বান্দরবানের লামা ভূমি ও রেজিষ্ট্রেশন অফিসে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম চলছে

বিগত ০৮ বছর ভূমি সহকারী কমিশনার না থাকায় লামা উপজেলা ভূমি ও রেজিষ্ট্রেশন অফিসে চলছে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি। নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের। নিজস্ব ভিটা বাড়ী ও পৈত্রিক সম্পত্তি হারিয়ে অনেকে আজ ভূমিহীন এবং অসহায় মানবতার জীবন যাপন করছে।

বিগত ১০/১২ বছর ধরে কতিপয় বহিরাগত ভূমিদস্যু, কোম্পানী বনায়ন, রাবার চাষ ও ফলজ বাগানের নামে দালালের মাধ্যমে বিভিন্ন জালিয়াতি চক্রের এবং উপজেলা ভূমি রেজিষ্ট্রেশন অফিসের সহায়তায় মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে জমির বায়নানামা দলিল সৃজন করা হয়।

লামা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মঞ্জুর আলমের অসত্য প্রতিবেদন সংগ্রহ করে মিস ও মিউটেশন মামলা সৃজন করে ভূয়া ও জাল দলিল দিয়ে বহিরাগতদের নামে নামজারীর ঘটনা অহরহ ঘটছে। এমনকি মৃত ব্যাক্তির জমিও ভূয়া লোকজন দিয়ে রেজেষ্ট্রি হচ্ছে।

বান্দরবান জেলার বৃহৎ ও সবচেয়ে বেশী জনসংখ্যা অধ্যুষিত উপজেলার নাম লামা। ১৯৭৯ সালের ১০ অক্টোবর মহকুমা উন্নীত করা হলেও ১৯৮৪ সালে পুনরায় উপজেলা রুপান্তরিত হয়ে যায়। লামাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবী লামাকে জেলায় উন্নীত করা।

এ উপজেলায় বর্তমানে প্রায় ১লক্ষ ২০ হাজার লোকের বসবাস। পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে বেশী বিভিন্ন জেলার লোকজন লামা উপজেলায় পুনর্বাসিত করা হয়। লামা উপজেলা বাঙ্গালীদের প্রভাব বেশী হওয়ায় বিছিন্নবাদী পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের তৎপরতা নেই বললে চলে।

ভূক্তভোগী পূর্ণ চন্দ্র ত্রিপুরা পিতা-রেখাইগ্যা ত্রিপুরা সাং- টংগ্যা ঝিরি, ৩০৩ ডলু ছড়ি মৌজা সরই ইউনিয়ন লামা বান্দরবান জানান, লামা উপজেলার ভূমি ও রেজিষ্ট্রেশন অফিসের সহায়তায় নকল টিপসহি, ছবি, ভোটার আইডি কার্ড ও জন্ম নিবন্ধন ইত্যাদি জালিয়াতি ও দুর্নীতি করে ছাফ কবলা ও মিউটেশন সম্পাদন পূর্বক ভূমি দস্যু জামাল উদ্দিনের নামে নামজারি করে নিয়েছে তার নামীয় ৩০৩ নং ডলু ছড়ি মৌজার হোল্ডিং জি-৩৩৮ এর দুই একর জমির মধ্যে ১.৫০ একর জায়গা।

লামা ভূমি রেজিষ্ট্রেরী অফিসের বায়না নামা দলিল নং-৯২২/১৩, নামজারি মামলা নং-২২/২০১৪(লামা), মিউটেশন মামলা নং- ৯৯/২০১৪ইং। উক্ত দুর্নীতি বিষয়ে সু-বিচার প্রার্থী হয়ে জায়গার প্রকৃত মালিক পূর্ণ চন্দ্র ত্রিপুরা বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন বান্দরবান জেলা সভাপতি নিকট ১১ এপ্রিল ১৫ইং জাল দলিলের সাথে সম্পৃক্ত ৬জনকে আসামী করে অভিযোগ দাখিল করে।

আরেক ক্ষতিগ্রস্ত লামা পৌরসভার মোঃ কামালুদ্দিন বলেন, ২৯৩ নং ছাগল খাইয়া মৌজার আর/৬৫৯নং হোল্ডিং এর আন্দর ৫ একর তৃতীয় শ্রেণী জায়গা মৃত বজল আহাম্মদ পিতা-মৃত লাল মিয়া নামে তৌজিভূক্ত আছে। যা আমি ২০ বছর আগে লোকাল কাগজ করে ক্রয় করি এবং দখলে আছি।

১৮ বছর আগে বজল আহাম্মদ মারা যাওয়ার কারণে নামজারি কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু গত ০১ ডিসেম্বর ২০১৪ইং মৃত বজল আহাম্মদ নামে আরেক ব্যাক্তিকে দাড়ঁ করিয়ে লামা ভূমি অফিসের সহায়তায় ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে মৃত ব্যাক্তির নামে জাল টিপসহি, ছবি, ভোটার আইডি কার্ড ও জন্ম নিবন্ধন ইত্যাদি দিয়ে জমি ছাফ বিক্রয় বায়না নামা দলিল সম্পন্ন করা হয়। লামা ভূমি রেজিষ্ট্রেরী অফিসের বিক্রয় বায়না নামা দলিল নং ১৭৯৪/২০১৪ইং।

এব্যাপারে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন বান্দরবান জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন এ প্রতিবেদক কে দুঃখ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, লামা ভূমি অফিস ও ভূমি রেজিষ্ট্রেশন অফিসে দুর্নীতি ও জালিয়াতির উৎসব চলছে। শত শত লোক জমিহারা হয়ে ভূমিহীন হয়ে যাচ্ছে।

বহিরাগত কতিপয় কোম্পানী ও ধর্নাঢ্য ব্যাক্তিরা বিভিন্ন কৌশলে ও দালালের মাধ্যমে স্থায়ী বাসিন্দা সনদপত্র তৈরি করে উপজেলা হেডম্যান অফিস, ভূমি রেজিষ্ট্রেশন অফিস, ইউএনও অফিস ও জেলা প্রশাসকের অফিসে মোটা অংকের ঘুষ ও ক্ষেত্র বিশেষে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মিস মামলার মাধ্যমে পুর্নবাসিত বাঙ্গালী ও উপজাতিদের নিঃস্ব ও ভূমিহীন করছে। ভূমি অফিসের দুর্নীতি ও জালিয়াতির কারণে জর্জ কোর্টে ভূমি সংক্রান্ত মামলা দিনদিন বাড়ছে। অচিরে এ বিষয়ে পার্বত্য বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

লামা ভূমি অফিসে সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদটি দীর্ঘ ৮বছর ধরে শূন্য। প্রশাসন এ সমস্ত জাল জালিয়াত কারী ভূমি দস্যুদের সহায়তার জন্য পদটি শূন্য রেখেছে। অবিলম্বে পদটি পূরন করা প্রয়োজন।

লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও রেজিষ্ট্রেশন কর্মকর্তা সামসুন নাহার সুমির কাছে মুঠোফোনে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি এবং তদন্ত করে দেখছি। অতি শীগ্রই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



মন্তব্য চালু নেই