সক্রিয় অবস্থানের পরিকল্পনা বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের। প্রশাসনের অনুমতি না মিললেও জোটভূক্ত দলের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করেছে বিএনপি। রাজপথে থেকে বিএনপি জোটের এই আন্দোলন সফল করতে প্রস্তুতির কথাও জানা গেছে দলটি সূত্রে।
তবে জোটের নেতৃত্বাদানকারী বিএনপি’র কথায় ঝাঁপিয়ে পড়বে না জামায়াতে ইসলামী। দলটি বিএনপির আন্দোলনের নাড়ী-নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করেই মাঠে নামবে। তবে বিএনপির আন্দোলনের ঘোষণাকে ইতিবাচক বিবেচনা করে রাজপথে সক্রিয় অংশগ্রহণের প্রস্তুতিও রয়েছে তাদের।
২০১৩ সালে জামায়াতের সহিংস আচরণের ছোঁয়া পড়েনি ২০১৪ সালে। পুরো বছর জুড়েই অস্তিত্ব রক্ষার কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। সর্বশেষ মানবতাবিরোধী অপরাধে দলের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের রায়ের প্রতিবাদে ডাকা দুইদিনের হরতালও ছিল নিয়মরক্ষার কর্মসূচি। তবে জামায়াত নেতারা আশা করেন বিএনপির সক্রিয়তায় জোটের অন্যান্য দলের সঙ্গে জামায়াতও উঠে দাঁড়ানোর পথ পাবে। জোটবদ্ধ কর্মসূচিতে উপযুক্ত সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে চায় জামায়াতের নেতারা। সারাদেশেই নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
জামায়াত নেতারা মনে করেন, জোটবদ্ধভাবে আন্দোলনের মাধ্যমেই সরকারের পতন সম্ভব। তবে এজন্য বিএনপির সক্রিয় ভূমিকার বিকল্প নেই। ২০১৩ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সফল হতো না যদি বিএনপি সক্রিয় আন্দোলন করতে পারতো। ইতিমধ্যেই বিএনপির আন্দোলনের দুর্বলতায় কোন কর্মসূচিই সফলতার মুখ দেখেনি। অন্যদিকে দলের নেতাদের মানবতাবিরোধী অপরাধের রায়ের প্রতিবাদ দেখানোর সুযোগও পায়নি দলটি। একই কর্মসূচির মধ্যে নিজেদের অবস্থান জানানোর অনন্য সুযোগ বলেই মনে করে দলটির নেতারা।
তবে আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষা ও প্রস্তুতি থাকলেও কৌশলী ভূমিকায় থাকবে জামায়াত। দলটি সূত্রে জানা গেছে, ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে বিএনপি’র ভূমিকা ওপর নির্ভর করেই মাঠে থাকবে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। পর্যবেক্ষণে বিএনপি নেতাদের নিষ্ক্রিয়তা থাকলে প্রস্তুতি থাকলেও মাঠ গরম করবে না দলটি। পূর্বে জোটের কর্মসূচি জামায়াত একক সক্রিয় সহিংসতায় বিতর্কিত হয়। পাশাপাশি সরকারের রোশানল এককভাবে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের ভোগ করতে হয়। আন্দোলন মাথায় রেখেই জামায়াত ও শিবিরের প্রায় সব পর্যায়ে নতুন দায়িত্বশীল নির্বাচিত হয়েছে। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন যাবৎ বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব ঘোচাতে চায় জামায়াত।
জামায়াতের এক কর্মপরিষদ নেতা জানান, জোটের কর্মসূচি সফল করতে আমরা প্রস্তুত। জামায়াতের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনে ভয় পায় না। আমাদের ওপর জোটের আস্থা আছে বলেই বিএনপি’র পক্ষ থেকেও জামায়াতের সক্রিয় উপস্থিত চেয়েছে। তবে আমরা আগের মতো একা একা মাঠে নেমে রোষানলে পড়তে চাই না। আন্দোলন সফল হলে বেশি সুবিধা বিএনপির, তাহলে কেন তাদের নেতারা মাঠে থাকবেন না। আমরাই বা কেন এককভাবে ঝুঁকি নিয়ে মাঠে নামবো। আমাদের অনেক নেতা-কর্মী এখন কারাগারে, একা একা মাঠে নেমে দলের অস্তিত্ব ধ্বংস করার অর্থ নেই।
