বিএনপির আন্দোলনে অর্থ দিচ্ছেন প্রবাসী নেতারা

সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছে বিএনপির সামর্থ্যবান নেতারা। আটক নেতাকর্মীদের মামলা পরিচালনা, আর্থিকভাবে সহযোগিতা করছেন তারা। এ ছাড়া সরকারবিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা করতে প্রবাসী বিএনপির নেতারাও দলকে আর্থিকভাবে সহায়তা করছেন।

দলের সিনিয়র নেতা ও আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় বিএনপির সিনিয়র নেতাদের নির্দেশে অর্থের যোগানদাতা নেতারা ক্ষতিগ্রস্ত ও আন্দোলনে সক্রিয় নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন। দেশ-বিদেশে অবস্থানরত আর্থিকভাবে সচ্ছল প্রবাসী নেতা ও শুভাকাঙ্ক্ষীরাও আন্দোলনে আর্থিক সহায়তা করছেন।

এ ছাড়া আন্দোলন করতে গিয়ে সারাদেশে যে সকল নেতাকর্মী মামলার শিকার হয়েছেন; আইনি হয়রানিতে পড়েছেন; বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা বিনামূল্যে তাদের আইনি সহায়তা করছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী চলমান আন্দোলনে নেতাকর্মীদের সহযোগিতার বিষয়ে  বলেন, ‘আন্দোলন শুরুর পর থেকে অর্থ সাহায্য ও ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে দলের সচ্ছল নেতাদের প্রতি ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি এ ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের পাশেও দাঁড়াতে বলেছেন। আমার জানা মতে, ম্যাডামের এ নির্দেশ মেনে কাজ চলছে। স্থানীয় সামর্থ্যবান নেতারা ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আন্দোলন সচল রাখতে দলীয় নেতারা অবশ্যই কর্মীদের পাশে দাঁড়াবেন, এটাই স্বাভাবিক।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে সিনিয়র এ নেতা বলেন, ‘চলমান আন্দোলনে বিদেশ থেকে কোনো ধরনের অর্থ সাহায্য আসছে কি না আমি জানি না। তবে দেশের নেতারা বিভিন্নভাবে যে আন্দোলনে ভূমিকা রাখছেন, আমি তা নিশ্চিত।’

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সরকারবিরোধী দ্বিতীয় দফার আন্দোলনের শুরুতেই আন্দোলনরত নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াতে দলের সচ্ছল নেতাদের প্রতি নির্দেশ দেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার এ নির্দেশনায় অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল নেতারা গোপনে নেতাকর্মীদের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।

জানা যায়, দেশে সামর্থ্যবান নেতাদের পাশাপাশি প্রবাসে অবস্থানরত বিএনপি সমর্থক বিভিন্ন পেশাজীবী বিশেষ করে বিভিন্ন দেশের বিএনপি নেতারাও আন্দোলনরত নেতাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। অনেকে বিভিন্ন মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের অর্থ দেশে পাঠাচ্ছেন। বিদেশ থেকে নিজেদের টাকা আত্মীয়-স্বজনের কাছে পাঠিয়ে তা দল বা কর্মীদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন।

চলমান আন্দোলনে আর্থিক সহযোগিতার বিষয়ে বিএনপির নরওয়ে শাখা কমিটির সভাপতি বাদল ভূঁইয়া  বলেন, ‘বাংলাদেশে যে আন্দোলন চলছে তা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন। অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে চলমান এ আন্দোলনে সামর্থ্যবান মানুষেরই ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে এসে দাঁড়ানো উচিত বলে মনে করি।’

বাদল বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন প্রবাসী। নিজেদের চেষ্টায় ও শ্রমে ব্যবসা ও অন্যান্য কাজের মাধ্যমে আমরা এখানে একটি অবস্থান গড়ে তুলেছি। অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা সচ্ছলতার মুখ দেখেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুঃখের বিষয়, দেশে যে সরকার বহাল আছে, তারা কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক নয়, এমনকি জনগণের মাধ্যমে নির্বাচিতও নয়। শুধুমাত্র জোর করে প্রশাসনের জোরে তারা ক্ষমতায় টিকে থেকে বাংলাদেশে অগণতান্ত্রিক শাসন পরিচালনার পাশাপাশি চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে। দলীয় আনুগত্যের কারণে র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবি আন্দোলনরত সাধারণ মানুষকে গুলি করে মেরে ফেলছে। এটা চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। তাই দেশের ওই চলমান আন্দোলনে সহযোগিতা করা নিজেদের নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করি। সামর্থ্য অনুযায়ী আমরা আন্দোলনকারীদের সহযোগিতা করে যাচ্ছি।’

দেশের বাইরে অবস্থান করা যুবদলের সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শরিফুল হক সাজু বলেন, ‘যার যার অবস্থান থেকে আমরা বাংলাদেশের চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সহযোগিতা করছি। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অবৈধ সরকারের রোষের শিকার হচ্ছেন, তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সামর্থ্যবান সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।’

বিএনপির স্ক্যান্ডিনেভিয়া শাখা কমিটির সভাপতি আহমেদুল হক কর্নেল বলেন, ‘আমরা দেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত ভাইদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যেই আমরা স্ক্যান্ডিনেভিয়া বিএনপির পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা করেছি।’

আহমেদুল হক আরও বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার জন্য ফান্ড গঠনের উদ্যোগ নিয়েছি। এ ফান্ড থেকে দেশে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামরত নেতাকর্মীদের সহযোগিতা করা হবে।’

চলমান আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্তদের আইনি সহযোগিতার বিষয়ে বিএনপির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া  বলেন, ‘প্রতিদিনই অবৈধ সরকারের রোষানলে পড়ে দলের অসংখ্য নেতাকর্মী মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলার শিকার হচ্ছেন। আমরা আইনজীবীরা অন্য কোনোভাবে সহযোগিতা করতে না পারলেও আইনি সহায়তা করছি। সরকারবিরোধী আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত দলীয় নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। অতীতেও আমরা এ ধরনের সহযোগিতা করেছি। ভবিষ্যতেও করে যাব।’ দ্য রিপোর্ট



মন্তব্য চালু নেই