বান্দরবানের লামায় প্রাথমিক শিক্ষার স্লিপ ও প্রাক্-প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম

বান্দরবানের লামা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের অব্যাহত অব্যবস্থাপনা, লাগামহীন দূর্নীতি ও বেপরোয়া অনিয়মের কারণে পুরো উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়। শিক্ষা অফিসের এসকল অনিয়মের সাথে জড়িত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারসহ কয়েকজন শিক্ষক নেতার সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেট। কয়েকজন শিক্ষক নেতা নিজেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এম.পি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যাশৈহ্লা এর একান্ত কাছের লোক দাবী করে শিক্ষা অফিসের সামগ্রিক কার্যক্রমরনিয়ন্ত্রনে গঠন করেছে কথিত সিন্ডিকেট। লামা উপজেলার ৮২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকাগণ এই সিন্ডিকেটের অনিয়ম ও দূর্নীতির কাছে জিম্মি হয়ে আছে দীর্ঘ দিন। প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে অত্র লামা উপজেলায় বরাদ্দকৃত অর্থ লুটপাটে চলতি অর্থবছরেও মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে এই সিন্ডিকেট। যার কারণে সরকারি বরাদ্দের উদ্দেশ্য চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে জনমনে সরকারের ভাবমুতি প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে বিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য (স্লিপ) উপজেলার ৭৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি অনুমোদিতক্রমে প্রতিটি বিদ্যালয়ের উন্নয়ন পরিকল্পনা শিক্ষা অফিসে জমা দেয়া হয়েছে। একাধিক প্রধান শিক্ষক অভিযোগ করে জানিয়েছেন, কয়েকজন শিক্ষক নেতা অফিস খরচের নাম প্রতিটি বিদ্যালয় থেকে ৩ হাজার ৬শত পঞ্চাশ টাকা করে আদায় করছে। আবার স্লিপ মনিটরিং এর দায়িত্ব প্রাপ্ত সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নাম দিয়ে আদায় করা হচ্ছে ১ হাজার টাকা হারে। অফিস খরচের নামে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানো শিক্ষকদের বদলিসহ বিভিন্ন ধরনের হয়রানির হুমকি প্রদান করা হচ্ছে। অফিস খরচের নামে টাকা প্রদান করায় দাখিলকৃত উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। এভাবে ৭৭টি বিদ্যালয় হতে অফিস খরচের নামে আদায় করা হয়েছে ৩ লক্ষ ৫৮ হাজার পঞ্চাশ টাকা। অফিসের খরচের টাকা শিক্ষক নেতাদের হাতে প্রদান করার পর শিক্ষা অফিস হতে সংশ্লিষ্ট হিসাবে বরাদ্দের টাকা প্রদান করা হয়।

অপরদিকে গত ২২ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল পযর্ন্ত প্রথম সাময়িক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরীক্ষার ফি বাবদ প্রতিজন ছাত্র/ছাত্রীর নিকট থেকে ৩ টাকা হারে প্রশ্ন পত্র ফি নেয়ার সরকারি আদেশ রয়েছে। কিন্তু লামা উপজেলার প্রতিজন ছাত্র/ছাত্রীর নিকট থেকে প্রশ্ন পত্র ফি বাবদ ৫ টাকা হারে আদায় করা হয়েছে। উপজেলা পরীক্ষা কমিটির সদস্য সচিব আশিষ কুমার মহাজন জানান, অতিরিক্ত টাকা আদায় করার বিষয়টি শিক্ষক নেতারা জানেন। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের ফার্ণিচার ক্রয়ের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীদের নিকট থেকে প্রশ্নপত্রের মূল্য বাড়িয়ে নেয়া হয়েছে। প্রশ্নপত্রের অতিরিক্ত মূল্য বাবদ ১৮ হাজার ২শত ২৬ জন ছাত্র/ছাত্রীর নিকট থেকে অতিরিক্ত ৩৭ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে। আদায়কৃত টাকা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও কয়েকজন শিক্ষক নেতার মধ্যে ভাগ ভাটোয়ারা করা হয়েছে। উশৈসিং মার্মা নামক ছাত্রের অভিভাবক জানিয়েছেন সরকার যেখানে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে উপবৃত্তিসহ অসংখ্যা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন সেখানে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের আসবাবপত্র ক্রয়ের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীর নিকট থেকে প্রশ্ন পত্রের মূল্য বাড়িয়ে টাকা আদায় করার বিষয়টি বোধগাম্য হচ্ছে না।

অভিযোগে আরো জানা গেছে, লামা উপজেলার ৭৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক শাখার উন্নয়নে এ বছর ৫ হাজার টাকা হারে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রাক্-প্রাথমিক শাখার উন্নয়নের বরাদ্দকৃত এই ৩ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা শিক্ষক নেতাদের হাতে হস্তান্তর করার জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসার নির্দেশ দিয়েছেন। শিক্ষা অফিসার যতীন্দ্র মোহান মন্ডল প্রাক্-প্রাথমিক খাতের টাকা শিক্ষক নেতাদের মাধ্যমে ব্যয় করবেন মর্মে সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষকদের জানিয়ে দিয়েছেন।

সামনের জুন ক্লোজিংকে কেন্দ্র করে লামা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে চলছে চরম হরি লুট। প্রধান শিক্ষকদের দাখিলকৃত ভূয়া বিল ভাউচার এর মাধ্যমে লোপাট করা হচ্ছে সরকারি বরাদ্দের টাকা।

অপরদিকে, লামায় পার্বত্য মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেয়া হবে এ দোহাই দিয়ে প্রতিজন প্রধান শিক্ষক থেকে ৫শ টাকা হারে এবং সহকারি শিক্ষকদের থেকে ২শ টাকা হারে আদায় করা হচ্ছে। আবার স্লিপের বরাদ্দ বাবদ প্রতিটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নিকট থেকে প্রতিমন্ত্রীর সংবর্ধনা সভার নাম দিয়ে বাধ্যতামূলকভাবে আদায় করা হচ্ছে ৭শত টাকা হারে।

লামা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বর্তমানে বাণিজ্যিক অফিসে পরিণত হয়েছে। সরকারি সকল বরাদ্দ দিয়ে শিক্ষক নেতারা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে বেপরোয়া হয়ে পড়েছে। বর্তমানে লামা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারে দূর্নীতি সর্বসাধারণের মুখে মুখে। যার কারণ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ হচ্ছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার যতীন্ত্র মোহন মন্ডল লামা উপজেলায় যোগদান করার পর থেকে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সার্বিক অনিয়ম এবং দূনীর্তি লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস পরিণিত হয়েছে দূর্নীতির আখড়ায়। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার যতীন্দ্র মোহান মন্ডল জানান, শিক্ষক নেতারা কি করেন সেটা আমার দেখার বিষয় নয়।



মন্তব্য চালু নেই