আন্দোলনে নিজেদের অবস্থান প্রসঙ্গে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘জামায়াত জোটের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। আমারা মনে করি সকলে সম্মলিতভাবে আন্দোলনের মাঠে থাকলেই সরকারের পতন হবেই। বিগত দিনের মতো আগামীতেও ২০ দলীয় জোটের কর্মসূচিতে জামায়াত থাকবে। আমারা আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। ’
সরকার আন্দোলন ভয় পায় উল্লেখ করে মতিউর রহমান বলেন, ‘জামায়াতের আন্দোলনের মধ্যেই আছে। আমাদের আন্দোলনে সরকারের ভীতি আছে বলেই আমাদের নেতা কর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
সম্প্রতি আশুগঞ্জ উপজেলা আমির ও সিলেট মহানগরীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে জামায়াত-শিবিরের প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। ৩১ ডিসেম্বর বরিশাল মহানগরীর নায়েবে আমীর বজলুর রহমান বাচ্চুসহ শেষ দিনের হরতাল চলাকালে ঢাকা, রাজশাহী, বরিশাল, ঝিনেদাহ, কুমিল্লা, নীলফামারী, ফেনী, নোয়াখালী, বগুড়াসহ সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের প্রায় ১শ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে।
জামায়াতের আন্দোলনের রূপরেখা প্রসঙ্গে বিভিন্ন তথ্য দিয়েছেন দলটির এক কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য। নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি জানান, আমাদের আন্দোলনের চূড়ান্ত একটি রূপরেখা করা হয়েছে। আন্দোলনের প্রস্তুতি হিসেবে সারা দেশে সাংগঠনিক তৎপরতা ছিল। জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে কেন্দ্রীয় নেতাদের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হয়েছে নিয়মিত বৈঠক। গ্রেপ্তার-হয়রানি এড়াতে সবাইকে গোপনীয়তা রক্ষা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ৫ জানুয়ারি জোটের সঙ্গে সমন্বয় করে আন্দোলনের মাঠে সক্রিয় থাকতে নির্দেশনা দলের নীতিনির্ধারকদের। সকালেই রাজধানীর নয়া পল্টনে জামায়েত হবে নেতাকর্মীরা। তবে রাজধানী জুড়ে যেখানেই বাঁধা আসবে সেখানেই অবস্থান নেওয়া হবে, মিছিল হবে। রাজধানীতে কমপক্ষে ২৫টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব পয়েন্টে নেতা-কর্মীরা দলের নেতারা সক্রিয়ভাবে দখলে নেবে। যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, গাবতলী, মিরপুর, পল্লবী, বাড্ডা,রামপুরা, মহাখালী, গুলশান, মতিঝিল,কমলাপুর, মালিবাগ, শাহজাহানপুর, চিটাগাং রোড, পুরান ঢাকার জজকোর্ট, ফার্মগেট, মালিবাগ, মোহাম্মদপুর, মগবাজার রেলগেট এসব পয়েন্টগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জামায়াতের মহানগর সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম বুলবুল, সেলিম উদ্দীন, লুৎফুর রহমান, রেজাউল করিম, শিবির সভাপতি আবদুর জব্বার রাজধানীতে দলের কর্মীদের নেতৃত্ব দেবেন। দলের পক্ষ থেকে নেতা কর্মীদের নির্দেশন দেবেন নির্বাহী পরিষদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।
মন্তব্য চালু নেই