বাবা-মাকে খুন করে মাটিতে পুঁতে রাখে ‘সাইকো’ উদয়ন

শুধু প্রেমিকা আকাঙ্ক্ষাকেই নয়, নিজের বাবা-মাকেও খুন করেছে ভোপালের ‘সাইকো’ কিলার উদয়ন। তাঁদের খুন করে বাড়ির বাগানে পুঁতে দিয়েছিল উদয়ন। প্রায় সাত বছর আগে এই কাণ্ড ঘটায় সে। দীর্ঘদিন ধরে উদয়নের বাবা-মা বেপাত্তা ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। আকাঙ্ক্ষা খুনের তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশি জেরায় বাবা-মাকে খুনের কথা স্বীকার করে সে। আকাঙ্ক্ষা হত্যাকাণ্ডে নয়া তথ্যে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে হুবহু মিলে যাচ্ছে ১৯৬০ সালের অ্যালফ্রেড হিচকক পরিচালিত হলিউড সাসপেন্স থ্রিলার ‘সাইকো’-র কাহিনি। নৃশংস হত্যালীলা চালানোর পরও নির্বিকারভাবে ওই বাড়িতেই বসবাস করত সে।

শুধু তাই নয়, প্রেমিকা খুনে ধৃত উদয়নের ভোপালের ফ্ল্যাটে নিত্যদিন বসত মদ্যপানের আসর৷ আকাঙ্ক্ষাকে খুন করে দেহ লোপাটের জন্য যে মার্বেলের বেদি তৈরি করেছিল উদয়ন, সেই বেদির উপর কলগার্লদের নিয়ে ফুর্তিতে মাতত সে৷ একাধিক নারীসঙ্গ ছিল উদয়নের নিত্যদিনের ‘অক্সিজেন’৷ একাধিক মেয়ের সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা আকাঙ্ক্ষা জেনে যাওয়ার পরই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে উদয়ন৷ প্রাথমিকভাবে ভোপাল পুলিশ এবং বাঁকুড়া পুলিশের তদন্তকারী দলের এটাই অনুমান৷

উদয়নকে ট্রানজিট রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে৷ আকাঙ্ক্ষার দেহে পচন ধরায় শনিবারই ভোপালে তাঁর শেষকৃত্য হবে বলে বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা জানিয়েছেন৷ ভোপালেই উদয়ের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হওয়া আকাঙ্ক্ষার পাসপোর্ট ও অন্যান্য পোশাক দেখে তাঁর ভাই আয়ুশ ওই  ‘কংক্রিট’ দেহটি আকাঙ্ক্ষার বলে শনাক্ত করেন৷ ডিএনএ পরীক্ষার জন্য দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে৷ ইতিমধ্যেই হয়েছে ময়নাতদন্ত৷ পুলিশের প্রাথমিক অনুমান ১৫ জুলাই সকালে খুন হন আকাঙ্ক্ষা।

পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, উদয়ন জেরায় স্বীকার করেছে সে নারীসঙ্গ ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারত না। নিত্যদিন রাতে কলগার্লদের প্রয়োজন পড়ত৷ সঙ্গে ছিল দামি বিলিতি মদ৷ এক নয়, একাধিক মেয়ে উদয়নের ‘শারীরিক খিদে’ মেটাতে নিত্যদিনই তার ভোপালের ফ্ল্যাটে আনাগোনা করত৷ পাড়াপ্রতিবেশীদের উদয়নের ফ্ল্যাটে প্রবেশাধিকার ছিল না। কিন্তু প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, সুন্দরী অল্পবয়সি মেয়েদের রোজই উদয়নের ফ্ল্যাট থেকে বের হতে দেখা যেত৷ মাঝরাতেও দামি গাড়ি করে অনেক সুন্দরী মেয়ের ফ্ল্যাটে আসা বা যাওয়া লেগে থাকত বলেই পুলিশ প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে।

এদিকে উদয়নকে বাঁকুড়ায় আনার জন্য শনিবার রাতে তাকে নিয়ে ট্রেনে উঠবে পুলিশ৷ রবিবার সকালে তারা বাঁকুড়া পৌঁছবে, দুপুরে বাঁকুড়া কোর্টে তোলা হবে বলে জানানো হয়েছে৷ পুলিশ জানিয়েছে, উদয়ন উদয় নামেও একাধিক জায়গায় নিজের পরিচয় দিত৷ ফেসবুক বা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউণ্ট বা কলেজের আইডি কার্ডেও বিভিন্ন নাম ব্যবহার করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে৷ উদয় ওরফে উদয়নকে গ্রেফতার করা গেলেও আকাঙ্ক্ষা খুনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই বেপাত্তা উদয়ের বাবা-মা৷ প্রথমে তদন্তকারীদের অনুমান ছিল, উদয়ের কোনও রোজগার ছিল না৷ বাবা-মায়ের জমানো টাকাতেই তার ফুর্তির আসর বসত নিত্যদিন৷

কিন্তু পরে নাকি জেরায় উদয়ন কবুল করেছে, বাবা-মাকে খুন করেও পুঁতে দিয়েছে সে৷ বিলাসবহুল গাড়ি, বাড়ি, ফেক ফেসবুক প্রোফাইল তৈরি করে সুন্দরী মহিলাদের আকৃষ্ট করত সে৷ তাদের চাকরি দেওয়ার টোপ দিয়ে বন্ধুত্ব পাতাত৷ এমনভাবেই বিদেশে চাকরির টোপ দিয়ে আকাঙ্ক্ষাকে প্রেমের জালে ফাঁসায় ভোপালের বাসিন্দা৷ ভোপালের ফ্ল্যাটে বেশ কয়েক মাস একসঙ্গে ছিল দু’জনে৷

পরিকল্পনা করেই প্রায় ১৪ বস্তা সিমেণ্ট, বালি এবং একটি দশ ফুটের লোহার ট্রাঙ্ক কেনে উদয়ন৷ পরিকল্পনা মতো খুন করে সিমেন্টের কংক্রিট বানিয়ে ফ্ল্যাটের রান্নাঘরেই রেখে দেওয়া হয় আকাঙ্ক্ষার দেহকে৷ তদন্তকারী অফিসার সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও কৌশিক হাজরা জানিয়েছেন, জেরায় উদয়ন দাবি করেছে, তার বাবা-মা বর্তমানে বিদেশে রয়েছে৷ সেই বিষয়টি নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে তদন্তকারীদের মনে৷ অন্যদিকে আকাঙ্ক্ষার ডিএনএ টেস্ট নিয়েও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে৷ যেভাবে সিমেণ্ট, বালি দিয়ে কংক্রিটে পরিণত করা হয়েছে তাতে সমস্যা বাড়তে পারে বলেই অনুমান।-সংবাদ প্রতিদিন



মন্তব্য চালু নেই