বায়োটিন যে কারণে আমাদের শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয়
ভিটামিন এইচ কে বায়োটিন বলে। এছাড়াও বায়োটিনকে বি-ভিটামিন বা ভিটামিন বি ৭ ও বলা হয়। এটি আমাদের শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। বায়োটিন ত্বক, চুল এবং নখের সুস্বাস্থ্যকে নিশ্চিত করে। চর্বি, শর্করা ও আমিষের বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। এটি ব্যক্তির মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য এবং মানসিকভাবে ভালো থাকার জন্য অত্যাবশ্যকীয়। তাই বলা যায় যে, বায়োটিনের ঘাটতির ফলে আমাদের ত্বক, চুল ও নখের ক্ষতি হয়, মস্তিষ্কের কাজের উপর প্রভাব পড়ে এবং মানসিক সমস্যারও সৃষ্টি করতে পারে।
বায়োটিনের ঘাটতির সাধারণ কিছু লক্ষণ হচ্ছে, ত্বকে র্যাশ হওয়া, শুষ্ক হয়ে যাওয়া এবং চুলকানো, নখ ভেঙ্গে যাওয়া, ত্বক ধূসর হয়ে যাওয়া, পেশীতে ব্যথা, বিষণ্ণতা এবং ক্লান্ত অনুভব করা। বায়োটিনের ঘাটতির ফলে ডারমাটাইটিস হতে পারে এবং চুল পড়ে যেতে পারে।
বায়োটিনের ঘাটতি হওয়া কী সাধারণ বিষয়? এর উত্তর হচ্ছে না। তবে এটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কাঁচা ডিমের সাদা অংশ অনেক বেশি পরিমাণে খাওয়া হলে বায়োটিনের ঘাটতি হতে পারে। কাঁচা ডিমের সাদা অংশে অ্যাভিডিন নামক গ্লাইকোপ্রোটিন থাকে যা বায়োটিনের সাথে যুক্ত হয় এবং শরীরকে বায়োটিন শোষণে বাঁধা দেয়। রান্না করলে অ্যাভিডিন নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।
বায়োটিনের ঘাটতিজনিত সমস্যা বডিবিল্ডারদের ক্ষেত্রে প্রায়ই হতে দেখা যায় কারণ তারা প্রতিদিন প্রচুর কাঁচা ডিম খায়।
বায়োটিন পানিতে দ্রবণীয় হওয়ায় শরীরে সংরক্ষিত থাকে না বলে একে নিয়মিত গ্রহণ করার প্রয়োজন হয়।
বায়োটিনের ঘাটতিজনিত প্রভাব এড়ানোর জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে নিয়মিত ১০০০ মাইক্রোগ্রাম এর বেশি বায়োটিন গ্রহণ করা। এমনকি বায়োটিনের প্রয়োজনীয় পরিমাণের বেশি গ্রহণ করা হলেও কোন ক্ষতি হয় না। বায়োটিন পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন এবং খুব সহজেই শরীর থেকে বের হয়ে যায় বলে কোন ক্ষতি করে না। বায়োটিনের উচ্চমাত্রা কোন মারাত্মক বিষাক্ততার কারণ নয়।
বায়োটিনের কিছু উপকারিতা হচ্ছে
১। এনার্জির উৎপাদনে বায়োটিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট ও প্রোটিন এর বিপাকে সাহায্যকারী এনজাইমকে সহযোগিতা করে।
২। বায়োটিন সাপ্লিমেন্ট নখকে শক্তিশালী হতে সাহায্য করে বলে নখ ভাঙ্গার প্রবণতা কমে।
৩। বায়োটিন চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ও চুলকে স্বাস্থ্যবান করে, তবে এর প্রমাণ খুবই দুর্বল। যদিও বায়োটিনের ঘাটতির সাথে চুল পড়ার সম্পর্ক বিদ্যমান।
৪। গর্ভবতী নারী ও যে মায়েরা দুধ পান করান তাদের বায়োটিন গ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। গর্ভাবস্থায় ৫০ শতাংশ নারীই এই ভিটামিনের ঘাটতিতে ভুগে থাকেন।
৫। ক্রোমিয়ামের সাথে মিলিত হয়ে বায়োটিন রক্তের চিনির মাত্রা কমতে সাহায্য করে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে।
৬। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের রোগ মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস নিরাময়ে সাহায্য করে উচ্চমাত্রার বায়োটিন।
যেসব খাবারে পাওয়া যায় বায়োটিন
বিভিন্ন ধরনের খাবারে পাওয়া যায় বায়োটিন যেমন- যকৃৎ, কিডনি, ইষ্ট, ডিমের কুসুম, পনির, লিগিউম জাতীয় খাবার – সয়াবিন, চিনাবাদাম ইত্যাদি, সবুজ শাকসবজি, ফুলকপি, মাশরুম, বাদাম এবং বাদামের মাখন ইত্যাদি। অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াও কিছু বায়োটিন উৎপন্ন করে। এছাড়াও বাজারে বিভিন্ন ধরনের বায়োটিনের সাপ্লিমেন্ট আছে। কিছু সাপ্লিমেন্টে বায়োটিনের পাশাপাশি অন্য পুষ্টি উপাদান ও থাকে।
সূত্র: অথোরিটি নিউট্রিশন ও বোল্ড স্কাই
মন্তব্য চালু নেই