বিএনপিতে অনাস্থা কাটেনি জামায়াতের

সরকারের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর ‘আঁতাত’ আছে বলে অভিযোগ বিএনপির। কিন্তু এমন অভিযোগ নাকচ করে উল্টো বিএনপির ওপরই অনাস্থার কথা জানিয়েছে জামায়াত। ‘ঈদের পরে আন্দোলন’ বেগম খালেদার জিয়া এমন ঘোষণার পর আন্দোলনের কোনো লক্ষণ না দেখে আরো অনাস্থা বাড়ছে দলটির।

সারা দেশে বিএনপির কমিটি, নেতাকর্মীদের তৎপরতা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে এমন হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে জামায়াত। বিএনপি ও জোটের নেতা বেগম খালেদা জিয়া ঈদের পরে আন্দোলনের ঘোষণা দিলেও দু’টি ঈদ পার হয়ে গেল একেবারে নিরুত্তাপ।

গত ৬ অক্টোবর খালেদা জিয়া আরো বেশি হতাশ করেছেন জামায়াতকে। সেদিন ২০ দলীয় জোট নেতা সরকারবিরোধী আন্দোলনের জন্য সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণার পক্ষে নন বলে জানান। ‘আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, আন্দোলনের সময় আসছে। দিনক্ষণ দিয়ে আন্দোলন হয় না। সময়মতই আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে। এই সরকারকে অবশ্যই বিদায় করতে হবে।’ এ কথা বলেন খালেদা জিয়া।

আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষায় থাকা জামায়াত নেতাদের মনে এখন প্রশ্ন, কবে আসবে সেই দিন?

জামায়াত নেতাদের অভিযোগ, সারাদেশে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে এখনো দুর্বল। সম্প্রচার নীতিমালা ও বিচারপতিদের অভিসংশনের বিল পাসের প্রতিবাদে হরতাল দিয়ে মাঠে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি বিএনপি। অন্যদিকে জোট থেকে কয়েকটি ছোট দল বেরিয়ে নতুন জোটের ঘোষণা দেয়ায় বিএনপি জোটে এখন ভাঙনের সুর বাজছে।

জামায়াতের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা অভিযোগ করে বলেন, বিএনপি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। কিন্তু হতাশার কথা হচ্ছে, সাংগঠনিকভাবে দলটি দুর্বল। দলে নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্য নেই। একটি কমিটি দিলেই সেই কমিটিকে নিয়ে শুরু হয় কোন্দল। সমন্বয় নেই দলের কোনো পর্যায়ে।

বিএনপির কোনো কোনো নেতা সরকারের সঙ্গে আঁতাত করছে বলেও অভিযোগ করেছেন জামায়াতের নেতারা। জামায়াতের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্যি বিএনপিতে বিশৃঙ্খলতা বাড়ছে। নগর কমিটি, ছাত্রদল কমিটি নিয়ে বিক্ষোভ, মারামারি তার প্রমাণ। এমনকি থানা কমিটি হলেও দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি হয়। সর্বশেষ ক্যান্টনমেন্ট থানা কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এর পেছনের কারণ খুঁজলে উত্তর মিলবে। নিজেদের মামলা-হামলা থেকে বাঁচার জন্য সরকারের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ করেছেন অনেক বিএনপি নেতা। অন্যদিকে কেউ কেউ লোভে পড়ে সরকারের বিরুদ্ধে কোনো তৎপরতা দেখাচ্ছেন না। নিশ্চুপ হয়ে আছেন।’

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘মুখেই সরকার আইনের শাসনের কথা বলে। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের অন্যায়ভাবে আটক করছে। ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা ও আহত করছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশে কখনো আইনের শাসন কায়েম হবে না। জোটের মধ্যে আমরা বৃহত্তম শরিক। আমরা জনগণের দাবি নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে জোটে আছি। সরকারের পতনের আন্দোলনে জামায়াত আছে, থাকবে। আন্দোলনের জন্য রূপরেখা প্রয়োজন। এই মুহূর্তে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আন্দোলনের কৌশল ঠিক করতে হবে।’ তার বক্তব্যের মধ্যে আন্দোলনের জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি এবং সময় উল্লেখ করার দাবিও সুস্পষ্ট।

এমনকি জোটের ভবিষ্যৎ নিয়েও নিজের সন্দেহের কথা বলতে দ্বিধা করেননি তিনি। তিনি বলেন, ‘জামায়াত ঐক্যে বিশ্বাস করে। তবে এও ঠিক কোনো জোট চিরস্থায়ী নয়। তার মানে এটাও না এই মুহূর্তে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের জোটে থাকছে না।’

জামায়াতের নেতারা মনে করেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনে জনসমর্থন ছিল। কিন্তু বিএনপির ব্যর্থতায় সুফল আসেনি। জামায়াতের নেতাকর্মীদের মতো বিএনপির নেতাকর্মীরা সক্রিয় হলেই ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকানো যেত। বেগম জিয়া দল গুছিয়ে উঠতে পারছেন না, কী করে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যাবেন? মাঝে কয়েকটি জেলা সফর করলেও এখন তাও বন্ধ।

ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল আতিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা নীতি ও আদর্শ থেকে সরে যাইনি। হামলা-মামলার মধ্যেই আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের কোনো নেতাকর্মী প্রলোভনে বিচ্যুত হবে না। সরকার পতনের এবারের আন্দোলনে বিএনপি একা নই, আমারাও আছি।’



মন্তব্য চালু নেই