বিএনপির আন্দোলনে শরিক দলগুলো নিষ্ক্রিয়

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলের চলমান আন্দোলনে নিষ্ক্রিয় ইসলামী দলগুলো। বিএনপি-জামায়াতসহ কয়েকটি শরিক দলের নেতাকর্মী মাঠে সক্রিয় থাকলেও নীরব ভূমিকায় রয়েছে ইসলামী ঐক্যজোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও খেলাফত মজলিশসহ কয়েকটি দল। এ তিন দলের মধ্যে আবার ইসলামী ঐক্যজোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম দীর্ঘদিন ধরেই ২০ দলের আন্দোলনে মাঠে নেই। এ নিয়ে জোটের শরিকদের মধ্যে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এ ছাড়া নেজামে ইসলাম পার্টি ও ইসলামিক পার্টিও ২০ দলীয় জোটের শরিক। তবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনহীন এ দু’টি দলের তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। ২০ দলীয় জোটের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর পরে ইসলামী দল হিসেবে ইসলামী ঐক্যজোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও খেলাফত মজলিশের অবস্থান। এ তিনটি দলেরই নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন রয়েছে।

সব দলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচির দুই মাস অতিবাহিত হয়েছে। পাশাপাশি শুক্র ও শনিবার ছাড়া সপ্তাহের ৫ দিনই সারাদেশে হরতাল কর্মসূচি দিচ্ছে ২০ দলীয় জোট। এ সব কর্মসূচির সমর্থনে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের মাঠে দেখা গেলেও দেখা নেই ইসলামী ঐক্যজোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও খেলাফত মজলিশ নেতাকর্মীদের।

এর মধ্যে খেলাফত মজলিশের আমীর মুহাম্মদ ইসাহাক ও মহাসচিব আহমদ আব্দুল কাদের কর্মসূচির সমর্থন জানিয়ে গণমাধ্যমে মাঝেমধ্যে বিবৃতি পাঠালেও অন্য দু’টি দলের নেতাদের ক্ষেত্রে তা-ও দেখা যায় না। মাঝেমধ্যে অরাজনৈতিক ঘটনা ‘ইসলাম অবমাননা’ বা অন্য কোনো ইস্যুতে ইসলামী ঐক্যজোট ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের বিবৃতি মেলে গণমাধ্যমে।

২০ দলীয় জোটের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে  জানান, জোটের শরিক ইসলামী দলগুলোর ভূমিকা দীর্ঘদিন ধরেই রহস্যজনক। বিশেষ করে ইসলামী ঐক্যজোট ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নে উঠেছে। বিষয়টি জোটের সর্বোচ্চ পর্যায়েও আলোচনা হয়। কিন্তু এই মুহূর্তে বলার কিছু নেই।

জোটের শরিক দলের এক নেতা বলেন, তারা জোটে থাকলেও জোটের কোনো কর্মসূচিতে নেই। প্রায় দুই মাস ধরে চলা অবরোধ কর্মসূচিতেও তাদের রাজপথে দেখা যায়নি। বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের নামে যখন ডজন ডজন মামলা হচ্ছে, তখন এ সব দলের নেতারা বলা চলে নিরাপদেই রয়েছেন।

সমমনা একটি দলের নেতা বলেন, ইসলামী ঐক্যজোট ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম হেফাজতে ইসলামেরও শরিক। মূলত হেফাজতে ইসলামে তাদের শক্ত অবস্থানের কারণে ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) এ সব দলকে গুরুত্ব দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু গত দেড় দুই বছরে তাদের অবস্থান সুবিধাজনক নয়। মনে হয় গা বাঁচিয়ে চলছেন এ সব দলের নেতারা। এমনকি ২০ দলের বৈঠকেও এ দু’টি দলের শীর্ষ নেতারা না গিয়ে তাদের প্রতিনিধি পাঠিয়ে থাকেন।

২০ দলের শরিক খেলাফত মজলিশের প্রচার সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল জলিল  বলেন, জনগণ যেভাবে আশা করে সেভাবে আমরা মাঠে নামতে পারছি না ঠিক। আমরা প্রতিনিয়ত পুলিশি হয়রানির মধ্যে আছি। আমাদের কেন্দ্রীয় নেতা কাসেমী সাহেবকে (আহমেদ হোসেন কাসেমী) গ্রেফতার করা হয়েছে। পরশু দিনও ছাত্র মজলিশের কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর মাঠে না থাকার কথা যদি হয় তাহলে বলব, বিএনপি-জামায়াত জোটের বড় দল। তারাও তো নামতে পারছে না। কাউকে মাঠে নামতে দিচ্ছে না সরকার।

তিনি বলেন, আমাদের নেতাকর্মীরা অপেক্ষা করছেন সবাই মিলে রাস্তায় নামতে। এ রকম পরিস্থিতি অচিরেই তৈরী হবে। তখন দেখবেন হঠাৎ করে লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। যাকে বলে গণঅভ্যুত্থান।

এ ব্যাপারে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম  বলেন, কর্মসূচিতে নেই এটা বললে ২০ দলের সবার ক্ষেত্রেই বলা যাবে। যদি বলি বিএনপিকেও তো মাঠে পাওয়া যায় না?

তিনি বলেন, কর্মসূচি বাস্তবায়নে আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি। সবসময় আমাদের পুলিশ খুঁজে। আমরা কী করতে পারি। আগামী ২-৩ দিন পর আমাদের বৈঠক আছে। কীভাবে কর্মসূচি সফল করা যায় বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হবে।

২০ দলের শরিক হিসেবে চলমান কর্মসূচিতে ইসলামী ঐক্যজোটের অবস্থান জানতে চাইলে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান  বলেন, আমরা তো ২০ দলের সঙ্গেই আছি। আর যদি বলা হয় আমরা মাঠে নেই তাহলে বলব, মাঠে ২০ দলের কারা আছে?

তিনি বলেন, এখন তো মিছিল-মিটিং করা যায় না। সরকারের আচরণ যদি গণতান্ত্রিক হতো তাহলে আমাদের সভা-সমাবেশ করতে দিত। তাহলে তো আমাদের অবরোধ কর্মসূচি দেওয়া লাগত না।

জোটের অন্যতম এ শীর্ষ নেতা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি চলছে। অতীতে এত দীর্ঘ সময় কর্মসূচি পালিত হয়নি। সরকার চাচ্ছে আমাদের কর্মসূচিকে বিফলে নিতে। কিন্তু জনগণ আমাদের কর্মসূচিকে সফল করছে এবং করবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, বর্তমানে অবস্থা স্বাভাবিক নয়। তাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। তাই হয়তো মাঠে তারা দৃশ্যমান নয়। তবে তারা জোটেই আছেন। দ্য রিপোর্ট



মন্তব্য চালু নেই