বাবা-মা তিন শতাধিকবার পা ভেঙেছেন শিশুটির
ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে অনেক শক্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন মা-বাবা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের কালামাজোর জ্যাকি ও ম্যাট মোরাভেক দম্পতি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা সত্যিই ভয়ংকর।
ভবিষ্যৎ চিন্তা করে এবং অপারেশন থেকে বাঁচাতে চার মাসে তিন শতাধিক বার চার বছর বয়সি মেয়ের পা ভেঙেছেন তারা।
তাদের মেয়ে এলসি মোরাভেক জন্ম থেকেই প্রক্সিমাল ফেমোরাল ফোকাল ডেফিসিয়েন্সি নামে বিরল রোগে আক্রান্ত। যার ফলে তার বাঁ পা কিছুটা বাঁকানো এবং ডান পায়ের তুলনায় কিছুটা ছোট। এ থেকে উদ্ধার পেতে মোরাভেক দম্পতির দুটি রাস্তা ছিল। এক পায়ে অস্ত্রোপচার অথবা কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপন। কিন্তু দুটির কোনোটিকেই বেছে নেননি তারা। বরং হেঁটেছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে। মেয়ের পা চার ইঞ্চি বড় করতে প্রতিদিন তিনবার তার পা ভেঙেছেন তারা।
বিষয়টি নিয়ে এলসির বাবা বলেন, ‘কিছু স্থানীয় চিকিৎসক অস্ত্রোপচারের কথা বলেছিলেন। কিন্তু আমরা এ পদ্ধতিটি বেছে নিই। আমরা ভেবেছি, এটিতে আমরা আমাদের মেয়ের প্রতি নির্দয় আচরণ করছি, কিন্তু এটি তার ভালোর জন্যই। আমরা মনে করি এটি আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত। আমরা চাই এলসি তার জীবনে যতটা সম্ভব ভালো থাকুক।’
এ বিষয়ের সূত্রপাত হয় যখন জ্যাকি ও ম্যাট ডা. শনের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি পা বড় করার বিষয়ে অভিজ্ঞ একজন চিকিৎসক। এলসির প্রথম সার্জারি করা হয় ছয় মাস বয়সে। তার হাঁটু, পায়ের গোড়ালি এবং কোমর ঠিক করার জন্য ছয় ঘণ্টা ধরে চলে সেই সার্জারি। পরবর্তী সময়ে তার পায়ে একটি কৃত্রিম অঙ্গ স্থাপন করা হয়। যা মেঝে ও তার পায়ের দূরত্ব পূরণ করে। এরপর প্রথমবারের মতো সে হাঁটতে পারে।
কিন্তু সেটি ছিল সবে শুরু। তিন বছর বয়সে তার পায়ে আবার সার্জারি করা হয়। এতে তার পায়ে একটি ডিভাইস স্থাপন করা হয়, যেখানে ১০টি পিন তার চামড়া, মাংসপেশি ও হাড়ের মধ্যে দিয়ে বিদ্ধ করা হয়। এ পদ্ধতির অংশ হিসেবে বাবা জ্যাকিকে প্রতিদিন ফিমার ও টিবিয়া হাড় দুটিকে স্ক্রুর মাধ্যমে .০০৩৯ ইঞ্চি টেনে রাখতে হতো।
এ পদ্ধতির মধ্য দিয়ে এলসির হাড়, মাংসপেশি ও চামড়া ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং চার মাসে তার পায়ের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পায়। অবশ্য এলসিকে অনেক ব্যথা সহ্য করতে হয়েছে।
সে সময়ের স্মৃতিচারণা করে জ্যাকি বলেন, ‘আমি এলসির অবস্থার উন্নতি দেখে খুবই আনন্দিত হচ্ছিলাম। কিন্তু তার কষ্ট দেখে কান্না চলে আসত। ১০টি পিন যেখানে বিদ্ধ থাকত সেই জায়গাগুলো পরিষ্কার করা ছিল সবচেয়ে কঠিন কাজ। এতে তার অনেক ব্যথা হতো। আমরা তা দেখে অনেক কষ্ট পেতাম। কিন্তু আমাদের মনে একটি লক্ষ্য ছিল।’
এলসির পা এখন তার অপর পায়ের সমান। কিন্তু দুঃখের বিষয় এলসি বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার পা বৃদ্ধি পাবে না। ফলে একটি নির্দিষ্ট সময় পর তাকে আবারও এ পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে পায়ের দৈর্ঘ্য বাড়াতে হবে। এটি খুব কঠিন কিন্তু জ্যাকি মনে করেন এটি তার মেয়ের ভবিষ্যৎ ভালো করার জন্যই।
মন্তব্য চালু নেই