বিএনপিতে ফিরছে বিকল্পধারা
দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে শিগগিরই বিএনপিতে ফিরে আসছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর আগামী ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সামনে রেখে সদলবলে বিএনপিতে ফিরে আসার ব্যাপারে নীতিগত এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিএনপির এই প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও অপেক্ষা করছেন তাকে স্বাগত জানানোর জন্য। এ ব্যাপারে উভয় পক্ষে ইতিমধ্যে একটি সমঝোতা হয়েছে।
বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান ও যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরীকে নীতিনির্ধারণী ফোরামসহ দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে সম্মানজনক স্থানে অধিষ্ঠিত করতে যাচ্ছেন বিএনপি-প্রধান খালেদা জিয়া। অন্য নেতা-কর্মীদেরও যোগ্যতা অনুযায়ী মূল্যায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে। একই সময়ে ২০-দলীয় জোটের আরও তিনটি শরিক দলও সব কিছু গুছিয়ে বিএনপিতে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ খবর সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।
বিএনপিতে যোগদান প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী সরাসরি উত্তর না দিয়ে শুধু এটুকু বলেন, ‘কোথায় পেলেন এই খবর! তবে আমি আগেই স্পষ্ট করে বলেছি, বিএনপিসহ জাতীয়তাবাদী দলগুলোকে শক্তিশালী করতে হলে শহীদ জিয়ার রাজনৈতিক দর্শনে আবার ফিরে আসতে হবে। সমস্ত জাতীয়তাবাদী শক্তির ঐক্যের ভিত্তি হতে হবে শহীদ জিয়ার রাজনীতি। তা হলেই সেটা সম্ভব। একই সঙ্গে জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস চালানোর পাশাপাশি প্রতিবাদের রাজনীতিও সক্রিয় করতে হবে এবং প্রতিরোধের রাজনীতির উন্মেষ ঘটাতে হবে। গণতান্ত্রিক রাজনীতির এ নিয়ম অনুসরণের মাধ্যমেই কেবল জনগণের ভোটাধিকারসহ সব অধিকার আদায় করা সম্ভব।’
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বিগত আন্দোলনসহ বর্তমান সরকারের আমলে বিএনপি ও জাতীয়তাবাদী শক্তিগুলো যে পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা দ্রুত কাটিয়ে ওঠার জন্যই এ পদক্ষেপ। এর আগে দলের যে নেতারা বিএনপি ছেড়ে চলে গেছেন, তাদের সবাইকেই স্বাগত জানিয়েছেন খালেদা জিয়া। সবাইকে সব বিভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। বিশেষ করে ডা. বি. চৌধুরী ও ড. অলি আহমদের মতো নেতাকে দলে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াটিও বিএনপি চেয়ারপারসনেরই। এ জন্য তিনি দলের কয়েকজন খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবীকে দায়িত্বও দিয়েছেন। দল ও জোটের সম্প্রসারণ এবং পুনর্গঠন কাজে যোগাযোগের পাশাপাশি পুরনো নেতা যারা কোনো না কোনো কারণে দল ছেড়ে চলে গেছেন কিংবা নিজেরাই নতুন দল গঠন করেছেন, তাদের সবাইকেই দলে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “যারা ইতিমধ্যেই আদর্শিক দ্বন্দ্বে ভুগে দল ছেড়ে চলে গেছেন, অথবা চলে গিয়ে নিজেরা নতুন দল গঠন করেছেন, তাদের সবাইকে আবারও দলে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে। অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও কর্নেল অলি আহমদসহ বিএনপির সেই পুরনো সুহৃদ নেতারা আল্লাহর রহমতে খুব শিগগিরই দলে ফিরে আসবেন। তাদের জন্য দরজা খুলে বসে আছেন ‘ম্যাডাম’ খালেদা জিয়া।” অল্প দিনের মধ্যে একটা ফলও পাওয়া যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন বিএনপি ঘরানার এই প্রবীণ বুদ্ধিজীবী।
বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, শুধু অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী আর কর্নেল অলি আহমদই নন, বিএনপি থেকে অতীতে যারা চলে গেছেন সবাইকেই বিএনপিতে ফেরত নেওয়া উচিত। এ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে থাকলে খুব ভালো। তবে দল গোছাতে হবে সবার আগে। মনে রাখতে হবে, বিএনপির শক্তি র্যাব-পুলিশ কিংবা কোনো সন্ত্রাসী নয়। বিএনপির শক্তি হলো জনগণ। জনগণের কাছেই বিএনপিকে যেতে হবে।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সম্প্রতি একজন আমলার অপমান সইতে না পেরে সাতকানিয়ার বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব খানের আত্মহত্যার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের দল হিসেবে এখন পর্যন্ত আত্মহত্যাকারী ওই মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুবের বাড়িতে না যাওয়াটা বিএনপি নেতাদের উচিত হয়নি। আমি মনে করি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উচিত একটি হেলিকপ্টার ভাড়া করে হলেও ঈদের আগেই সাতকানিয়ায় গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব খানের পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিয়ে আসা।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, বিএনপিতে যারা আছেন অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও অলি আহমদ তাদের অনেকের চেয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তি। দলের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব হলেন বি. চৌধুরী। আর শহীদ জিয়ার কর্মজীবন থেকে শুরু করে রাজনীতিসহ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার সহকর্মী ছিলেন কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। তা ছাড়া ম্যাডামও চাচ্ছেন তারা দলে ফিরে এসে যার যার অবস্থানে আবারও নেতৃত্ব গ্রহণ করুক। কাজেই আর সময় নষ্ট করে লাভ নেই। এখন যত সময় নষ্ট হবে, দেশের তত ক্ষতি হবে। তিনি বলেন, দেশের জনগণের সামনে এখন একটি মাত্র ইস্যু। তা হলো ‘ভোটের অধিকার ফেরত চাই’। মানুষের সে অধিকার ফিরিয়ে আনতে হলে এবং দেশকে উদ্ধার করতে হলে এ একটি ইস্যুতে সবাইকে একটিমাত্র প্লাটফরমে আসতে হবে। তবে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং খুব কম সময়ের মধ্যেই একটি ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে।
বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরী বলেন, ‘আর ২০-দলীয় জোট বা নতুন কোনো প্লাটফরম নয়, এবার আমরা জিয়ার আদর্শে বিশ্বাসী সব দল ও ব্যক্তির মধ্যে একটি আলোচনার সম্পর্ক তৈরি করার চেষ্টা করছি। কী বিএনপি, কী বিকল্পধারা আর কী এলডিপি- দলমত নির্বিশেষে আমরা যারা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে বিশ্বাসী, তারাই মূলত ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছি। আলোচনার পাশাপাশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী সবাইকে এক করার এ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয়ের একটি সূত্র অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর দলে ফেরার প্রক্রিয়ার কথা নিশ্চিত করে জানান, প্রক্রিয়াটি প্রায় শেষ পর্যায়ে। দলের বেশির ভাগ নেতা-কর্মীই এ খবরে উৎফুল্ল। তবে ক্ষুদ্র একটি অংশ আছে যারা কিছুতেই চায় না যে বি. চৌধুরী ফের বিএনপিতে কিংবা জোটে ফিরে আসুক। বিশেষ করে ২০-দলীয় জোটের শরিক একটি ইসলামী দল বি. চৌধুরীর এ আগমন ঠেকাতে মরিয়া এখন। তবে শেষ পর্যন্ত তা ঠেকানো সম্ভব হবে না বলেও মনে করেন চেয়ারপারসন কার্যালয়ের এ সূত্রটি। বিডি প্রতিদিন
মন্তব্য চালু নেই