বিএনপিকে মোকাবেলায় আরো কঠোর অবস্থান নিতে পারে আ.লীগ!

আগামী নির্বাচনের আগে বিএনপিকে আর কোমর সোজা করে দাঁড়াতে দেবে না আওয়ামী লীগ। এর জন্য রাজনীতির পাশাপাশি প্রশাসনিকভাবেও বিএনপিকে মোকাবেলার কৌশল নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকের সঙ্গে আলাপ করেই এমন কৌশল সম্পর্কে জানা গেছে। সেই কৌশলের অংশ হিসেবেই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। আর এ কারণে শান্ত রাজনীতি আবার অশান্ত হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

টানা তিন মাসের হরতাল-অবরোধ পরিহার করে গত এপ্রিলে বিএনপি সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়। আন্দোলন সংগ্রাম থেকে বিএনপিকে সরিয়ে আনতে সরকার সিটি নির্বাচনকে তুরুপের তাস হিসেবে ব্যব্হার করে। তফসিল ঘোষণা দেয়ার পর বিএনপি তাতে অংশ নেয়ার সবুজ সঙ্কেত দেয়। বিএনপিপন্থি পেশাজীবীদের সমন্বয়ে গঠিত শত নাগরিক কমিটির ব্যানারে শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচনে অংশ নেয়। অবশ্য অনেকে বলে থাকেন, আন্দোলন থেকে বের হয়ে আসতে বিএনপিও পথ খুঁজছিল। সরকার তাদের সেই পথ করে দেয়।

তবে বিএনপি পথ খুঁজুক আর সরকারই পথ করে দিক না কেন, বিএনপি আন্দোলন ছেড়ে নির্বাচনে আসায় এবং সরকার দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ওই সময় খানিকটা নমনীয় অবস্থান নেয়ায় রাজনীতিতে ‘শীতল হাওয়া’ বইতে শুরু করে। টানা কর্মসূচিতে ত্যক্ত বিরক্ত মানুষও হাফ ছেড়ে বাঁচে।

নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণে বিএনপির পক্ষ থেকে প্রার্থী করা হয় মহানগর আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসকে। আর উত্তরে সমর্থন দেয়া হয় ব্যবসায়ী আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়ালকে। অবশ্য উত্তরে বিএনপি থেকে প্রথমে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল আব্দুল আউয়াল মিন্টুকে। কিন্তু উত্তরের ভোটার নয় এমন একজনকে প্রস্তাবক করায় আব্দুল আউয়াল মিন্টুর মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়। হাইকোর্টে রিট করেও শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন ফেরত পাননি তিনি। অবশ্য দুর্জনেরা বলে থাকেন যাতে নির্বাচনে লড়তে না হয় সে জন্য দেশের সফল ও চতুর এই ব্যবসায়ী ‘ইচ্ছাকৃতভাবেই ভুল’ করেছিলেন।

নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রচারণা শুরু করেন তাবিথ আউয়াল। দক্ষিণের প্রার্থী মির্জা আব্বাস পলাতক আসামি হওয়ায় জামিন চান হাইকোর্টে। কিন্তু ভোটের আগ পর্যন্ত আর জামিন পাননি তিনি। হাইকোর্ট বিভক্ত আদেশ দেয়ায় তার জামিন ঝুলে যায়। আব্বাস মাঠে নামতে না পারায় তার পক্ষে প্রচারণা চালান স্ত্রী আফরোজা আব্বাস। প্রচারণায় তিনি অনেক ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাঈদ খোকনের চেয়ে সপ্রতিভ ছিলেন।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত ‘সরকারের মরিয়া কৌশলের’ কাছে হার মানতে হয় বিএনপিকে। ভোটের দিন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি পুলিশও বিএনপি প্রার্থীদের এজেন্টদের ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়নি। কোনো কোনো কেন্দ্রে ঢুকলেও ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তাদের বের করে দেয় সরকার দলের নেতাকর্মীরা। শেষ পর্যন্ত কারচুপি ও জালভোটের অভিযোগ এনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায় দলটি। বিএনপিকে কোনোভাবেই জিততে দেয়া যাবে না- এমন মানসিকতা থেকে সরকার তাদের প্রার্থীদের জেতাতে ‘অল আউট’ পদক্ষেপ নেয়। সরকারের এই ‘অল আউট’ পদক্ষেপের ব্যাপক সমালোচনা হলেও তারা মনে করে রাজনৈতিকভাবে তাদের জিত (!) হয়েছে। বিএনপিকে অন্তত জিততে দেয়া হয়নি। আওয়ামী লীগ নীতি নির্ধারকদের ধারণা, এভাবে হারতে হারতে দলটির নেতাকর্মীরা একসময় মানসিকভাবে ভেঙে পড়বে।

নির্বাচনে বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে ঘায়েলের পর এবার প্রশাসনিকভাবেও দলটিকে মোকাবেলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য টার্গেট করা হয়েছে দলের প্রধান খালেদা জিয়াকে। কিছু কিছু ঘটনা সরকারের এই মনোভাবকে প্রতিষ্ঠিত করে। যেমন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের দুর্নীতি মামলায় জেরা শুরু হয়েছে। খালেদাকে জড়িয়ে যাত্রাবাড়িতে বোমা হামলা ও মানুষ হত্যা মামলার চার্জশিট দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, তিনমাসের হরতাল অবরোধে সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে শত শত মামলা হয়েছে। সহিংসতার এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে ‘সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল’ গঠন করে। এজন্য সাত বিভাগে সাতটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করছে সরকার। এতে ব্যয় হবে তিন কোটি টাকা। সরকারের তরফ থেকে টাকাও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব মামলা নিয়ে আলোচনা করতে গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অফিস করেন।

সূত্র জানায়, সহিংসতার এসব মামলায় অভিযুক্ত বিএনপি নেতারা দোষী সাব্যস্ত হলে তারা আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে বিএনপির শীর্ষ অনেক নেতাকেই নির্বাচন থেকে বিরত থাকতে হবে।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও সাবেক পরিবেশ মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ বলেন, ‘সরকার বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করছে কেবল। বেগম খালেদা জিয়া পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ পুড়িয়ে মারার যে রাজনীতি শুরু করেছেন তা দলটির নেতাকর্মীরাও সমর্থন করেন না। হিমালয়সম রাজনৈতিক ভুল করে তিনি আজ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। তার রাজনীতি আজ চোরাবালিতে হারিয়ে গেছে।’

যাত্রাবাড়িতে বোমাবাজি ও মানুষ হত্যার মামলায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। খালেদা জিয়া বোমা মেরে ও পুড়িয়ে ১৭০ জনকে হত্যা করেছেন। তার বিরুদ্ধে চার্জশিট আরো আগেই দেয়া উচিত ছিল।’



মন্তব্য চালু নেই