বিদেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত : সৈয়দ আশরাফ

বিএনপিকে মোকাবেলায় তিন পরিকল্পনা

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের কর্মসূচি মোকাবেলায় তিন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ পরিকল্পনার মধ্যে অন্যতম হল— বিএনপি ও তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে দেশে-বিদেশে নাশকতাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা।

দ্বিতীয় পরিকল্পনা হল— বিএনপির নাশকতার বিরুদ্ধে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে জনমত গঠন করা। তাদের জনরোষের মুখে ফেলা ও জনগণকে ধৈর্য ধারণ করতে উদ্বুদ্ধ করা। পাশাপাশি জনগণকে বোঝানো যে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে তুলতে সরকারকে আরও কিছু সময় দেওয়া প্রয়োজন।

তৃতীয়ত, বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে মাঠে কর্মসূচি পালনের সুযোগ দেওয়া। আন্তর্জাতিক বন্ধু কয়েকটি রাষ্ট্রও সরকারের কাছে এ আহ্বান জানিয়েছে। দল ও সরকার যৌথভাবে এ পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে কাজ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। বর্তমানে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কাজে লাগাচ্ছে সরকার। এ তিন পরিকল্পনায় সফলতা পাওয়ার আশা করছে সরকার।

আওয়ামী লীগের প্রথম সারির কয়েকজন নেতা এ কথা স্বীকার করেছেন। তারা জানান, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বিএনপি অবরোধ তুলতে বাধ্য হবে। অন্যথায় তাদের অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়বে। এর মধ্য দিয়ে বিএনপিকে ‘এক্সিট রুটও’ তৈরি করে দেওয়া হবে বলে মনে করে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি  বলেন, চলমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে তুলতে সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কিছু সময় প্রয়োজন। সরকারকে সেই সময় দিতে হবে, জনগণকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে।

এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও আপাতত সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার। ক্ষমতাসীনরা মনে করছে, বেগম জিয়া গ্রেফতার হয়ে রেহাই চান। তাই তিনি গ্রেফতার হওয়ার পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। কিন্তু সরকার তাকে গ্রেফতার করে রেহাই দিতে চায় না। কারণ এতে সুফল পাবে বেগম জিয়া। তারা জানান, খালেদা জিয়া অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন, এখন তাকেই এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন  বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য আছে, বিএনপি চেয়ারপারসন গ্রেফতার হতে মরিয়া।’

এক মাসের অধিক সময় ধরে বিএনপির কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। সরকার প্রাথমিকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার মধ্যদিয়ে চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে চায়। তবে কার্যকর কোনো সুফল না পাওয়ায় এ পর্যায়ে অন্য পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা জানান, গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় চলমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে এ সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম  বলেন, বিএনপি বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। এরই অংশ হিসেবে তারা নাশকতার পথ বেছে নিয়েছে। তাদের এ নাশকতার চক্রান্ত থেকে দেশ ও জনগণকে মুক্ত করতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

জানতে চাইলে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, নাশকতা বন্ধ করতে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে। তিনি জানান, সরকার জনগণের সম্পৃক্ততাও আশা করছে।

জনমত তৈরি করতে ইতোমধ্যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এরই অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতারা নাশকতার বর্ণনা দিয়ে সভা-সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ১৪ দলীয় জোটসহ মিত্র রাজনৈতিক শক্তিগুলো। জেলায় জেলায় শান্তি মিছিল কর্মসূচি চলছে। গত শনিবার ব্রাহ্মণবাড়ীয়াসহ কয়েকটি জেলায় শান্তি সমাবেশ হয়েছে। এ সব সমাবেশ থেকে জনগণের কাছে দলীয় লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। যার মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার বর্ণনা ও সরকারের উন্নয়নের কথা রয়েছে।

ঢাকায় রবিবার ১৪ দলের ব্যানারে বিএনপির কর্মসূচির প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে ক্ষমতাসীনরা। জনমত গঠনের লক্ষ্যে সারাদেশে ধারাবাহিকভাবে এ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে সরকারি জোট। এ সব কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক মহলে বিএনপিকে নাশকতাকারী হিসেবে চিহ্নিত করতেও কাজ শুরু করেছে সরকার। বিদেশী বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে চিঠি চালাচালি চলছে। কাজ করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও। সরকারের শীর্ষ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বিদেশী বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দলীয় সূত্রগুলো জানায়। কূটনীতিক মহলে বিএনপির অবরোধ কর্মসূচির নামে যে সব নাশকতার ঘটনা ঘটছে তা তুলে ধরা হচ্ছে প্রতিদিন। সারাদেশে পেট্রোলবোমায় দগ্ধ ও বার্ন ইউনিটের রোগীদের আর্তচিৎকার নিয়ে কূটনীতিক মহলে কথা বলছেন সরকারি মন্ত্রী-এমপিরা। রাজনীতির নামে নাশকতার চেষ্টায় রয়েছে বিএনপি-জামায়াত এ কথা জানিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গেও যোগাযোগ চলছে সরকারের। জানা গেছে, বিদেশে অবস্থানরত দূতাবাসগুলোর কর্মকর্তারাও এ নিয়ে কাজ করছেন।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতা জানান, গত শুক্রবার দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম অন্য নেতাদের এই বলে নিশ্চিত করেন ‘বিদেশী বন্ধুদের সঙ্গে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে সরকারের সম্পর্ক অনেক বেশী মজবুত। সো ডোন্ট অরি’। ওই বৈঠকে আশরাফ আরও বলেন, বিএনপি খুব শিগগিরই জনরোষে পড়বে। দ্য রিপোর্ট



মন্তব্য চালু নেই